সরকারের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা, শিশুদের দিয়েও পশু জবাই

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

কোরবানির পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বয়স সীমা মানেননি অনেকেই। মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কোরবানির পশু জবাই করতে ১৮ বছরের কম বয়সী মাদ্রাসার ছাত্রদের দেখা গেছে। যদিও  স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছিল ১৮ বছরের কম বয়সী কেউ কোরবানির পশু জবাই করতে পারবে না।

জানা গেছে, ঈদুল আজহার আগে কোরবানির পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণ নিয়ে এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ১৮ বছরের কম বয়সী মাদ্রাসার ছাত্রদের কোরবানির পশু জবাইয়ের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সিটি করপোরেশনগুলো কাজ করবে। এছাড়া, ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ঈদুল আজহা  উপলক্ষে পশু জবাইয়ের জন্য ইমাম ও  কসাইদের অঞ্চলভিত্তিক তালিকা করে নাম ও ফোন নম্বর প্রকাশ করা হয়।

রাজাধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রাপ্ত বয়স্কদের পাশাপাশি মাদ্রাসার ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীরাও পশু জবাইয়ে অংশ নিয়েছে। কোথাও কোথাও দেখা গেছে, মাদ্রাসার অল্প বয়সী  ছাত্ররা জবাই না করলেও এ কাজে তারা শিক্ষকদের সহায়তা করেছে। তাদের হাতে ছিল ধারালো ছুরি।

রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগ এলাকায় দেখা গেছে, ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী মাদ্রাসার ছাত্ররা কোরবানির পশু জবাই করেছে। ১৪ বছর বয়সী মামুনুর রশিদ ও সামছুর রহমান টোলারবাগ খানকা শরীফ মাদ্রাসার ছাত্র। মামুনুর রশিদ জানায়, সে ১০টি গরু জবাই করেছে। পশু জবাইয়ে সরকারে নির্দেশনা সে জানে না । শিক্ষকদের নির্দেশে মাদ্রাসার জন্য চামড়া সংগ্রহ করতে এসেছে সে।

যদিও ঈদুল আযহার আগে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আব্দুল মালেক বলেছিলেন, ‘১৮ বছরের কম বয়সী মাদ্রাসার ছাত্রদের কোরবানির পশু জবাইয়ের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সিটি করপোরেশনগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনগুলো বিষয়টি মাঠ পর্যায় মনিটরিং করবে।’

তবে স্থানীয় সরকার বিভাগের এই সিদ্ধান্ত জানেননা অনেকেই। মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং করতে দেখা যায়নি সিটি করপোরেশনের কোনও কাউন্সিলর, কিংবা অন্য কোনও কর্মকর্তাকে।

অন্যদিকে, পশু জবাইয়ের জন্য ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত অঞ্চলভিত্তিক তালিকায় ছিল ওয়ার্ড প্রতি একজন করে ইমাম ও কসাইয়ের নাম।কোনও কোনও ওয়ার্ডে ছিল না নির্ধারিত ইমামও। প্রতি ওয়ার্ডে একজন ইমামকে দিয়ে এলাকার সব পশু জবাই সম্ভব নয় বলেছেন স্থানীয়রা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিছুর রহমান  বলেন, ‘প্রতিটি এলাকায় শত শত গরু-ছাগল কোরবানি হয়। ফলে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত একজন ইমাম ও একজন কসাইয়ের পক্ষে এত পশু জবাই করা সম্ভব নয়।’

এ প্রসঙ্গে কল্যাণপুরের (ঢাকা উত্তর) বাসিন্দা আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘সব সময় তো মসজিদের ইমাম অথবা কোনও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দিয়েই আমরা পশু জবাই করাই। সরকার যে বয়স সীমা নির্ধারণ করেছে, এটা জানা ছিল না। মাদ্রাসার অনেক অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের তো পশু জবাই করতে দেখেছি। সিটি করপোরেশন বা সরকারি কোনও কর্মকর্তাকে দেখিনি এ বিষয়ে তদারকি করতে।’

জানা গেছে, দেশে মক্তব, ফোরকানিয়া এবং কোরানিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসার সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৩১টি। এই মাদরাসাগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখ। যাকাত ও কোরবানির পশুর চামড়া এবং চামড়া বিক্রির অর্থ কওমি মাদ্রাসার আয়ের অন্যতম উৎস। শুধু মাত্র এই ঈদুল আজহার সময়ে কোরবানির পশুর চামড়ার আয় থেকে কমপক্ষে তিন থেকে চার মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব হয় বলে জানিয়েছে মাদ্রাসার সংশ্লিষ্টরা। মাদ্রাসার জন্য চামড়া সংগ্রহ করতে শিক্ষকদের নেতৃত্বে ছাত্ররা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে থাকে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কোরবানির পশু জবাই করে থাকে, যাদের মধ্য ১৮ বছরের কম বয়সী ছাত্রও থাকে।

এ প্রসঙ্গে শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘মাদ্রাসারা শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীরা পশু জবাই করে সাধারণ মানুষকে সহায়তা করেন। কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য ধর্মের নিয়ম আছে। কিভাবে কোন পদ্ধতিতে করা হবে সেটা মানা জরুরি। পশু জবাইয়ের নিয়ম মেনে সক্ষম যেকেউ পশু জবাই করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ধর্মে কোনও বিধি নিষেধ নেই। একজন বৃদ্ধ লোক প্রাপ্ত বয়স্ক হলেও তিনি হয়তো পশু জবাই করতে অক্ষম।’

শিশুদের মানসিক বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত বলেও মনে করেন ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। তিনি বলেন, ‘শিশুদের মন কোমল। শিশুরা পশু জবাইয়ে সক্ষম হলেও কম বয়স হলে তাদের মানসিক বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন