সভাপতি-সম্পাদক ঠুঁটো জগন্নাথ, নতুন নেতৃত্বের আশায় রাজশাহী মহানগর যুবলীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অুনষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালে। রমজান আলীকে সভাপতি এবং মোশাররফ হোসেন বাচ্চুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ১১১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ এই কমিটিতে রমজান আলী তাঁর ছেলে রায়হানুর রহমান রয়েলকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বসান। বিষয়টি নিয়ে ওই সময় কালের কণ্ঠে একটি খবর প্রকাশিত হলে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয় রয়েলকে। এর পর নানা বিতর্কের মধ্যে কেটে গেছে রমজান-বাচ্চুর কমিটির মেয়াদ। তিন বছরের এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২০১৯ সালে।

এছাড়াও রমজান আলীর আপন ভাই গোলাম ফারুক ও ভগ্নিপতি আলম পেয়েছেন সহসভাপতির পদ। আলমের দুই ভাই পেয়েছেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পদ। এর বাইরেও রমজান বাচ্চু পরিবারের একাধিক সদস্য পেয়েছেন মহানগর যুবলীগের বিভিন পদ।

এর আগে ২০০৪ সালের সম্মেলনেও রমজান বাচ্চুকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। সেই হিসেবে গত ১৮ বছর ধরে তাঁরা পদ দুটি আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। এই ১৮ বছরে দুজনেরই অর্থনৈতিক ভীত হয়েছে কয়েকশ গুন বৃদ্ধি।

সম্মেলন না হলেও সংগঠনের নেতৃত্ব প্রায় শূন্য হয়ে গেছে রমজান-বাচ্চুর। কিন্তু এখনো তাঁরা ঠুঁটো জগন্নাথের মতো পদ দুটি ধরে রেখে গেছেন। মহানগর যুবলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চাইছেন দ্রুত সম্মেলন দিয়ে মহানগর যুবলীগকে দ্রুত পূর্ণগঠিত করা হোক। কিন্তু কেন্দ্র থেকে সাঁড়া না পাওয়ায় এখনো সেই আশা পূরণ হচ্ছে না তাঁদের। তবে চলতি মাসের মধ্যে মহানগর যুবলীগের সম্মেলন হতে পারে বলে সংগঠনটির একাধিক সূত্র দাবি করেছে।

এদিকে দীর্ঘ ১৮ বছর পরে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পেতে মুখিয়ে আছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। এরই মধ্যে রমজান-বাচ্চুর নিস্কৃতায় সংগঠনটির হাল ধরে সভাপতি পদ পেতে যাচ্ছেন যুগ্ম-সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি-এমনটিই চাউর হয়েছে নেতাকর্মীদের মাঝে। ফলে সভাপতি পদে আর তেমন কোনো নাম শোনা না গেলেও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে দৌড়-ঝাঁপ করছেন অন্তত ৭ জন নেতা। যাঁদের মধ্যে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আক্তার নাহানকে এগিয়ে রাখছেন অনেকেই। এর পরে দৌড়-ঝাঁপ করছেন বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখ, যুগ্ম সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকারের নাম।

মহানগর যুবলীগের অর্থ সম্পাদক সৈয়দ জাফর মতিন রাজিব বলেন, ‘সংগটনে প্রায় অস্তিত্বহীন দুই নেতার অবসান দেখতে চাই আমরা। দ্রুত সম্মেলন হলে আবারও প্রাণ ফিরে আসবে সংগঠনে।’

মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন। নতুন নেতৃত্ব পেলে তৃণমূলের আবারও চাঙ্গা হবেন তাঁরা।’

যুবলীগ নেতা নাহিদ আক্তার নাহান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় সংগঠনিট প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় দ্রুত কাউন্সিল দরকার। নেতাকর্মীরা নতুন নেতৃত্ব পেতে মুখিয়ে আছেন। নেতৃত্ব পেলে সংগঠনটিকে ঢেলে সাজানো হবে।’
মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি বলেন, ‘মহানগর যুবলীগকে ঢেলে সাজাতে আমি কাজ করে যাচ্ছি। এখন সম্মেলনটি হওয়া দরকার। বছরের পর বছর ধরে সম্মেলন না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে যে হতাশা তৈরী হয়েছে, সেটি আর থাকবে না। আমরা সবাই মিলে তখন সংগঠনটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।’

রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী বলেন, ‘সম্মেলন হওয়াটা দরকার। আমরাও চাইছি সম্মেলন করে নতুনদের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে। কিন্তু কেন্দ্র থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় সেটি করতে পারছি না। ওয়ার্ড পর্যায়েও নেতাকর্মীরা নতুন নেতৃত্বে চাইছেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংগঠন করতে গেলে বিতর্ক থাকবেই। তবে আমরা সংগঠনবিরোধী কোনো কাজ করিনি।’

স/আর