শেষ বয়সেও রিকশায় শেষ অবলম্বন

স্মৃতি আক্তার:

যে বয়সে ঘরে বসে সময় কাটানোর কথা, সেই বয়সেই ভাবতে হচ্ছে পেটের খুদা নিবারণের কথা। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন নন্দনগাছীর বৃদ্ধ রিকশা চালক সিদ্দিকী রহমান। তা আজও ধরে রয়েছেন। ৬০ বছর বয়সে রিকশা চালিছে চলছে সিদ্দিকী রহমান।

এ বয়সেও রিকশা প্যাডেল মেরে জীবনের চাকাও ঘুরছে তার। চোখে মুখে ক্লান্তির ছোঁয়া, ঘামঝরা শরীরে শহরের অলিতে গলিতে রিকশা চালান তিনি। এ বৃদ্ধ বয়সেও রিকশা চালিয়ে জীবন সংগ্রাম অতিবায়িত করছেন।

সিদ্দিকী রহমান জানান, নন্দনগাছীতে বাড়ি। রাজশাহীতে রিকশা চালতে আসেন। ঢাকা বা অন্য জায়গায় রিকশা চালাতে গেলে অনেক দূর হবে। সেখানে নেই থাকার জায়গা। রাজশাহীতেও থাকার কোনো জায়গা না থাকলেও, রাজশাহী থেকে বাড়ি কাছে হয় ট্রেনে ১ঘন্টার রাস্তার। একদিন পর পর বাড়ি যায়। পথে ঘাটে এভাবে রাত্রি যাপন করেন।

তিন ছেলের জনক সিদ্দিকী রহমান। ঘরে বৃদ্ধ স্ত্রী। বাড়ির ভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই। দারিদ্রতার কবল ঘ্রাসে নিজে পড়ালেখা করেনি, তবে রিকশা চালিয়ে দারিদ্রতার মাঝে সন্তানদেরও পড়ালেখা করিয়েছে। বড় ও মেজো ছেলে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে ইন্টার পাশ, ছোট ছেলে বিএ পাশ করে এখনও চাকরি পাইনি। এর পর তাকেই সংসারের হাল ধরে থাকতে হয়। ছেলেরাও কখনও নিষেধ করেনা রিকশা চালাতে।

তিনি জানান, আমার রিকশা কেনার টাকা নাই এভাবেই আমি এই রিকশা চালিয়েই দিন পার করি। ইঞ্জিন চালিত রিকশার জমাও দিতে হয় বেশি। এই রিকশার জমা কম। তারপর কেউ বিশ্বাস করে রিকশা দিতেও চাইনা কারণ আমি রাজশাহীর স্থানীও না বলে। এই রিকশার মালিক আমাকে ভাড়া দিয়েছে এমন ভাঙ্গা রিকশা বলেই। অন্য রিকশা ওয়ালারা তো নিতেও চাইনা। তাই আমাকে দেয়।

এখন আর পায়ে চাপা রিকশা চলে না। সবাই ইঞ্জিন লাগানো রিকশা চালায়। যাত্রীরাও ওইগুলো পছন্দ করে। অনেকে ডাক দিয়েও রিকশায় উঠেনা। একের তো ভাঙ্গা রিকশা তারপর ইঞ্জিন চালিত না। আবার অনেকেই করুনা করে উঠে ভাড়া বেশি দেয়। গাড়ির জমা বেশি দিতে হয় না। প্রতিদিন জমা ৪০ টাকা দিতে হয়। আয় হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। জমা দিয়ে যা থাকে এখানে খায়, আর একদিন পর বাড়িতে নিয়ে যায়। নিজেরতো রিকশা নাই রে মা আমি এটাতেই সন্তুষ্ট।

তিনি আরও জানান, মাঝে মাঝে দিনমজুরের কাজ করতাম। বয়স তো কম হয়নি এখন আর পারিনা। তাছাড়া কেও আর দিনমজুরের কাজে নেই না। শরীর আর আগের মতো ঠিক নেই। তবুও হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে রিকশা বাইতে হচ্ছে জীবনের ঘানি টানতে। বৃদ্ধ বয়সে রিকশা টানার দৃশ্য দেখে শহরের পথেঘাটে চলাচলরত পথচারীরাও আফসোস করে অনেকেই। এখনও অনাহারে অর্ধাহারে দিন চলে। সরকারি কোনো সহায়তাও পাচ্ছি না। করোনার সময় কোন সহয়তা পাইনি। দিনকাল কত যে কস্টের যাছিলো রাজশাহীতে আসতেও পারছিলাম না। এখন আবারও রিকশা চালানো শুরু। এভাবেই চলছে আমার জীবন।

স/আ২