সিআইএর অভিযানের ‘গোপনতম’ জাদুঘর

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

মৃত্যুর সময় আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে থাকা বন্দুক সযত্নে রাখা আছে সেখানে। এর পাশেই আছে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পরা চামড়ার জ্যাকেট। ইতিহাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে থাকা এমন আরো বস্তু সংরক্ষিত আছে বিশ্বের সবচেয়ে গোপন হিসেবে পরিচিত এই জাদুঘরে। আছে রোমাঞ্চকর সব গোয়েন্দা অভিযানের গল্প।

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ল্যাংলিতে অবস্থিত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সদর দপ্তরে এই জাদুঘরের অবস্থান। সিআইএর নিজস্ব কর্মীরাই কেবল প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এই জাদুঘর পরিদর্শনের সুযোগ পান। জনসাধারণের জন্য এর দরজা বন্ধই থাকে।

জাদুঘরটি প্রধানত দুটি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশে আছে বিভিন্ন নমুনা, সিআইএর ইতিহাস এবং তাদের কিছু অভিযানের বর্ণনা। দ্বিতীয় অংশে আছে গোপনীয়তার মতো নানা কৌশল অবলম্বন করে বাস্তবায়ন করা সিআইএর কয়েকটি অভিযানের বিস্তারিত বিবরণ। প্রদর্শিত ৬০০ জিনিসের মধ্যে আছে সিগারেটের প্যাকেটের আকৃতির গোপন ক্যামেরার মতো গুপ্তচরের কাজে ব্যবহৃত নানা সরঞ্জাম।

পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনের বাসভবন প্রাঙ্গণের মডেল তৈরি করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে অভিযান সম্পর্কে জানিয়েছিল সিআইএ। সে মডেলও রাখা আছে জাদুঘরে।

জাদুঘরের পরিচালক রবার্ট জেড বাইয়ের বলেন, এ ধরনের ত্রিমাত্রিক মডেল নীতি-নির্ধারকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়। সেই সঙ্গে অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করতেও সাহায্য করে।

জাদুঘরে শুধু সাফল্যের বর্ণনা নয়, তুলে ধরা হয়েছে কিছু ব্যর্থ অভিযানের কথাও। কিউবায় ফিদেল কাস্ত্রোকে উৎখাত করতে সিআইএর অভিযান ভেস্তে যাওয়া কিংবা ইরাকে ব্যাপকবিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে পাওয়ায় ব্যর্থতার উল্লেখও আছে এতে।

সিআইএর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু বিতর্কিত দিক জাদুঘরে কোনো রকমে দেখানো হয়েছে; যেমন—যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬-এর সঙ্গে যৌথ অভিযানের মাধ্যমে ১৯৫৩ সালে ইরানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা এবং ২০০১ সালের পর থেকে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের নির্যাতনের মতো বিষয়গুলো। জাদুঘরের দ্বিতীয় অংশে কিছু নির্দিষ্ট অভিযানের তথ্য ও তাতে ব্যবহৃত সরঞ্জাম সংরক্ষিত আছে।

এর মধ্যে আছে ১৯৬০-এর দশকে সমুদ্রের তলদেশে হারিয়ে যাওয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি ডুবোজাহাজ উদ্ধারের অভিযান। জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ থেকে এতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি উদ্ধারে মার্কিন ধনকুবের হাওয়ার্ড হিউজের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল সিআইএ। উদ্ধার অভিযানটি গোপন করতে সাজানো হয় যে ‘গ্লোমার এক্সপ্লোরার’ নামের জাহাজটি দিয়ে হিউজ খনিজ পদার্থের জন্য সমুদ্রের তলায় খনন চালাবেন। এ অভিযানে ডুবোজাহাজটির কিছু অংশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এর একটি মডেল জাদুঘরে আছে। আছে জাহাজ পরিদর্শনে যেতে তত্কালীন সিআইএ পরিচালকের পরা নকল চুলও।

১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর ইরান থেকে মার্কিন কূটনীতিকদের উদ্ধার অভিযানে ‘আর্গো’ নামের ছবি নির্মাণের গল্প ফাঁদা হয়। সে অভিযানের বিবরণও আছে জাদুঘরটিতে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ