শুরুতেই আমের ভালো দামে খুশি রাজশাহীর চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চলতি বছরে রাজশাহীতে আমপাড়া শুরু হয়েছে গতকাল শুক্রবার থেকে। যদিও কদিন আগ থেবেই বিভিন্ন আচার কম্পানী বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে চলেছিলেন। তবে গতকাল থেকে বাজার থেকেও তারা আম সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন। কারণ গতকাল থেকেই প্রশাসনের বেধে দেওয়া সময় অনুযায়ী রাজশাহীতে আনুষ্ঠাকিভাবে আমপাড়া শুরু হয়। এবার শুরুতেই আমার ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। গতকাল রাজশাহীর সর্ববৃহৎ আমের বাজারে প্রতি মণ বিভিন্ন প্রকার গুটি (আঠি) জাতের আম বিক্রি হয়েছে ১২-১৮শ টাকা মণ দরে। যা গতবার শুরুর দিকে ছিল ৮শ থেকে এক হাজার টাকা মণ।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় রাজশাহীতে এবার আমের উৎপাদন কম হবে।

এবার রাজশাহীর আমবাগানগুলোর গাছে মুকুল কম আসায় এবং খরায় মুকুল ও আমের কুড়ি ঝরে পড়ায় উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। তবে গত বছর আমের উৎপাদন বেশি হলেও করোনা মহামারী ও রমজান মাসের কারণে আমচাষিরা তেমন দাম পাননি। এবার দুটিই নাই। ফলে আমের বাজারও শুরুতেই ভালো পাচ্ছেন চাষিরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছরের তুলনায় গত বছর কম জমিতে (১৭ হাজার ৯ শত ৪৩ হেক্টর) আমের চাষ হয়েছিল। তার পরেও গত বছর আমের ফলন ভালো থাকায় উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ১৭ হাজার ১২৮.২৪ মেট্রিকটন আম। এবার চলতি মৌসুমে তুলনামূলক বেশি জমিতে আমের চাষ হলেও উৎপাদন কম হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬.২৪ মেট্রিকটন। এবার কেজিতে দুই টাকা দাম বাড়িয়ে প্রতিকেজি আমের গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ টাকা। সেই অনুযায়ী চলতি মৌসুমে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের ব্যবসা হবে বলে দাবি করছে কৃষি বিভাগ।

চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর কৃষি বিভাগ গড়ে ৪০ টাকা কেজি দরে আম কেনা-বেচা নির্ধারণ করায় ৮০৬ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকার আমের ব্যবসা হয়েছে বলে মনা করা হয়। তবে গত বছর শেষের দিকে আমের দাম একটু ভালো পাওয়া গেছে। তবে অধিকাংশ আমই বিক্রি হয়েছে ৮শ থেকে ১৫শ টাকার মধ্যে। ফলে গত বছর দামের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। কিন্তু এবার আমের দাম ভালো পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা।

রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে আম বিক্রি কতে যওয়া দুর্গাপুরের চাষি বাদল হাওলাদার বলেন, ‘এবার আঁচার কম্পানীও শুরু থেকেই আম কিনতে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু গত বছর এটি ছিল না। এর ওপর গতবার প্রচুর আম ছিল গাছে গাছে। কিন্তু গত বছর আমের ভরা মৌসুমে রমজান মাস থাকায় আম কেনার মতো তেমন লোক ছিল না। ফলে দাম অনেক কম ছিল। এবার শুরু থেকেই আমের চাহিদা বেশি। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এবার কোনো আমই ১২ শ টাকার নিচে আজ বিক্রি হচ্ছে না। কিন্তু গত বছর গোপাল ভোগ আমও শুরুতে বিক্রি করতে হয়েছে ৮শ থেকে এক হাজার টাকা মণ দরে। কোনো কোনো দিন আম নিয়ে বাড়িতে ঘুরে যেতেও হয়েছে।’

পুঠিয়ার শিবপুর এলাকার আরেক চাষি মঞ্জুর হাসান বলেন, ‘এবার আঠি আমই বিক্রি হচ্ছে ১২-১৮শ টাকা মণ। এবার আমের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। কারণ আমের উৎপাদন কম। চাহিদাও আছে বেশি। আশা করছি গতবারের ক্ষতি এবার পুশিয়ে নিতে পারব।’

ঢাকার আম ব্যবসায়ী আলী আহসান বলেন, ‘এবার আমের দাম শুরু থেকেই ভালো আছে। এবার আমের আগ্রহ আছে ক্রেতাদের মাঝে। এ কারণে দাম শুরুতেই ভালো আছে। এবার দাম কমার সম্ভাবনা কম।’

এদিকে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শরিফুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় রাজশাহীতে আম নামানোর সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী শুক্রবার থেকে গুটিজাতের আম নামানো শুরু হয়েছে। এছাড়া ভোপালভোগ ২০ মে, লক্ষণভোগ, ২৫ মে, রাণী পছন্দ ২৫ মে, হিমসাগর ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন, আশ্বিনা ও বারি ফোর ১০ জুলাই, গৌড়মতি ১৫ জুলাই এবং ইলামতি জাতের আম ২০ আগস্ট নামানোর তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

বেধে দেয়া তারিখের আগে কোনো আমচাষি আম নামালে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শরিফুল হক। তিনি বলেন, গত কয়েখ বছরের মতো এবারও ফরমালিনমুক্ত আম যাতে বাজারজাত নিশ্চিত করা যায় সেজন্য জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান টিম সব সময় মনিটরিং করছে। এছাড়াও অপরিপক্ক আমা যেন কেউ পাড়তে না পারে, সেটিও মনিটরিং করা হচ্চে।’

স/আর