রাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন

শীর্ষপদের নেতাদের বিরুদ্ধে ‘অছাত্র, ড্রপ আউট, চাঁদাবাজি, মাদককারবারি’র অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগ শাখার কেন্দ্রীয় সম্মেলন ১২ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সভাপতি-সম্পাদক পদে সিভি জমা দিয়েছে ৯৪ জন প্রার্থী। তবে শীর্ষ এই দুইপদে আসার দৌঁড়ে আলোচনায় আছেন প্রায় এক ডজন নেতা। যাদের মধ্যে রয়েছে অছাত্র, ড্রপ আউট,  চাঁদাবাজ ও তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা। তবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চাওয়া, গুরুত্বপূর্ণ এই শাখার শীর্ষ দুই পদে নিয়মিত ছাত্র, সৎ, যোগ্য, সাংগঠনিক ও ক্লিন ইমেজধারীরা নেতৃত্বে আসুক।

জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর প্রেস রিলিজের মাধ্যমে রাবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির জন্য জীবনবৃত্তান্তের আহ্বান করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। প্রায় সপ্তাহ না যেতেই আরেক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে ১২ই নভেম্বর রাবি শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় কমিটি।   নভেম্বরের ৫ তারিখ পর্যন্ত  ছিল পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার শেষ সময়। ৯৩ জন প্রার্থী সিভি জমা দেয়।

সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে আলোচনায় আছেন  বিতর্কিত নেতা মেহেদী হাসান মিশু। ২০১৬ সালে হওয়া রাবি ছাত্রলীগের ২৫ তম সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে সিট বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী বিভিন্ন হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মাধ্যমে হলে হলে টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থী উঠান তিনি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলে এক শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে  চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠে। এসব ঘটনায় খবর প্রকাশিত হলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এবারের  ২৬তম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন তিনি। জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ করা তথ্যানুযায়ী মেহেদী হাসান মিশু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ ৬ শিক্ষাবর্ষের মধ্যে সম্মান শেষ করতে হয়। সে হিসেবে ২০২২ সালে ৮ বছর পেরিয়ে গেছে তার সম্মান শেষ করার সময়সীমা। তবে বিভাগ সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের নিয়মানুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অনার্স শেষ করতে না পারায় বিভাগ থেকে ড্রপ-আউট হয়েছেন তিনি। সে হিসেবে তার সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক।

আসন্ন সম্মেলনে সভাপতি পদের দৌঁড়ে বেশ আলোচনায় আছেন  বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা তন্ময়। সে ফোকলোর বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী । ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইয়াবাসহ অবৈধ মাদক সরবরাহে জড়িত তালিকায় তার নাম আসে। এছাড়া, চলতি শিক্ষাবর্ষে রাবি’র ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতির ঘটনায়ও তার নাম আসে। যার প্রেক্ষিতে রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সম্প্রতি সম্মেলনে সিভি জমা দেওয়ার একদিন আগে তন্ময়ের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

পরবর্তীতে তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পদের জন্য সিভি জমা দেন। ক্যাম্পাসে প্রচার আছে, তন্ময় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার পারিবারিক এক আত্মীয়ের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে তার মাধ্যমে লবিং করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেন তিনি। এবার সেই ব্যাক্তির মাধ্যমে শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদটি ভাগিয়ে নিতে দৌড়ঝাঁপ করছেন বিতর্কিত এই ছাত্রলীগ নেতা।

এছাড়াও শীর্ষ এই দুইটি পদের একটি পেতে বিভিন্ন স্থানে লবিং ও দৌড়ঝাঁপ করছে ড্রপ আউট ছাত্রনেতা শাখা ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব।

আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে গালিব বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু পরবর্তীতে টানা তিনবছর প্রথম বর্ষ অতিক্রম করতে না পারায় ড্রপ আউট হয়ে যান তিনি। তবে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য দেওয়া জীবনবৃত্তান্তে তিনি এসএসসি, এইচএসসি সেশন উল্লেখ করেন।

ড্রপ আউটের বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেদী হাসান মিশু বলেন, আমার ছাত্রত্ব নেই বিষয়টি সঠিক নয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে একটু রেজাল্ট খারাপ করি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী কর্তৃপক্ষ ছাত্রত্ব রাখার নিয়ম আছে। আমি বিভাগে এবিষয়ে আবেদন করেছি। এবিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং রাজশাহীর অভিভাবকরা অবগত আছেন। সিভিতে তিনি বর্তমানে  শিক্ষাগত যোগ্যতা সমাজবিজ্ঞানে পড়ছেন তা উল্লেখ করছেন কিনা এমন প্রশ্ন জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে আসাদুল্লা হিল গালিব বলেন,  আমার ছাত্রত্ব আছে। বর্তমানে আমি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। ছাত্রত্ব বজায় রাখতে আমার যা করার আমি সব করেছি। আমার সিভিতেও শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া আছে। প্রয়োজনে আপনারা বিভাগের শিক্ষকদের কাছে খোঁজ নিতে পারেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অনার্সে ড্রপ আউটের বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

অন্যদিকে আরেক অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে একাধিকবার ফোন দিলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সম্মেলন বিতর্কিত প্রার্থীদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। যারা সংগঠনের জন্য নিবেদিত প্রাণ এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে যারা কাজ করবে তারাই নেতৃত্বে আসবে। বিতর্কিত, অছাত্র ও ড্রপ আউটরা কোনো ভাবেই নেতৃত্বে আসতে পারবে না সে বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সজাগ।

জি/আর