সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা : পোস্টদাতা বিএনপির, চার্জশিট শিগগিরই

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা-লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পোস্টটি করেন ঝুমন দাস (২৮) নামে একজন। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া ওই ঝুমন দাস বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এ ঘটনায় করা মামলার চার্জশিট স্বল্প সময়ের মধ্যেই দেওয়া হবে।

শাল্লায় হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (২১ মার্চ) দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে শাল্লার ঘটনার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাস বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি শাল্লা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ঝুমনকে আটকের পর ১৭ মার্চ ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় করা মামলার অভিযোগপত্র স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দেওয়া হবে উল্লেখ করে এসপি বলেন, পুলিশ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে ঘটনার তদন্ত করছে। ঘটনার সূত্রপাত যেহেতু হেফাজত নেতা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে, তাই সেখান থেকে তদন্তের শুরু। এর সঙ্গে আরও নানা বিষয় যুক্ত হতে পারে। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই যুক্ত, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে নিরপরাধ কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন এসপি।

সুনামগঞ্জের শাল্লায় ফেসবুক পোস্টের জেরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে হামলা-ভাচুরের ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়ে মো. মিজানুর রহমান বলেন, দায়ীদের ক্ষেত্রে কার কী দলীয় পরিচয় সেটাকে বিবেচনায় নেওয়া হবে না। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামিসহ এ পর্যন্ত ৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে যাদেরই সংস্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

পুলিশ সুপার বলেন, ঝুমন দাসের ফেসুবক পোস্টের জেরেই দিরাই ও শাল্লার কয়েকটি গ্রামের কয়েকশ’ মুসলিম উত্তেজিত জনতা জড়ো হয়ে গ্রামের পাশে মিছিল-সমাবেশ করছেন- এমন খবর পেয়ে শাল্লা থানার ওসি এবং ইউএনও ঘটনাস্থলে যান। এ খবর পেয়ে শাল্লা থানার পুলিশ সেখানে যায় এবং ঝুমন দাসকে আটক করে। দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার আশ্বাস দিলে উত্তেজিত জনতা শান্ত হয়ে ফিরে যান। পরে নোয়াগাঁও গ্রামের পাশের ধারাইন বাজারে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

তিনি বলেন, ১৭ মার্চ সকালে নোয়াগাঁওয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। গ্রামটির অবস্থান দাড়াইন নদীর পারে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে লম্বালম্বি। পশ্চিমপাশের রাস্তায় উত্তেজিত জনতাকে থামান ওসি ও ইউএনও। কিন্তু পূর্বদিকে অরক্ষিত এলাকায় কিছু জনতা নদী পার হয়ে গ্রামে গিয়ে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। খবর পয়ে পুলিশ পূর্বদিকে গেলে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ার পরও দ্রুততম সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। ঘটনার দুই ঘণ্টার মাথায় আমি ও জেলা প্রশাসক সেখানে যাই। মূলত ঘটনার দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎক্ষণাৎ ভূমিকায় মানুষের জানমালের ক্ষতি কম হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। ঘটনার সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে- সেটা সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান, সদর মডেল থানার ওসি মো. সহিদুর রহমান, পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ১৫ মার্চ দিরাইয়ে সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। পরদিন মামুনুলের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন নোয়াগাঁওয়ের এক হিন্দু যুবক। এই স্ট্যাটাসের জেরে হিন্দু অধ্যুষিত ওই গ্রামটিতে হামলা চালিয়ে ৮৮টি বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এ ঘটনায় ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দেড় হাজার লোককে আসামি করে শাল্লা থানায় পৃথক দুটি মামলা দয়ের হয়েছে।

সূত্র : যুগান্তর