রবিবার , ২০ অক্টোবর ২০২৪ | ৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

সাকিব ইস্যুতে বিক্ষোভের উত্তাপ ছাপিয়ে মুখোমুখি বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা

Paris
অক্টোবর ২০, ২০২৪ ৯:৫৫ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

রাত পোহালেই শুরু হবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের ঢাকা টেস্ট। কিন্তু এই সিরিজের আগে মাঠের বাইরে সাকিব আল হাসান ইস্যুতে উত্তাল ছিল মিরপুর স্টেডিয়ামের আশপাশ। গত কয়েকদিন ধরেই সাকিব ভক্ত এবং সাকিব বিরোধীরা পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ করেন। রবিবার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। নিরাপত্তাবাহিনী কোনোরকমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এমন জটিলতার মধ্যেই সোমবার সকাল দশটায় ম্যাচটি মাঠে গড়াবে। বলা যায়, মিরপুরে এই টেস্টে না থেকেও আছেন সাকিব। এখন দেখার বিষয় মাঠের বাইরের ইস্যু ছাপিয়ে ক্রিকেট ঠিকঠাক ফেরে কিনা!

নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সরকার পতনের পর নিরাপত্তা শঙ্কায় টুর্নামেন্ট চলে যায় আরব আমিরাতে। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করতে দক্ষিণ আফ্রিকার নিরাপত্তা প্রতিনিধি দল এসেছিল। তাদের ইতিবাচক রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই শেষ পর্যন্ত দুটি টেস্ট খেলতে বাংলাদেশে আসে প্রোটিয়ারা। কিন্তু প্রথম টেস্ট শুরুর আগের দিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যা হলো, সেটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য মোটেও সুখকর নয়। দুপুর থেকেই সাকিব ভক্তরা পূর্ববর্তী ঘোষণা মোতাবেক লং মার্চ কর্মসূচীতে আসেন। তারা নিরাপত্তা বলয় ভেঙে প্রধান ফটকের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে সাকিব বিরোধীরা স্টেডিয়ামের সামনে আসলে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়। বিকালে চারটার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও ৫টার পর থেকে আরও ঘোলাটে হতে থাকে। সাকিবভক্ত ও বিরোধীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে। সন্ধ্যার পর সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এমন থমথমে পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই মিরপুরে সোমবার শুরু হচ্ছে ঢাকা টেস্ট। টেস্ট সিরিজের আগে দুই দলের শক্তি, দুর্বলতা নিয়েই আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন আলোচনা ঘুরে গেলো অন্যদিকে। মিরপুর বর্তমানে সাকিবকে নিয়ে উত্তাল। দলে না থেকেও আছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনেও ঘুরে ফিরে এলো সাকিবের নাম। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সংবাদ সম্মেলনে তাকে নিয়ে হলো অন্তত সাতটি প্রশ্ন। প্রোটিয়া ক্রিকেটার এইডেন মার্করামের সংবাদ সম্মেলনেও বাদ পড়েনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ ছাপিয়ে সব আলোচনাই কেবল সাকিবকে নিয়ে। এই টেস্টটি খেলে তিনি বিদায় নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তার শঙ্কায় দেশে ফিরতে পারেননি বলে খেলা হচ্ছে না।

এতকিছুর পর ক্রিকেটারদের মন কি বসবে ২২ গজে? অধিনায়ক শান্ত অবশ্য সবকিছু বাদ দিয়ে ক্রিকেটেই মনোযোগটা দিতে চান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘যেটা বললাম, দুর্ভাগ্যজনক… হওয়া উচিত ছিল ( সাকিবের মিরপুর থেকে বিদায়)। তবে আমরা সবাই জানি, কেন হয়নি। এটা নিয়ে আসলে টেস্ট ম্যাচের আগের দিন বেশি কথা আর বাড়াতে চাই না। আমি চাই, সবাই খেলাতে মনোযোগ রাখুক। এসব নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করা মানে সময় নষ্ট। যত বেশি সম্ভব খেলাটায় মনোযোগ রাখতে চাই। কারণ, খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি টেস্ট ম্যাচ। আমার মনে হয়, ক্রিকেটাররা সেদিক থেকে খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং চেষ্টা করছে মনোযোগ রাখার।’

সাকিব না থাকায় কম্বিনেশন সাজানো খানিকটা কঠিন টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য। বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন অধিনায়ক শান্তও, ‘এখনও সমস্যা হচ্ছে, কম্বিনেশন মেলাতে। অস্বীকার করার কিছু নেই। হয়তো এই জায়গাটি ঠিক করতে আমাদের আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। তবে এটা নিয়ন্ত্রণে নেই। আমাদের ওইভাবেই ম্যানেজ করতে হবে এবং যে ক্রিকেটাররা আছে, সবার ওই সামর্থ্য আছে, যার যার ভূমিকা পালন করবে। আশা করবো, যে কম্বিনেশন খেলবে, তারা সবাই যার যার জায়গা থেকে শতভাগ দেবে।’

দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ বছর পর বাংলাদেশ সফরে এসেছে। দলটির উপমহাদেশে খুব বেশি সাফল্য নেই। বাংলাদেশে সর্বশেষ খেলা দুই টেস্টেই ড্র করেছিল সফরকারীরা। যদিও সেই ড্রতে ছিল বৃষ্টির প্রভাব। লম্বা সময় পর আরও একটি সিরিজ খেলতে এসেছে প্রোটিয়ারা। দলটির ব্যর্থতা এবং নিজেদের কন্ডিশনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ম্যাচ জেতা সম্ভব বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশের জন্য মিরপুরের মাঠ চেনা হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার কারও এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। যদিও কেশব মহারাজ বিপিএলের কল্যাণে কয়েকটি ম্যাচ খেলেছেন। শান্তও মনে করেন মিরপুরে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবেন, ‘আমরা যেহেতু এই মাঠে অনেক ম্যাচ খেলেছি, আমাদের খুব ভালো অভিজ্ঞতা আছে। সেটাই কাজে লাগাবো। আগের বা বর্তমান কোচ, এত কিছু আসলে মেলানোর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ ক্রিকেটারদের এই মাঠে খেলার অনেক অভিজ্ঞতা আছে।’

এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মার্করাম জানালেন, মহারাজের অভিজ্ঞতা তারা কাজে লাগাতে চান। তিনি বললেন, ‘মহারাজ বেশ অভিজ্ঞ একজন ক্রিকেটার। সে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে। আমরা ৪ দিন ক্যাম্প করেছি, সাধ্যমতো প্রস্তুতি নিয়েছি। কাল দেখা যাক উইকেট কেমন হয়। আমরা সবসময় আত্মবিশ্বাসী ও ইতিবাচক দল হতে চাই। আমাদের উপহাদেশে ভালো করার সামর্থ্য আছে।’

মিরপুরের কন্ডিশনে স্বাভাবিকভাবেই স্পিনারদের আধিপত্য থাকে। বাংলাদেশের একাদশে তিন বিশেষজ্ঞ স্পিনারের সঙ্গে দুইজন পেসারের সম্ভাবনাই বেশি। তবে শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনায় বদল আসলে চার স্পিনারের সঙ্গে একজন পেসারকে দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না! একাদশ যেমনই হোক না কেন, সাকিব না থাকায় নিচের দিকের একজনকে ব্যাটিংয়ের ভালো দায়িত্ব নিতে হবে। শান্তর মতে, ‘আমরা বাড়তি একজন ব্যাটার বা বোলার নিয়ে খেলতে পারতাম, ওটা থাকবে না। তাই সাত নম্বরে যে ব্যাট করবে, তার ভূমিকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ থাকবে।’

এদিকে সাকিবের বিকল্প হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজকেই খুব ভালো বিকল্প মনে করেন শান্ত। তার মতে সাকিবের অভাব পূরণ করার পুরো যোগ্যতাই আছে এই স্পিনারের। তিনি বললেন, ‘এই মুহূর্তে সাকিব ভাইয়ের মতো কোনও ক্রিকেটার মনে হয় না আমাদের আছে। তবে মিরাজ খুব ভালো বিকল্প হতে পারে, টেস্ট ক্রিকেটে। খুবই ভালো করছে, দারুণ করছে, ব্যাটিং-বোলিং দুটিতেই। আরও উন্নতির জায়গা অবশ্যই আছে এবং মিরাজ ওই দায়িত্বটা নিতে প্রস্তুত। সবশেষ কয়েকটি টেস্ট ম্যাচে যদি তার ব্যাটিং দেখেন, আগের চেয়ে অনেক ভালো করছে এবং দলকে অধিকাংশ দিনই ভালো অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে। আশা করবো যে, পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে মিরাজ ওই জায়গাটা ভালোভাবে নিতে পারবে।’

কয়েক ঘণ্টা পর মাঠে গড়াবে টেস্ট ম্যাচটি। এর আগে নিরাপত্তার যেই শঙ্কা উঁকি মেরেছে, সেটা উড়িয়ে টেস্ট ম্যাচটি মাঠে দেখতে চান ক্রিকেট ভক্তরা। রবিবারের উত্তেজনা ছাপিয়ে এখন দেখার অপেক্ষা শান্ত-লিটনরা ভক্তদের মনোযোগ মাঠের ক্রিকেটে ফেরাতে পারেন কিনা?

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

সর্বশেষ - খেলা