শ্বাসরোধে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা, অভিযুক্ত মার্কিন পুলিশ বরখাস্ত

মানসিক ভারসাম্যহীন কৃষ্ণাঙ্গ যুবক ডেনিয়েল প্রুডকে বিবস্ত্র অবস্থায় আটকের পর মুখোশ পরিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের পর পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রচেস্টার নগর কর্তৃপক্ষ।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে হত্যার ঘটনায় মার্কিন পুলিশের সাতজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে রচেস্টারের মেয়র লাভলি ওয়ারেন বলেন, ডেনিয়েল প্রুড বর্ণবাদী আচরণের শিকার।

প্রসঙ্গত, মাটিতে ফেলে চেপে ধরে রাখার ফলে ৪১ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ যুবক চলতি বছরের মার্চের শেষের দিকে মারা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রচেস্টার পুলিশ তাকে হাতকড়া পরিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

কৃষ্ণাঙ্গ ডেনিয়েল প্রুড নিহত হওয়ার পর ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। গত বুধবার ডেনিয়েলের মৃত্যুর বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছে তার পরিবার।

আর গত বুধবারই একজন পুলিশের বডি ক্যামেরা ফুটেজে ধারণকৃত ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, ডেনিয়েলকে কিভাবে আটক করা হয়েছিল এবং তার পরের ঘটনাগুলো।

ভিডিওটি দেখে রচেস্টারের মেয়র পুলিশের ওপর বিরক্ত হয়ে বলেন, আমি কেবল তার পরিবারকে সহানুভূতি এবং সমানুভূতি জানাতে পারি।

ডেনিয়েল প্রুডের ভাই জোয়ে প্রুড মনে করেন, পুলিশ ঠান্ডা মাথায় আমার ভাইকে হত্যা করেছে। আমার ভাইকে নিকৃষ্ট প্রাণী হিসেবে গণ্য করেছে পুলিশ।

তিনি আরো বলেন, এসব বন্ধ হওয়াটা যে খুবই দরকার, সেটা বোঝার আগে আরো কতো ভাই মারা যাবে, কে জানে! আমি আমার ভাইকে সহায্যের জন্য ফোনকল করেছিলাম, তাকে শেষ করে দেওয়ার জন্য নয়।

জোয়ে প্রুড গত ২৩ মার্চ ৯১১ নম্বরে ভাইয়ের মানসিক অবস্থার কথা জানিয়ে সাহায্য চেয়েছিলেন। ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে তার ভাই বিবস্ত্র অবস্থায় রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিল।

ডেনিয়েল প্রুড ওইদিন তার ভাইয়ের বাড়ি থেকে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়েছিলেন। হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টেও দেখা যাচ্ছে, তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।

প্রুড বারবার পুলিশকে বলেছিলেন, তার ভাইকে যেন হত্যা না করা হয়। ভিডিওতেও দেখা যায়, প্রুড নিজের ভাইকে বাঁচানোর জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ, পুলিশের পাঁচজন সদস্য তার ভাইকে হাতকড়া পরিয়ে ঘিরে রেখেছে।

একপর্যায়ে ডেনিয়েল চিৎকার করে নিজেকে করোনা আক্রান্ত দাবি করে থুথু দিতে শুরু করে পুলিশ কর্মকর্তাদের গায়ে। এরপর একজন কর্মকর্তা তার মুখে মুখোশ পরিয়ে দেয়। তারপর মাটিতে ফেলে ঘাড়ে হাঁটু চেপে ধরে।

ডেনিয়েল বলেন, আপনি আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছেন। পুলিশ কর্মকর্তা মার্ক ভগন, ট্রয় টালাডে মিলে তাকে চেপে ধরে রাখেন। এরপর অ্যাম্বুলেন্সে করে ডেনিয়েলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ব্রেন ডেড হিসেবে রিপোর্ট আসে। এর সাতদিন পর ডেনিয়েল মারা যান।

নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেতিতিয়া জেমস এ ব্যাপারে তদন্ত করছেন। তিনি ডেনিয়েলের মৃত্যুকে ট্রাজেডি হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ