শীত বাড়ছে, বাড়ছে রামেক হাসপাতালে পোড়া রোগীদের ভীড়

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীতে শীত বাড়ার সঙ্গে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দিন দিন বেড়েই চলেছে আগুনে দগ্ধ রোগীর সংখ্যা। আগুনে পুড়ে গত দুই মাসেই ২২১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে। আর ২০১৪ সালে চালুর পর থেকে প্রায় ২০ হাজারের অধিক দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সচেতনতার অভাবে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ২৪ বেড রয়েছে। চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪০ জন রোগী। তাদের চিকিৎসা দিতে ২ জন সিনিয়র স্পেশালিস্ট চিকিৎসক ও ৩ জন জুনিয়র চিকিৎসক রয়েছেন। যা আগুনে দগ্ধ রোগীর তুলনায় অতি নগন্য।


রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের (২০২২) নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে আগুনে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২১ জন। এরমধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৫ জনের মধ্যে ২টি শিশু এবং বয়স্ক ৩ জন রয়েছেন। সুস্থ আছেন ২১৬ জন। তাদের মধ্যে ২৫ জনকে বর্তমানে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকি ১৯১ জনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এখনো কেউ কেউ পোড়ার ক্ষত নিয়ে যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন। হাসপাতালে আসা এসব রোগীরা বিভাগের বিভিন্ন জেলার জেলা। এছাড়াও রংপুর-দিনাজপুর থেকেও দগ্ধ রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন।
পোড়া রোগী এবং অভিভাবকদের চুলার আগুন, আগুন পোহানো, গ্যাসের চুলা, গরম পানি, ইলেক্ট্রিক জগ, রাইচ কুকার, পেশার কুকার, ইস্ত্রিতে বেশিরভাগ দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। তাদের অধিকাংশকে হাসপাতালে আনার আগে কোনো প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। তাদের মধ্যে গরিব, নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির রোগীর সংখ্যা বেশি। তবে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নেওয়া অশিক্ষিত ও শিক্ষিত লোকের প্রায় সমান বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

রামেক হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা বলছেন, আগুনে দগ্ধ হওয়া থেকে বাঁচতে বাড়িতে কিংবা কর্মক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখা রাখা, বাচ্চাদেরকে চুলা থেকে দুরে রাখা, বাচ্চা এবং বয়স্কদের আগুন পোহাতে না দেওয়া, জর্জিট কাপড় পরিধান না করা, গ্যাসের চুলা ব্যবহার করতে জানালা দরজা খুলে দেওয়া, গরম পানিতে সাবধানে নিয়ে যাওয়া ও বালতিতে করে পরিবহন করা, রাইচ কুকার, পেসার কুকারসহ ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি সাবধানে ব্যবহার করা করা উচিত।
সার্বিক বিষয়ে রামেক হাসপাতালের হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক মোছা. আফরোজা নাজনিন কালের কণ্ঠকে বলেন, সচেতনতার অভাবে হাসপাতালে দিনদিন আগুনে পোড়া রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন শীত বাড়ছে, রোগীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। এর কারণ হলো, অনেকেই আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হচ্ছে। আবার কেউ পানি গরম করতে গিয়ে দগ্ধ হচ্ছে। কেউ রান্নার কাজ করতে গিয়ে আগুনের তাপ টের না পেয়েও হঠাৎ দগ্ধ হচ্ছে। এভাবে শীতের মধ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। শীত যত বাড়ে আগুনে পোড়া রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে-যোগ করেন ওই চিকিৎসক।

তিনি আরও বলেন, ‘দগ্ধের পর রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা তো দুরের কথা উল্টো বিভিন্ন কুসংস্কারের প্রভাবে ভুল চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পোড়া স্থানে তেল, হলুদের গুড়া, টুথপেস্ট, ডিম, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের বস্তু লাগানো রোগীও পেয়েছি অনেক।’
সহযোগী অধ্যাপক মোছা. আফরোজা নাজনিন বলেন, সমপ্রতি রুয়েটের এক ছাত্রীর প্রদীপের আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। আমাদের অ্যাকাডেমিক বইগুলোতে আগুনে দগ্ধ ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসা ও করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকা উচিত। সচেতনতা শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব ধরনের লোকের প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী রামেক হাসপাতালসহ ৫টি সরকারি হাসপাতালে ১০০টি বেডের পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট চালুর প্রকল্প হাতে নিয়েছে। খুব দ্রুত আমাদের হাসপাতালের এই ইউনিটে ১০০ টি বেড সংযুক্ত করা হবে। তবে বেডসংখ্যা বাড়ানোর থেকে সচেতনতা বাড়ানো বেশি জরুরি তিনি মনে করেন।