বুধবার , ২১ আগস্ট ২০২৪ | ৪ঠা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

সাত মাসে পুকুর খনন করে বাগমারার যুবলীগ নেতা ২৫ কোটি টাকার মালিক

Paris
আগস্ট ২১, ২০২৪ ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর দুর্গাপুরের উজান খলসি বিলে প্রায় ৪০০ বিঘা ধানের জমি কেটে চলছে পুকুর খনন। উপজেলার কিশমত গণকৈড় ইউনিয়নের এ বিলে পুকুর খনন চলছে পাশবর্তি বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক সম্পাদক সোহেল রানার নেতৃত্বে। যুবদল নেতাকে গুলি করার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় বর্তমানে পলাতক রয়েছেন সোহেল রানা। এই সোহেল রানা গত প্রায় সাত মাসে বাগমারায় ও দুর্গাপুরে অন্তত এক হাজার বিঘা পুকুর খনন করেছেন। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আবার কারও জমিতে জোর করে পুকুর খনন করেন সোহেল রানা। সেই পুকুরগুলো পরবর্তিতে মাছচাষিদের কাছে চড়ামূল্যে বর্গা দেন তিনি। এর মাধ্যমে সোহেল রানা গত ৭ মাসেই অন্তত ২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু কৃষক হারিয়েছেন এক হাজার বিঘা ফসলি জমি। এর ফলে সোহেল রানা বাগমারা ও পাশবর্তি দুর্গাপুরে জমি খেকো নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেন।

স্থানীয় সূত্র মতে, একসময় এই সোহেল ছিলেন বাগমারার সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের লাঠিয়াল। ৫ বছর আগেও সোহেল রানা তৎকালীন পৌর কালামের লাঠিয়াল হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। পরবর্তিতে তিনি কালামের পুকুর দেখা-ভাল করতে থাকেন। একপর্যায়ে পৌর যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক পদও পেয়ে যান তিনি। এরই মধ্যে কালাম গত নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হলে সোহেল হয়ে উঠেন বেপরোয়া। নির্বাচনের পরপরই সোহেল রানার নেতৃত্বে বাগামরার বিভিন্ন বিলে পুকুর খনন শুরু হয়। এ নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠে একটি অনুসন্ধানী খবরও প্রকাশ হয়। তার পরেও থেমে থাকেনি সোহেলের দাপট। এবার হোসেল বাহিনী ঢুকে পড়েছে পাশবর্তি উপজেলা দুর্গাপুরে। তাহেরপুর লাগোয়া উজানখলসি বিলে সোহেল প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করেছেন। গত প্রায় দেড় মাস ধরে চলে এ পুকুর খনন। একসঙ্গে ২৭টি এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে রাত দিন পুকুর খনন করেন তিনি।

এলাকাবাসী জানান, সোহেল প্রতি বিঘা জমি কৃষকদের নিকট থেকে বর্গা নেন ২৫-৩৫ হাজার টাকা করে। সেই জমিতে পুকুর খনন করে তিনি আবার বর্গা দিচ্ছেন ৫৫-৬৫ হাজার টাকা বিঘা। ১০ বছরের জন্য ওই পুকুর বর্গা দিয়ে টাকা আদায় করছেন সোহেল। এভাবে এক বিঘা জমি থেকেই তার আয় হচ্ছে অন্তত দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা করে। সেই হিসেবে গত সাত মাসে প্রায় এক হাজার বিঘা জমিতে পুকুর খনন করে সোহেল আয় করেছেন
এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, সোহলেকে এই পুকুর খননে মহযোগিতা করেন তাহেরপুর পৌরসভার কাউন্সিলর কার্তিক শাহ, কাউন্সিলর এরশাদ আলী ও দুর্গাপুরের কিশমত গণকৈড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।

স্থানীয় নাদের আলী নামের এক কৃষক জানান, তিনি পুকুর করতে জমি দেননি। কিন্তু সোহেলসহ তাঁর সহযোগীরা বাগমারার এমপি কালামের নাম ভাঙিয়ে নাদের আলীর জমি দখল করেছেন। সেই জমিসহ আরও অন্তত ৪০০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। পুকুরের চারিদিকে পাড় দেওয়া হয়েছে এরই মধ্যে। এখন ফষল ফলানোর আর কোনো উপায় নাই। অথচ এই জমিতে বছরে তিন বার ধান হত।’

আরেক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পুকুর খননের জন্য অধিকাংশ কৃষকই স্বেচ্ছায় জমি দেননি। সোহেল তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে কাউকে কাউকে অস্ত্রেরমুখে জিম্মি করেও জমি জোর করে কেটে নিয়েছেন। কৃষকরা অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘দুর্গাপুর আড়ইলের বিলেও বেশ কয়েকটি পুকুর খনন করেছেন তাহেরপুর পৌরসভার যুবলীগ নেতা সোহেল রানা। তিনি মূলত বাগমারার এমপির নাম করে এসব পুকুর খনন করছেন। তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ দিয়েও কৃষকরা কোনো প্রতিকার পাননি।

তবে পালানোর আগে সোহেল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি পুকুর খনন করছি জমি মালিকদের অনুমতি নিয়ে। কারও জমি জোরে কাটার প্রশ্নই আসে না। কাউকে ভয়ভীতি দেখানোরও সুযোগ নাই। পুকুর কেটে (লিজ) বর্গা দিচ্ছি। এটা আমার ব্যবসা। ব্যবসা করে আয় করা কোনো অন্যায় না। আমি এমপি সাহেবের নামও ভাঙায়নি।’

এদিকে, সম্প্রতি দুর্গাপুরের আঙ্করার বিলে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন কাজ শুরু করেন উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী হিরকের সহযোগিতায় ওই পুকুর খনন শুরু হয়। তবে ভারি বর্ষণ হওয়ার কারণে আপাতত সেটি বন্ধ রয়েছে।
জানতে চাইছে শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কোনো পুকুর খনন করছি না। কেউ করছে হয়তো।’

এ ব্যাপারে দুর্গাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন চৌধুরি জানান, ‘আমরা অভিযান চালাই মেশিন জব্দ করি। তারপরও কেনো পুকুর খনন থামছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অভিযান চালানোর কথা চালাচ্ছি। তার পরেও পুকুর কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। পুকুর খননের বিষয়টি আমরা নজরে রাখছি সার্বক্ষণিক।’

রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সরকার অসীম কুমার বলেন, ‘আমরা পুকুর খনন বন্ধের পক্ষে। তবে কৃষকরা আমাদের লিখিত অভিযোগ দেন না। কেনো দেন না সেটি জানি না। তারপরও আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা বিষয়টি দেখছি।’

 

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর