সহকর্মীদের হত‌্যার হুমকি দিলেন খুলনা তথ‌্য অফিসের কর্মচারী

‘তোরা সবাই রাজাকার। তোরা বাইরে বের হ, সবকটাকে কোপাবো।’

বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) এভাবে সহকর্মীদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের কর্মচারী হাবিবুর রহমান।

কর্মকর্তাদের লাথি মেরে অফিস থেকে বের করে দেওয়া এবং অফিসে এলে গুলি করে হত‌্যার হুমকিও দিয়েছেন অফিস সহাকরী হাবিবুর রহমান।

অভিযোগ উঠেছে, হাবিবুর রহমান নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয় দিয়ে কর্মকর্তাদের ওপর খবরদারি করেন। এছাড়া, তিনি বিভিন্ন মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙিয়ে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বদলিসহ বিভিন্ন হুমকি দেন। কারণে-অকারণে প্রতিনিয়তই অফিসের সিনিয়র-জুনিয়র সহকর্মীদের হুমকি দেন তিনি।

এসবের প্রমাণ মেলে একই অফিসের টেলেক্স অপারেটর মো. মিজানুর রহমানের ফেসবুক স্ট্যাটাসে। বৃহস্পতিবারের মিজানুর রহমান ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে লিখেন, ‘অফিসের সন্ত্রাসী এক কলিগ কর্তৃক সিনিয়র সহকর্মী লাঞ্ছিত। মোবাইলে ভিডিও করতে গিয়ে আমিও হামলার শিকার। তার হুমকিতে পরিবারসহ প্রাণনাশের শঙ্কায় আছি। সবাই দোয়া করবেন।’

বৃহস্পতিবার খুলনা মহানগরীর পিটিআই মোড়ে খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসে অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ শুরুর সময় অফিস সহকারী হাবিবুর রহমান তার মোবাইলে নেটওয়ার্ক সংযোগ না পাওয়া নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে কল করে বহিরাগত জনৈক ব্যক্তিকে চাপাতি নিয়ে আসতে বলেন এবং অফিসের উপ-প্রধান তথ্য অফিসার ম. জাভেদ ইকবাল, সহকারী তথ্য অফিসার মো. আতিকুর রহমান, টেলেক্স অপারেটর মো. মিজানুর রহমানসহ সবাইকে কোপাবেন বলে হুমকি দেন।

এ সময় কর্মকর্তা ও সহকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোরা সবাই রাজাকার। তোরা বাইরে বের হ, সবকটাকে আজ কোপাবো’। একপর্যায়ে তিনি সহকর্মী মিজানুর রহমানকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। তখন উপস্থিত কর্মচারীরা তার রোষানল থেকে বাঁচতে এবং পরিস্থিতি শান্ত করতে হাবিবকে অফিস থেকে বের করে দিয়ে গেটে তালা লাগিয়ে দিতে বাধ্য হন।

হাবিুবর রহমান গেটের বাইরে থেকে প্রধান সহকারী মো. জাকির হোসেনের উদ্দেশে বলেন, ‘তুই অভিযোগ জানিয়ে আমার বিরুদ্ধে চিঠি লিখলে তোর হাতের আঙুল কেটে ফেলব’। সিনিয়র ক্যামেরাম্যান আব্দুস সাত্তার তাকে বারবার থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসে অফিস সহকারী পদে যোগ দেন হাবিবুর রহমান। তারপর থেকে বিভিন্ন সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসদাচারণ করে আসছেন মাগুরার শালিখা উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের মৃত কুটি মিয়ার ছেলে হাবিবুর রহমান।

সূত্র জানায়, খুলনা অফিসে যোগ দেওয়ার আগে ঢাকায় কর্মরত অবস্থায় হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালায় অসদাচরণের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। পরে আদালতে আপিল করলে শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অসদাচরণ না করার শর্তে তাকে পুনর্বহাল করা হয়।

এদিকে, হাবিবের ক্রমাগত হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অফিসেও আসতে রাজি হচ্ছেন না অনেকে। কর্মচারীরা তার বিরুদ্ধে কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করলেও ক্ষিপ্ত হন তিনি।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ম. জাভেদ ইকবাল বলেন, ‘হাবিবুর রহমান ঢাকা অফিসে থাকাকালে দুই বার বরখাস্ত হয়। শর্তসাপেক্ষে তাকে খুলনা অফিসে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি খুলনা অফিসে আসার পর থেকে সবার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করেন। বৃহস্পতিবার অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা ঢাকা সদর দপ্তরে জানিয়েছি।’

এসব বিষয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি ছাড়া খুলনা অফিসের সবাই জামায়াত-শিবিরের। তারা প্রতিনিয়ত আমাকে মানসিকভাবে টর্চার করে। তারা সবকিছু থেকে আমাকে বঞ্চিত করে।’