শিবির সন্দেহে ঢাবিতে শিক্ষার্থী নির্যাতন, প্রতিবাদে মশাল মিছিল

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে শিবির সন্দেহে এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের ‘রাতভর’ নির্যাতনের প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।

এ সময় সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা নির্যাতনে জড়িতদের এক সপ্তাহের মধ্যে বিচার ও গেস্ট রুমে নির্যাতনবিরোধী আইন পাশের দাবি জানান। অন্যথায় শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন। গেস্ট রুমে নির্যাতন, বন্ধ করো করতে হবে; ছাত্রলীগের নির্যাতন, বন্ধ করো করতে হবে; ছাত্রলীগের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও; শিক্ষা, ছাত্রলীগ একসাথে চলে না ইত্যাদি স্লোগান দেন নেতা-কর্মীরা।

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের এক ছাত্রকে নির্যাতন করা হয়েছে। এভাবে প্রতিনিয়ত প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে, গণরুম, গেস্টরুমে শত শত শিক্ষার্থীকে নির্যাতন ও নিপীড়ন করা হচ্ছে। কখনও কখনও কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে আসে; আমরা সেগুলোর প্রতিবাদ করি। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এই বাংলাদেশে প্রতিটি নাগরিকের প্রতিবাদ ও সভা-সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে।

এর আগে গত ২২ জানুয়ারি শিবির সন্দেহে শাহরিয়াদ মিয়া ঐ শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় হল প্রশাসনের মাধ্যমে ভুক্তভোগী শাহরিয়াদকে প্রক্টরের কাছে সোপর্দ করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিবিরের সাথে কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা না পেয়ে শাহরিয়াদকে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে সোমবার রাত এগারোটায় ঢাবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শাহরিয়াদ।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শাহরিয়াদ বলেন, আমাকে রবিবার ডেকে নিয়ে ফোন চেক করে বলে আমি শিবির করি। তারপর আমাকে আমার ধরে পদ্মা ব্লকের ৪০০৮ নং কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে মাজেদ রহমান পাইপ দিয়ে আমাকে জোরে আঘাত করে। এরপর ইউসুফ তুহিন চড় থাপ্পড় দেয়। তারপর সাকিবুল সুজন এসে আমার উরুতে পাইপ দিয়ে চার-পাঁচটা বাড়ি দেয়। এরপর সাংবাদিকরা আসলে আলোচনার মাধ্যমে হল থেকে করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পরে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত হল থেকে বের হতে নিষেধ করে। রাতভর আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।

তিনি আরো বলেন, তারপর সকালে হইলে আমাকে আবার চড় থাপ্পড় দেওয়া শুরু করে। তারপর কান টেনে, ঘাড় চাপে। একজন চুল টানে, কান টানে। এরপর আমার মাকে ফোন করে ভিডিও কল দেয় এবং বলে তুই স্বীকার কর নইলে তোর মারে ফোন দিয়ে তোরে মারমু যেন তোর মা স্ট্রোক করে। এরপর একই সময়ে মাহমুদকে পাশে চড়, থাপ্পড়, ঘুষি দিয়ে মারতে থাকে। তারপর আমাকে বেল্ট দিয়ে মারে। তারপর ব্রাজিলের পতাকা ছিল বারান্দায় বাঁশে লাগানো। সেটা খুলেও মারে।

নির্যাতনের সাথে জড়িত অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন ঢাবি ছাত্রলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক আবু হাসান সাইদ, হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. ফয়সাল মিয়া, হল যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ফয়সাল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাজেদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহনেওয়াজ বাবু, শাকিরুল ইসলাম সাকিব, গণ যোগাযোগ উপ-সম্পাদক শাকিবুল ইসলাম সুজন, সাহিত্য সম্পাদক ইউসুফ তুহিন, প্রশিক্ষণ সম্পাদক বায়েজিদ বোস্তামী, মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক পিয়ার হাসান সাকিবসহ আরো বেশ কয়য়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী।এদের মধ্যে শাকিবুল ইসলাম সুজন, মাজেদুর রহমান ও ইউসুফ তুহিন ভুক্তভোগী শাহরিয়াদকে সবচেয়ে বেশি মারধর করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন।

এদের মধ্যে শাকিবুল ইসলাম সুজন, মাজেদুর রহমান ও ইউসুফ তুহিন ভুক্তভোগী শাহরিয়াদকে সবচেয়ে বেশি মারধর করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন।

সূত্র: কালের কণ্ঠ