শোলাকিয়ায় নিহত জঙ্গী আবির রহমান, শাওন নামে থাকতো ঝিনাইদহে

শাহারিয়ার রহমান রকি:
গুলশান হামলায় নিহত জঙ্গী নিবরাস হোসেনের সঙ্গে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় নিহত আবির রহমানও প্রায় ১ মাস ঝিনাইদহের সোনালী পাড়ার ওই মেসটিতে ছিল। আবিরের ছবি দেখে সোনালী পাড়ার বাসিন্দারা তাকে শাওন বলে সনাক্ত করে। ওই মেসে থাকা আবির রহমান ওরফে শাওন নিজেকে নিবরাস হোসেন ওরফে সাঈদ এর খালাতো ভাই পরিচয় দিতো।
সোনালী পাড়ার মেস সংলগ্ন জামে মসজিদের মাঠে ফুটবল খেলায় অংশ নেওয়া একাধিক ছেলে জানান, নিবরাস হোসেন ওরফে সাঈদ ভাই যখন ফুটবল খেলতো তখন মাঠের ধারে আবির রহমান ওরফে শাওন চুপচাপ বসে থাকতো। কখনও কখনও সে ছোট ছেলেদের সঙ্গে টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট খেলতো।

 

এলাকার বিভিন্ন মেস ঘুরে জানা যায় মেসে থাকা অনেক ছাত্রই এবং তাদের অভিভাবকরা এ ধরনের সংবাদ জানার পর আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
ঝিনাইদহ শহরের সোনালী পাড়ার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য কওছার আলীর বাড়ীর আঙিনায় উচু দেওয়াল ঘেরা গাছ-পালা বেষ্টিত শুনশান নিরিবিলি পরিবেশে তৈরি ৪ রুম বিশিষ্ট মেস এলাকায় আজ সকালে গিয়ে দেখা যায় ওই এলাকায় জন-মানুষের নিস্তব্ধতা। বাড়িটির গেট ও জানালা দরজা সম্পূর্ণ বন্ধ।
ওই পাড়া ঘুরে বিভিন্ন মানুষকে জঙ্গিদের ছবি দেখালে কেসি কলেজে অধ্যায়নরত ছাত্র নরজামিন বর্ষন জানান, শোলাকিয়া হামলায় নিহত আবির রহমান কওছার আলীর মেসে থাকতো। সে শাওন পরিচয়ে ওই মেসে থাকতো বলেও সে জানায়। পার্শ্ববর্তী খেলার মাঠে বর্ষনদের সঙ্গে যখন নিবরাস হোসেন ওরফে সাঈদ ফুটবল খেলতো তখন শাওন মাঠের এক কোনে চুপচাপ বসে থাকতো। মাঝে মাঝে ছোটদের সাথে ক্রিকেট খেলতো। তার চালচলন ছিল পাগলাটে ধরনের। তাকে কিছু প্রশ্ন করা হলে নিবরাস হোসেন ওরফে সাঈদ আগেই কথা বলে জানাতো শাওন আমার খালাতো ভাই। শাওন কারোর সঙ্গে খুব একটা কথা বলতো না। এবং অধিকাংশ সময় মেসেই থাকতো।
ওই পাড়ার মাদ্রাসা ছাত্র শিশু তামিম জানান, ছবির আবির রহমানের নাম সে জানে না, তবে তাকে সে একাধিক দিন মসজিদ সংলগ্ন খেলার মাঠের ধারে কখনও বসে থাকতে আবার কখনও খেলা করতে দেখেছে।
কওছার আলীর মেসের রাধুনি ফাতেমা বেগম জানান, তিনি প্রতিদিন মেসটিতে যেতেন এবং রান্না করে দিয়ে আসতেন। প্রায়দিনই বেগুন, আলু ভর্তা, ডাউল ও ডিম রান্না করে দিয়ে তিনি চলে আসতেন। তিনি আরও জানান, স্থানীয় র‌্যাব ক্যাম্পে তাকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ছবির জঙ্গী কাউকে চেনে না বলে সে জানায়।
সোনালী পাড়া সহ ঝিনাইদহ শহর ও শহরতলিতে প্রায় দেড় শতাধিক ছোট-বড় মেস রয়েছে। এসব মেসে অধিকাংশ বাসিন্দা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র।
কওছার আলীর মেসের পাশের মন্টু মিয়ার টিনশেডের ভাঙ্গাচোরা মেসে গিয়ে একজন ছাত্রকে পাওয়া যায়। সে জানায়, তাদের মেসে ৮ জনের সীট থাকলেও ৪ জন মেস ছেড়ে চলে গিয়েছে।
পার্শ্বর্তী মোল্লা পাড়ার মোড় সংলগ্ন রহমান মঞ্জিলের অপরূপা নামে একটি মেসের বাসিন্দা রহমান ও হাসান জানান, তারা কলেজ ছাত্র। তারা মেসটিতে ১১জন ছাত্র থাকে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও মিডিয়ায় ঝিনাইদহের মেসগুলোতে জঙ্গি থাকে এমন সংবাদে তারা নিজেরা এবং তাদের অভিভাবকরা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছে।
এব্যাপারে ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, আমরাও এ ধরনের ঘটনা জানার পর সন্তান-সন্ততি নিয়ে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। তারা মেস মালিকদের খোঁজ-খবর নিয়ে মেস ভাড়া দেওয়ার জন্য বলেছেন, পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এসব মেসের ব্যাপারে তদারকি করার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ঢাকার গুলশানে নিহত ৫ জঙ্গির মধ্যে নিহত নিবরাস হোসেন ঝিনাইদহের সোনালী পাড়ার কওছার আলীর মেসে সাঈদ পরিচয় দিয়ে থাকতেন বলে গতকাল শুক্রবার ওই পাড়ার কলেজ ছাত্র বর্ষন ছবি দেখে শনাক্ত করেন এবং সে জানায় সাঈদ ভাই তাদের সঙ্গে ফুটবল খেলতো।
এব্যাপারে কথা বলার জন্য ঝিনাইদহে কর্মরত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের কার্যালয়ে বক্তব্য আনতে গেলে তিনি কারো সাথে দেখা করতে রাজি হননা। পরে তিনি অফিস ত্যাগ করার সময় সাংবাদিকরা ক্যামেরা ধরলে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে গাড়ীযোগে অফিস ত্যাগ করেন।
স/শ