সরকার করোনাকে আক্রমণের সুযোগ করে দিচ্ছে: রিজভী

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে লুকোচুরি খেলছে। একদিকে এই সংক্রমণে মৃত্যু ও আক্রান্তের সঠিক পরিসংখ্যান তো দিচ্ছেই না, অন্যদিকে এই ভাইরাসকে বিনা বাধায় ঝাঁক বেঁধে আক্রমণের সুযোগ করে দিচ্ছে। জনগণের ভাবনাকে তারা আমলে না নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে।

শুক্রবার (২৯ মে) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, গণবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক সরকারের সিদ্ধান্ত জনগণের অনুকূলে হবে না এটাই স্বাভাবিক। তারা নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থে জনগণের জীবনবিনাশী সিদ্ধান্ত নিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। তার জলজ্যান্ত প্রমাণ ছুটি প্রত্যাহার করে করোনাভাইরাসকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগের মধ্য দিয়ে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি দেশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। করোনা চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বীকৃত কোনো মেডিসিন আবিষ্কার হয়নি। এই অবস্থায় সব দেশই করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। প্রতিদিন বেশি সংখ্যক মানুষকে টেস্টের আওতায় এনে করোনা উপসর্গ থাকলে আগেভাগেই আইসোলেশনে নেয়া কিংবা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণকেই অন্যতম সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে সরকারের উচিত দেশে অগ্রাধিকারভিত্তিতে করোনা টেস্টের সক্ষমতা বাড়ানো।

বিএনপির এই নেতা বলেন, যেভাবে করোনভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছে, সরকারের উচিত ছিল প্রতিটি জেলা-উপজেলায় করোনা টেস্ট ফ্যাসিলিটিজ নিশ্চিত করা। কিন্তু সেটি না করে অফিস-আদালত, গণপরিবহন চালু করা যেন মৃত্যুর মিছিলকেই আলিঙ্গন করা। মানুষের জীবন বাঁচাতে যখন লকডাউন, আইসোলেশন ও ঘরবন্দী থাকার কথা তখনই মৃত্যুদূত করোনাকে আমন্ত্রণ জানাতে জানালা-দরজা খুলে দিয়েছে সরকার। জীবনকে তুচ্ছ করে মানুষকে কর্মে লাগাতে চায় সরকার। দেশ-বিদেশের বিশেজ্ঞদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে সরকারের একগুঁয়েমিতে খুলে দেয়া হচ্ছে সবকিছু।

রিজভী বলেন, চারিদিকে নিরহ মানুষের হাহাকার, বিপন্ন মানুষের আর্তনাদ ও চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষ গুমরে গুমরে কাঁদছে। এই হলো বর্তমানে দেশের অবস্থা। এই সরকারের আমলে দুর্নীতিতে সবকিছু খেয়ে ফেলেছে। স্বাস্থ্যসেবা বলতে কিছুই নেই বাংলাদেশে। বাংলাদেশে তুরস্কের একজন নাগরিক পরিবারসহ করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তুরস্ক সরকার নিজ দেশে নিয়ে গেছে। এখানে ওই তুরস্ক নাগরিক করোনা টেস্ট পর্যন্ত করাতে পারেননি। সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালেই চিকিৎসা না পেয়ে সবাই সিএমএইচএর দিকে ছুটছে। যাদের সামর্থ্য নেই তাদের লাশ পড়ে থাকছে রাস্তাঘাটে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার চেয়ে নিশিরাতের সরকারের নেতা-মন্ত্রীদেরকে প্রতিদিন নিয়মিত বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করতেই বেশি উৎসাহিত মনে হচ্ছে। প্রতিদিন বিএনপির কোনো না কোনো নেতাকে গুম অথবা মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। অপরদিকে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে যাতে কেউ এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায়ও মত প্রকাশ করতে না পারে এ জন্যও চলছে গুম, হয়রানি ও জেল-জুলুম। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হিড়িক চলছে। গত দুই মাসে সাংবাদিকসহ সোশ্যাল মিডিয়ার পাঁচ শতাধিক অ্যাক্টিভিস্টকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মানুষের জবান স্তব্ধ করার জন্য মন্ত্রণালয়ে সেল গঠন করা হয়েছে।

রিজভী আরেও বলেন, আমরা সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলতে চাই, করোনাভাইরাস শুধুমাত্র র‌্যাব-পুলিশের মতো বিরোধী দল-মতকে দমন করতেই আসেনি, বরং সরকার যেভাবে ঢিলেঢালাভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চাইছে তাতে সবার ভয়ের কারণ আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের পক্ষে বিপক্ষে কে ‘লাইক কিংবা শেয়ার’ দিলো এগুলোর পেছনে সময় ব্যয় না করে, কীভাবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায় সেটি নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ ছিল।

সূত্রঃ জাগো নিউজ