সরকারের ব্যর্থতায় দেশের মানুষ মৃত্যু আতঙ্কে: ফখরুল

সরকারের ব্যর্থতায় দেশের মানুষ মৃত্যু আতঙ্কে ভুগছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আজকে গোটা দেশের মানুষ জীবিকার চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। মানুষ তাদের যে মৌলিক অধিকার, যে ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচন করবেন, সরকার নির্বাচন করবেন, তাদের ভবিষ্যতকে দেখবেন সেই জায়গাটুকু পর্যন্ত আজকে হরণ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বুধবার দুপুরে সদ্যপ্রয়াত বিএনপি নেতা শাহজাহান সিরাজের স্মরণে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশন-বিএনআরসির উদ্যোগে ‘স্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামকে স্বাধীনতা যুদ্ধের রূপান্তরে শাহজাহান সিরাজের ভূমিকা’ শীর্ষক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

দেশের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, শাহজাহান সিরাজের প্রতি আমরা তখনই শ্রদ্ধা জানাতে পারব তিনি যে বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন তা যদি আমরা নির্মাণ করতে পারি। আজকে আবার ১৯৭১ সালের মতো আমাদের একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। এই ঐক্য সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে ওই সময়কার সত্যিকার অর্থের যে চেতনা তা আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারব। সেটাই হবে শাহজাহান সিরাজের প্রতি সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধা জানানো।

তিনি বলেন, কী দুর্ভাগ্য আমাদের আজকে যারা ক্ষমতায় বসে আছে, তারা বলে স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করে তারাই। অথচ আজকে সচেতনভাবে এ দেশের মানুষের ভোট দেয়ার অধিকার, মৌলিক অধিকার সেগুলোকে হরণ করে নিয়ে গেছেন। আমরা এই বাংলাদেশ দেখতে চায়নি।

শাহজাহান সিরাজের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি শাহজাহান সিরাজকে শুধু বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই না, আমার মনে হয় দেশের মানুষও দেখতে চান না। তাকে সবাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন নায়ক হিসেবে দেখতে চান, সেভাবে তারা দেখেছেন তাকে।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একাত্তরে তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। আর এজন্যই সেদিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে জনগণকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, উজ্জীবিত করেছিল। এগুলো ঐতিহাসিক সত্য ঘটনা। দুর্ভাগ্য আজকে ইতিহাসকে বিভিন্নভাবে বিকৃত করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত স্বার্থ, দলীয় স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য এখন তারা তাদের মতো করে ইতিহাস রচনা করছে।

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ১৯৬২ সালে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস গঠনের মধ্য দিয়ে প্রত্যেকটা আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে। ওই সময়ে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে নিউক্লিয়াসের সদস্যরা ছাড়া কেউই পৃথিবীতে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নই দেখে নাই। আমি ও শাহজাহান সিরাজ ’৬২ সালে নিউক্লিয়াসের সদস্য। আমরা কোনোদিন স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলন করিনি।

তিনি বলেন, শাহজাহান সিরাজ তার সারাজীবনে কী কাজ করেছেন আমি জানি না। তবে যতদিন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মাটি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা থাকবে ততদিন তিনি একটি জিনিসের জন্য বেঁচে থাকবেন তা হল ৩ মার্চ। সারা বাংলাদেশে সেদিন স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়েছিল, যেটা ২ মার্চ আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তোলন করেছিলাম এবং বলা হয়েছিল ৩ মার্চ পাকিস্তানের পতাকা পুঁড়িয়ে দিয়ে সারা দেশে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করতে হবে। সেদিন বঙ্গবন্ধুকে সামনে রেখে সিরাজুল আলম খানের নির্দেশে শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন। আজকে ৫০ বছর পরে ৭ মার্চ ঐতিহাসিক দিবস উদযাপন করার সিদ্ধান্ত হয়। কেন এই ৫০ বছর কী হয়েছে? ক্ষমতাসীন দল স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, আমরা স্বাধীনতা চেয়েছিলাম মানুষের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে, একটি নেতৃত্বের মাধ্যমে, সমস্ত জাতির ঐক্যের মাধ্যমে। ’৭০ এর ম্যান্ডেন্ট পাওয়ার আগে যদি আমরা স্বাধীনতার স্লোগান দিতাম, ম্যান্ডেট পাওয়ার আগে যদি আমরা স্বাধীনতার প্রথম পরিক্রমায় অংশ নিতাম তাহলে জনগণও আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবতো এবং পাকিস্তানি শত্রুরা আমাদের আক্রমণ করতে সুযোগ নিয়ে নিত।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, এখন গণতন্ত্রের হাল কী? গণতন্ত্র তো দূরে থাক, ভোটতন্ত্র সেটাও নাই। পার্লামেন্ট থেকে ইউনিয়ন কাউন্সিল পর্যন্ত প্রায় ৬৬ হাজার কথিত জনপ্রতিনিধি রাতের ভোট, টাকার জোরে, শাসন ক্ষমতার দাপটে-আনুক‚ল্যে, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কারসাজিতে নির্বাচিত হয়ে যান। জাকাতের টাকা কিংবা কোরবানির মাংস পাওয়ার জন্য যেভাবে অভাবগ্রস্ত মানুষের জটলা হয় তেমনি জটলা দেখিয়ে ভোট কার্য সমাপ্ত হয়ে যায়। এই হচ্ছে আমাদের ভোটতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক চেহারা। এছাড়াও বিচারবহির্ভূত হত্যা, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলা, মুক্তবাজারের নামে লুটতরাজ, দুর্নীতি-অপশাসনের নানা চিত্র তুলে ধরেন তিনি।

বিএনপির সাবেক সাংসদ জহিরউদ্দিন স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, নাগরিক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী।