সংলাপের পাশাপাশি ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন চায় টিআইবি

শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে সীমাবদ্ধ না থেকে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে অবিলম্বে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আজ সোমবার (২০ ডিসেম্বর) ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপ শুরুর প্রথম দিন এমন দাবি সামনে এনেছে সংস্থাটি

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। তার আগেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সংলাপে বসতে শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি। এরই অংশ হিসেবে সোমবার প্রথম দিনের সংলাপে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি (জাপা)।

তবে টিআইবি মনে করছে, রাষ্ট্রপতি যে সংলাপ শুরু করেছেন তা গুরুত্বপূর্ণ, তবে যথেষ্ট নয়। শুধু সংলাপ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন পদ্ধতিতে ইতোপূর্বে কাঙ্ক্ষিত ইতিবাচক ফল আসেনি। তাই নির্দলীয়, সৎ ও গ্রহণযোগ্য ইসি গঠনে অবিলম্বে আইন প্রণয়ন করতে হবে।

সোমবার (২০ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যমসূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে আমরা জেনেছি যে, নতুন ইসি গঠনে আজ (২০ ডিসেম্বর) থেকে রাষ্ট্রপতি যে সংলাপ শুরু করেছেন, তা নিয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের তেমন কোনো তাগিদ বা উচ্ছ্বাস নেই। দলগুলোর নীতিনির্ধারকেরাও মনে করছেন না যে, এ সংলাপে ইসি গঠনে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব বা নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন বিষয়ে ইতিবাচক কোনো আলাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে, অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এ ধরনের সংলাপের মাধ্যমে সার্চ কমিটি করে গঠিত ইসি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে চূড়ান্তরূপে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আমরা মনে করি, এ সংলাপের ফল যাই হোক না কেন, রাষ্ট্রপতির প্রতি সবার প্রত্যাশা- দেশের আপামর জনগণের প্রত্যাশা বিবেচনায় নিয়ে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ইসি গঠনে অবিলম্বে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া।

ইসি গঠনে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অবিলম্বে আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১২ এবং ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের পর গঠিত দুটি নির্বাচন কমিশনই ব্যাপকভাবে বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়েছে। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হলেও, তা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। কিন্তু একটি প্রকৃত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এবং ইসির প্রতি জনগণের আস্থা ফেরাতে অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন আইন গঠন এবং সেই আইন অনুযায়ী ইসি নিয়োগের বিকল্প নেই।

এ প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, যেন এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব এমন ব্যক্তিবর্গের হাতে অর্পিত হয় যারা নির্দলীয়, সর্বজন গ্রহণযোগ্য ও নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে সৎ সাহসের অধিকারী হবেন। যেন সত্যিকারের নির্দলীয়, সৎ, নিরপেক্ষ ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে জনগণের ‘নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের স্বাধীনতা’ প্রয়োগের অধিকার এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের অবাধ ও নিরাপদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার অর্জিত হয়।

নির্বাচন সংক্রান্ত সব কর্মকাণ্ডে ইসি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় ভূমিকা নিশ্চিতে রাষ্ট্রপতি এবারই নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নে জোরালো ভূমিকা রাখবেন- বিবৃতিতে এমন প্রত্যাশা ব্যক্তি করেছে টিআইবি।

একইসঙ্গে জাতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনসমূহ পর্যবেক্ষণের জন্য শুধু নির্বাচনের দিনই নয়, বরং মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে স্বাধীন ও নির্দলীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের মুক্ত ও অবাধ উপস্থিতি নিশ্চিতেরও দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গত কয়েক মেয়াদে রাষ্ট্রপতি ‘সার্চ কমিটি’র সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা রয়েছে রাষ্ট্রপতির।

সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানিয়েছিলেন, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩১টি দলের সাথেই আলোচনা হবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সংলাপ শেষ করার প্রস্তুতি রয়েছে। এজন্য একদিনে একাধিক দলের সাথে বৈঠক হতে পারে এবং এটা নিয়ে কাজ করছে বঙ্গভবন।

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ