সিজারের ৫ মাস পর পেট থেকে বের হল আস্ত গজ

ময়মনসিংহের ভালুকা পৌর সদরে অবস্থিত একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয় ৫ মাস ১৩ দিন আগে। ওই সময় ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান মোল্লার স্ত্রী তিন সন্তানের জননী ফজিলা আক্তার (২৮) একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।

 

সিজারিয়ান অপারেশনের সময় তার পেটে রক্ত মোছার গজ কাপড় জাতীয় দ্রব্য (যাকে ডাক্তারি ভাষায় মুপ বলে) রেখে দেয়া হয়। ৫ মাস ১৩ দিন পর শুক্রবার রাতে ময়মনসিংহের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে পুনরায় অপারেশন করে পেটে আস্ত একটা মুপ বের করা হয়। ফজিলা এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।

জানা যায়, ফজিলা আক্তারকে তৃতীয় সন্তান প্রসবের জন্য গত ১৩ এপ্রিল দুপুরে ভালুকা ডিজিটাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তার পরিবারের লোকজনকে জরুরিভিত্তিতে সিজারিয়ান অপারেশনের পরামর্শ দেন। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের সাবেক কনসালটেন্ট ডা. মফিজুল রহমানকে দিয়ে ফজিলার সিজার করা হয়। এ সময় অজ্ঞানের ডাক্তার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ডা. মেহদী হাসান।

সিজারিয়ান করার পর ফজিলা একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। এ সময় ফজিলার পেটের ভেতরে রক্ত মুছার গজ কাপড় জাতীয় দ্রব্য পেটের ভেতরে রেখে ডা. মফিজুর রহমান কাটা স্থান সেলাই করে দেন। ১৬ এপ্রিল অসুস্থ শরীর থাকা সত্ত্বেও ফজিলা আক্তারকে ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।

তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর শারীরিক নানা জটিলতা লেগেই থাকত। গত কয়েক দিন পূর্বে পেট ফেঁপে গিয়ে প্রচণ্ড পেটব্যথা দেখা দিলে তাকে ভালুকা ও ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে দেখানো হয়। ডাক্তাররা ধারণা করছিলেন তার পেটের নাড়িতে প্যাচ লেগে পেট ফুলে যাচ্ছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ শহরের বাটিকাশর এলাকার আইডিয়াল প্রা. হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শওকত আলী শেষ পর্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে ফজিলাকে পুনরায় অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। অপারেশন করার পর তার পেট থেকে আস্ত একটি বড় আকৃতির মুপ বের হয়ে আসে।

দীর্ঘ ৫ মাসেরও অধিক সময় মুপ আটকে থাকায় জরায়ু পচে যায়। মুপ নাড়ির সঙ্গে প্যাঁচ লেগে পেট ফুলতে থাকে। এ সময় ডা. শওকত আলী ফজিলাকে বাঁচানোর স্বার্থে পেটের ভুঁড়ির অনেকটা অংশ কেটে ফেলে দিয়ে বিকল্পভাবে প্রস্রাবের ব্যবস্থা করে দেন। তিন মাস পর ফজিলাকে আবারো অপারেশন করে স্বাভাবিকভাবে প্রস্রাবের ব্যবস্থা হবে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন।

এ সময় ডা. শওকত আলীকে সহযোগিতা করেন অজ্ঞানের চিকিৎসক ডা. রবিন অপূর্ব।

শাহজাহান মোল্লাহ জানান, আমি একজন দিনমজুর। আমার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য মানুষের কাছে হাত পেতে সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছি। আজকে পর্যন্ত ডিজিটাল হাসপাতালের মালিক পক্ষ ও ডাক্তার আমাকে কোনো প্রকার সহযোগিতা করেনি। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার জন্যই আমার স্ত্রীর আজ এ দুরবস্থা। আমি তিন সন্তানের খাবার জোটাব না হাসপাতালের খরচ জোগাব- এ নিয়ে আমি খুব বিপদে আছি।

ডা. মফিজুর রহমান বলেন, মানুষমাত্রই ভুল হতে পারে। অপারেশন করলে শতকরা ২-১টিতে সমস্যা হতেই পারে। যে রোগীর সমস্যা হয়েছে তার পরিবারের লোকজন যদি হাসপাতালে যোগাযোগ করত তাহলে তার চিকিৎসার ভার আমরা গ্রহণ করতাম।

ডা. শওকত আলী জানান, সিজারের সময় পেটের ভিতরে আস্ত একটি মুপ রেখে সেলাই করার ৫ মাস পর আবার অপারেশন করে মুপ বের করা হয় এবং পেটের ভেতরের অনেকটুকু নাড়ি কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। ভিতরে মুপ আটকে থাকায় জরায়ু ফেটে পেটের নাড়ির সঙ্গে প্যাঁচ লেগে যায়।

তিনি আরও বলেন, আবার তিন মাস পর রোগীকে অপারেশন করতে হবে।

 

সূত্রঃ যুগান্তর