সংক্রমণ ও শনাক্ত হার ছয় মাস আগের কাছাকাছি

মৃতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে এখনো কম থাকলেও প্রতিদিন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত ও নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার গত জুলাইয়ের শেষ কয়েক দিন থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহের চরম অবস্থার কাছাকাছি চলে গেছে। করোনাভাইরাসের অতি সংক্রমণশীল ধরন ওমিক্রনের কারণেই এ অবস্থা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত রবিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৮২৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয় ১০ হাজার ৯০৬ জন।

অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রোগী বেড়েছে তিন হাজার ৯২২ জন। দেশে এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে শনাক্ত হলো ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৬৪ জন।

ছয় মাস আগে গত বছরের ২৬ জুলাই এক দিনে করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১৫ হাজার ১৯২ জন। এরপর সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন শনাক্ত হয় ২৮ জুলাই। গত ৩ আগস্ট ১৫ হাজার ৭৭৬ জন শনাক্ত হওয়ার পর থেকে শনাক্তের সংখ্যা কমতে শুরু করে। গত ২৪ জুলাই নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ৩২.৫৫ শতাংশ। বর্তমানে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এই হার ৩২.৩৭ শতাংশে পৌঁছেছে।

ছয় মাস আগে মৃত্যু ছিল প্রতিদিন প্রায় আড়াই শ জনের। বর্তমানে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। গত  সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সর্বশেষ ১৫ জন নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃত্যু হলো ২৮ হাজার ২৩৮ জনের।

সর্বশেষ মৃত ১৫ জনের মধ্যে পুরুষ ৯ জন আর নারী ছয়জন। এর মধ্যে ৭১ থেকে ৮০ বছরের পাঁচজন, ৬১ থেকে ৭০ ও ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে তিনজন করে, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে দুজন এবং ৩১ থেকে ৪০ ও ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে একজন করে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জন হচ্ছেন ঢাকা বিভাগের, তিনজন ময়মনসিংহ বিভাগের, দুজন সিলেট বিভাগের এবং একজন করে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৪৫ হাজার ৮০৭টি। দেশে এখন পর্যন্ত এক কোটি ২১ লাখ ৬২ হাজার ৬৮৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে ৯৯৮ জন। তাদের নিয়ে মোট ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৯ জন সুস্থ হয়েছে।

অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ৪৫ হাজার ৯৯৯টি এবং পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৮০৭টি। দেশে এখন পর্যন্ত এক কোটি ২১ লাখ ৬২ হাজার ৬৮৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা করা হয়েছে ৮৩ লাখ সাত হাজার ৭৪৫টি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩৮ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪২টি।

দেশে গতকাল পর্যন্ত রোগী শনাক্তের হার ছিল ১৩.৯৮ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১.৬৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১.৬৬ শতাংশ।

এক সপ্তাহের পরিস্থিতি : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে করোনায় নতুন শনাক্ত রোগী বেড়েছে ১৮০ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ৮৮ শতাংশ। গত ১৭ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত করোনায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৬৭ হাজার ৪২৫ জন। এর আগে ১০ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত  শনাক্ত হয়েছিল ২৪ হাজার ১১ জন। অর্থাৎ আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে রোগী বেড়েছে ১৮০.৮ শতাংশ।

গত সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মত্যু হয়েছে ৭৯ জনের। আগের সপ্তাহে মারা গিয়েছিল ৪২ জন। অর্থাৎ এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৮৮ শতাংশ।

নতুন শনাক্ত ও মৃত্যুর পাশাপাশি গত সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় করোনার নমুনা পরীক্ষা এবং সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। গত সপ্তাহে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে দুই লাখ ৫৫ হাজার ৪৫৫টি এবং আগের সপ্তাহে পরীক্ষা  করা হয়েছিল এক লাখ ৮৯ হাজার ৬৩০টি। অর্থাৎ নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে ৩৪.৭ শতাংশ।

গত সপ্তাহে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে তিন হাজার ৯৬৮ জন। এর আগের সপ্তাহে সুস্থ হয়েছিল এক হাজার ৯৮৮ জন। অর্থাৎ সুস্থ হওয়া রোগীর হার বেড়েছে ৯৯.৬ শতাংশ।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন : রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন গতকাল সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে করোনা রোগী শনাক্তের তুলনায় মৃত্যু এখনো কম মনে হলেও প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য আমাদের কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। এখন যারা শনাক্ত হচ্ছে, তাদের চূড়ান্ত অবস্থা জানার জন্য এ সময় লাগবে। ’

টিকা নেওয়ার পরও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে কেন—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন সম্পর্কে আমরা যতটা জেনেছি, তাতে করোনার এই নতুন ধরন মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। এ কারণেই টিকা নেওয়ার পরও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকের ধারণা, টিকা নেওয়া থাকলে খুব বেশি বিপজ্জনক অবস্থা হবে না। কিন্তু আক্রান্ত হলে দীর্ঘদীন শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে। এ জন্য টিকা নেওয়ার পরও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। আর টিকা যারা একেবারেই নেয়নি, তাদের ওপর ওমিক্রনের প্রভাব কেমন হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ’

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ