সাবেক এমপি দারার বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পুঠিয়া-দুর্গাপুরের সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারার বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে সাংবাদ সম্মেলন করেছেন দুর্গাপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল লতিফ ‍মৃধা। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইয়নিয়নে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এই অভিযোগ তোলা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন- দুর্গাপুর উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি রোকুনউজ্জামান রোকন ও বানেশ্বর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মানিক সরদার।



সাংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুল লতিফ ‍মৃধা বলেন, আমার সম্পর্কে রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন তার প্রতিবাদে ও চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনােনয়ন বানিজ্য করেছেন। কিন্তু আব্দুল ওয়াদুদ দারা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে উপস্থাপন করেছেন আমি নাকি কখনো আওয়ামীলীগ করিনি। আব্দুল ওয়াদুদ দারার যে ধরনের মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, দুর্গাপুর-পুঠিয়ার আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ জানেন যে কিভাবে আমি ২০০৩ সাল থেকে দুর্গাপুর-পুঠিয়ার বঞ্চিত, নির্যাতিত ও সংগ্রামী নেতাকর্মীকে সংগঠিত করে ২০০৮ সালে আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে নিয়ে এসেছিলাম। এই দারা ২০০৮ সালের আগে কোনদিন কোথাও ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের কোন পদে ছিলেন না। ২০০৮ সালে আমি এবং বানেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ তথা পুঠিয়ার অন্যতম নেতা শ্রদ্ধেয় মরহুম সাত্তার শেখ মিলে আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে সর্বপ্রথম বিড়ালদহ ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য করেছিলাম।
২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম শুরু হলে দুর্গাপুর উপজেলার যুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের বিরুদ্ধে আমি মামলা দায়ের করার উদ্যোগ গ্রহন করি। যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আমার পরিবার। এই মামলার প্রধান আসামী তৎকালীন পাকিস্তানী শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান কুখ্যাত মােল্লা অব্দুিল ওয়াহেদ। যার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে দুর্গাপুরে চলেছিলো গণহত্যা ও লুটপাট। কোটি টাকার বিনিময়ে আব্দুল ওয়াদুদ দারা যুদ্ধাপরাধীর এই মামলা থেকে আমাকে কুখ্যাত ওয়াহেদ মোল্লার নাম বাদ দিতে বলেন। কিন্তু আমি অস্বীকৃতি জানাই। আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ওয়াহেদ মােল্লা আমার পারিবারিক আত্মীয়। যার কারণে দারা তৎকালীন সময়ে এমপি থাকাকালীন মুক্তিযােদ্ধা হিরু মাস্টারের ছেলে বাকিউল আলম লিটনকে বাদ দিয়ে মাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সভাপতি করার জন্য কুখ্যাত রাজাকার ওয়াহেদ মােল্লাকে ডিও লেটার দেন। এছাড়াও দারা কুখ্যাত ওয়াহেদ মােল্লার ছেলে সুমনকে ৬ নম্বর মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘাস্থয়ী করার জন্য ২০১৬ সালে জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা ব্যক্তিকে আওয়ামীলীগের মনােনয়ন দেন; ফলে সুমন চেয়ারম্যান হন।
দারা এমপি থাকাকালীন মনােনয়ন বানিজ্য, নিয়োগ বানিজ্য, লুটপাট প্রভৃতি কারণে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তার নিজের এমপি মনােনয়ন হারান। বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে আব্দুল ওয়াদুদ দারা ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আবারাে মনােনয়ন বানিজ্যে মেতে উঠেছেন। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমি নিজে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে আওয়ামীলীগের মনােনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম, কিন্তু দারা আমার ৬ নম্বর মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদে নৌকার প্রার্থী হিসেবে এমন একজন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করেছেন যার ওয়ার্ডে সর্বোমোট ভােটার সংখ্যা মাত্র ৩০০ টি। আসলে দারার মূল ষড়যন্ত্র হচ্ছে দুর্বল দলীয় প্রার্থী নিয়ে কুখ্যাত রাজাকার ওয়াহেদ মােল্লার ছেলে বিএনপি নেতা সুমনকে চেয়ারম্যান বানানাে। দারার এই ষড়যন্ত্র ইউনিয়নবাসীর কাছে আজ স্পষ্ট।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুর্গাপুর-পুঠিয়ায় লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে আব্দুল ওয়াদুদ দারা জনসমর্থনহীন, জনপ্রিয়তাহীন এবং সংগঠনের সাথে জড়িত নেই এমন ব্যক্তিদের নাম কেন্দ্রে সুপারিশ করেছে। অথচ আমি বা আমাদের মতাে তৃণমূলের কর্মীরা কিভাবে সংগঠন করেছি তা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে তুলে ধরা হয়না। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সঠিক তদন্ত করলেই তার সত্যতা মিলবে। আব্দুল ওদুদ দারার মনােনয়ন বানিজ্যের অন্যতম প্রমান দুর্গাপুরে প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
কেন্দীয় আওয়ীলীগের নেতৃবৃন্দসহ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে বর্তমান রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারার এধরনের মিথ্যা বক্তব্য, মনােনয়ন বাণিজ্য ও অপরাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করছি।
এবিষয়ে পুঠিয়া-দুর্গাপুরের সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘যে অভিযোগ তুলেছে, সেগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মৃধার দলীয় কোন পরিচয় নেয়। মিথ্যা অপপ্রচার চলাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।’