কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও কিশোরগঞ্জ সোসাইটি অব হেলথ সার্ভিসেস-এর সভাপতি প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেছেন, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে হবে। চিকিৎসার জন্য রোগীদের যেন ঢাকা কিংবা ময়মনসিংহে দৌড়াতে না হয়, সেটা এখানকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক এবং বেসরকারি ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক মালিকদের নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল সোমবার রাতে কিশোরগঞ্জের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। সাংসদ তৌফিক আরও বলেন, শুধু চিকিৎসকদেরই নয়, প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও সেবাদানের মানসিকতার বড়ই অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে নতুন পোস্টিং হওয়ার পরই বদলী হয়ে যায়।
তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের অনেকের মধ্যে এসি ল্যান্ড থেকে শুরু হয় ঢাকায় বাড়ি আর গাড়ি করার প্রবণতা। এসব কারণেই মানুষ প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে নিয়মনীতি মেনে চলা, অধীনস্থদের আইন মানতে বাধ্য করতে কঠোর হওয়ার এবং এক্ষেত্রে কোন ছাড় না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মত বিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা বিএমএ-এর সভাপতি ডা. মাহবুব ইকবাল সবকিছুর ঊর্ধ্বে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, বেশিরভাগ ক্লিনিকের মালিক চিকিৎসক। তারা সঠিক সেবা দিলে কারও কোন অভিযোগ থাকতো না। বেআইনিভাবে গড়ে উঠা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও তিনি আহ্বান জানান।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারী স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে বলেন, পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তিনি এসময় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের প্রতি অনুরোধ জানান।
জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল ওয়াহাব বাদল বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলো প্রত্যাশিত সেবা দিতে পারছে না বলেই মানুষ বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর দিকে ধাবিত হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের আশেপাশে গড়ে উঠা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে এর পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, দালালদের কারণে গ্রামের সহজ সরল মানুষেরা প্রতারিত হচ্ছেন। রোগীর ছদ্মবেশে কোন কোন দালাল হাসপাতালে যান বলেও তিনি জানান। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় খুব শিগগির এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যেখানে আপনারা নিজের কিংবা নিজেদের মা বাবার চিকিৎসা করাতে পারবেন না, সেখানে কী ধরণের চিকিৎসা হয়, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে শুধুমাত্র টাকা কামানোর মেশিন না বানিয়ে সেবার মান বাড়ানোর জন্য তিনি মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান। অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সুমন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদেরকে বর্জ ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে মেনে চলার আহ্বান জানান। সভাপতির বক্তব্যে জেলা স্বাচিপের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আ. ন. ম. নৌশাদ খান বলেন, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক থেকে শুরু করে চিকিৎসক ও নার্সসহ সকলের চরিত্র বদলাতে হবে। বিবেকের কাছে জবাবদিহি থাকলে কেউ সহজে অন্যায় করতে পারে না বলে তিনি মনে করেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএমএ, স্বাচিপ ও কিশোরগঞ্জ সোসাইটি অব হেলথ সার্ভিসেস যৌথভাবে এ মত বিনিময় সভার আয়োজন করে। সভায় কিশোরগঞ্জের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন