শ্রীলঙ্কায় ‘পরীক্ষা’ হবে ডমিঙ্গোরও

‘আগামী কয়েকদিন আসলে একজন পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় থাকব, দেখব কে কি করে, শিখতে চাইব ব্যাপারগুলো।’– বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়ে গণমাধ্যমে প্রথম মুখোমুখিতে এমন কথা বলেছিলেন রাসেল ডমিঙ্গো।

ডমিঙ্গোর মুখে এমন কথা শুনে খটকা লেগেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এক পরিচালকের । খটকা লাগার কারণ, ‘আমরা তার কাছ থেকে ফল চাই। উল্টো তিনি কি না বলেছিলেন, পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় থাকবেন। খেলোয়াড়দের ছেড়ে দেবেন!

দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট হজম করে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ধাক্কা। ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে হার। নতুন কোচ সমালোচনায় বিদ্ধ হননি। কিন্তু দুই বছর পর তার নামের পাশে প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিচ্ছেন নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ।

কারণও স্পষ্ট, ‘বাংলাদেশ দল ধারাবাহিক খারাপ খেলছে। খেলার মান দেখে মনে হচ্ছে না কোনো পরিকল্পনা কাজে আসছে। প্ল্যান এ কাজে না আসলে প্ল্যান বি-তে যেতে হয়। সেটাও না হলে প্ল্যান সি। বিকল্প ধরে আগাতে হবে। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে উনারা পাঠ্যপুস্তকের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সেটা নুন্যতম কাজে আসছে না’-এভাবেই বলছিলেন এক পরিচালক।

২০১৯ সালে আফগানিস্তান সিরিজ দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন রাসেল ডমিঙ্গো। প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে তার অধীনে বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচ হেরেছিল।  এরপর ভারত ও পাকিস্তান সফরে টেস্ট সিরিজে একেবারেই বাজে পারফরম্যান্স বাংলাদেশের। তিনটি টেস্টই হেরেছে বাজেভাবে।

যদিও দিল্লিতে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে হারিয়েছিল ভারতকে। এরপর জিম্বাবুয়েকে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডেতে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধান করে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ এবং জিম্বাবুয়েকে টেস্ট ম্যাচ হারায়। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মঠে টেস্টে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ এবং নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে এবং একই ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারায় কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে বেশ।

ডমিঙ্গোর অধীনে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩০ ম্যাচ খেলে ১৭টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ দল। জয় ১৩টিতে। টেস্টে ৬ ম্যাচ খেলে ১টি জয়, ওয়ানডেতে ৯ ম্যাচে জয় ৬টি এবং টি–টোয়েন্টিতে ১৪ ম্যাচে জয় ৬টিতে। ডমিঙ্গোর সমালোচনা এখন ক্রিকেটাঙ্গনে ওপেন সিক্রেট। বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপনও সন্তুষ্ট নন কোচের পারফরম্যান্সে। আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরে কোচকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে। অবশ্য এটাকে পরীক্ষা বলতে নারাজ ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খান।

তার ভাষ্য, ‘আমরা কোচদের মূল্যায়ন করবো শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর। ক্রিকেটারদের কেন্দ্রীয় চুক্তি এরপরই চূড়ান্ত করবো। এজন্য এ সিরিজটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সবার জন্যই।’ ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফ বিশেষ করে ডমিঙ্গোদের পারফরম্যান্স খুব কাছ থেকে দেখতে দ্বীপরাষ্ট্রে টিম লিডার হিসেবে পাঠানো হচ্ছে খালেদ মাহমুদ সুজনকে। টেকনিক্যাল দিক থেকে অন্য যে কারো থেকে তার চোখে সবকিছু ধরা পড়বে এমনটা বিশ্বাস করেন নীতিনির্ধারকরা। এজন্য তার কাঁধে ডমিঙ্গোর ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে।

দুদিন আগে খালেদ মাহমুদ কোচ ও ক্রিকেটারদের মধ্যে রসায়ন জমে উঠার তাগিদ দিলেন, ‘খেলবে খেলোয়াড়েরা, কোচরা নন। কোচ তো হাজার পরিকল্পনা দিতে পারেন। আপনি যদি মাঠে সেটা কাজে লাগাতে না পারেন, তাহলে পরিকল্পনা দিয়ে লাভ কী? আবার খেলোয়াড়েরা ভালো খেলছে কিন্তু পরিকল্পনা ভালো হচ্ছে না, তাহলেও হবে না।’

বিসিবির হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের (এইচপি) কোচ হিসেবে সাক্ষাৎকার দিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন এ দক্ষিণ আফ্রিকান। তার প্রোফাইলে উচ্ছ্বসিত হয়ে বিসিবি থেকে দেওয়া হয় জাতীয় দলের কোচ হবার প্রস্তাব। বেতন ধরা হয় মাসিক ১৫ হাজার ডলারের মতো। বাংলাদেশি টাকায় যা ১২ লাখ ৬৮ হাজার। গুঞ্জন রয়েছে, জাতীয় দলের কোচিং প্যানেল থেকে ছাঁটাই হলে তাকে এইচপি দলে পাঠানো হতে পারে।