রবিবার , ৩ জুলাই ২০১৬ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

শিবগঞ্জে ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

Paris
জুলাই ৩, ২০১৬ ১০:০৫ অপরাহ্ণ

কামাল হোসেন, শিবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দু:স্থদের মাঝে ভিজিএফের চাউল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে শুধু ওজনে কম দেয়ার মাধ্যমে প্রায় ১২৩.৬৭৫ মেট্রিক টন চাউল আত্মসাৎ করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য সাড়ে ২৯ লাখ টাকা।

 

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকার সারা দেশের ন্যায় উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে ৪১ হাজার ২শ’ ৫৫ জন দু:স্থ ও অসহায় মানুষের জন্য ৮শ’ ২৫ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেয়। যা মাথাপিছু ২০ কেজি করে চাউল পাবার কথা। কিন্তু চাউল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি লক্ষ্য করা গেছে।  প্রতিটি ইউনিয়নেই দু:স্থদের মাঝে ২০ কেজির স্থলে নিম্নে ১৬ কেজি ও উদ্ধে ১৮ কেজি করে চাউল বিতরণ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

বিভিন্ন ইউনিয়নে সরজমিনে ঘুরে দু:স্থদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাউল বিতরণে কোন দাঁড়িপাল্লা বা ওজনের ডিজিটাল মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে না। ওজনের ক্ষেত্রে এক ধরণের বালতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে বালতিতে ১০ কেজি করে চাউল ওজন করা যায়। কিন্তু বাস্তবে ওই বালতিতে সম্পূর্ণ ভর্তি করলে ৯ কেজি চাউল ধরবে। তবে বেশির ভাগই সম্পূর্ণ ভর্তি করা হচ্ছে না বলে দরিদ্ররা জানিয়েছেন। মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর গ্রামের আফসার জানান, একটি কার্ডে ১৬ কেজি চাউল পেয়েছি। খড়িয়াল গ্রামের টিয়া আলী একটি কার্ডে ১৮ কেজি চাউল পেয়েছে বলে জানান। চককীর্তি ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দু:স্থরা জানায়, তাদের ইউনিয়নে ১৭ কেজি করে চাউল দেয়া হয়েছে।

 

একই ধরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে দূর্লভপুর, শ্যামপুর, বিনোদপুর, ছত্রাজিতপুর, উজিরপুর, পাঁকা, ধাইনগর, ঘোড়াপাখিয়া, দাইপুকুরিয়া, শাহাবাজপুর, মোবারকপুর, নয়ালাভাঙ্গা ও কানসাট থেকেও একই ধরণের অভিযোগ। তবে হঠাৎ করে সাংবাদিক দেখে কোন কোন ইউনিয়নে ১৬ কেজির স্থলে ১৮ কেজি করে চাউল বিতরণ করতে দেখা গেছে। ভিজিএফ চাউল বিতরণে সবচেয়ে বড় ধরণের দূর্নীতি হচ্ছে কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রে। এখানে কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা করা হচেছ না। নিয়ম অনুযায়ী দু:স্থদের নামের তালিকা করে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে কার্ড বাড়ি বাড়ি পৌঁছা দেয়া হয়। কিন্তু তা না করে চেয়ারম্যান, মেম্বারগণ তাদের পছন্দনীয় ব্যক্তিদের হাতে ৫ থেকে শুরু করে ১০, ২০, ৩০ এমনকি কাউকে কাউকে ৫০টি পর্যন্ত কার্ড দেয়া হয়েছে। তারা এ সমস্ত কার্ডের চাউল সম্পূর্ণ নিজেরাই আত্মসাৎ করছে একটি সূত্র জানিয়েছে। সরজমিনে দেখা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান বসে থেকে চাউল বিতরণ করলেও অনেক কার্ডধারী ব্যক্তির কাছে ১০ বা ২০টি কার্ড। তারা সে মোতাবেক চাউল উত্তোলন করছে।

 

এ ব্যাপারে রানীনগরের জুরান বলে, ভোট দিয়ে মেম্বার নির্বাচিত করি, আর সমস্ত সুবিধা ভোগ করছে মাত্র কয়েকজন লোক। কোন কোন ক্ষেত্রে ভিজিএফের চাউল খোলা বাজারে বিক্রি হচেছ বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান। অন্যদিকে দলীয় কার্ডারাও দলীয় ভিত্তিতে পাওয়া কার্ডগুলো তাদের পছন্দনীয় ব্যক্তিদের মাঝে বিতরণ করছে এবং কেউ কেউ চাল উত্তোলন করে খোলা বাজারে বিক্রি করে দিচেছ বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রকৃত দু:স্থরা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচেছ।

 

উল্লেখ্য, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, শিবগঞ্জে মোট ৪১ হাজার ২৫০ জনের মধ্যে ৮২৫ মেট্রিক চাউলের মধ্যে শাহাবাজপুর ইউনিয়নে ৪০৫৪ মধ্যে ৮১.৮মেট্রিক টন, দাইপুকুরিয়া ইউনিয়নে ৩০৪৬ মধ্যে প্রায় ৬১মেট্রিক টন, মোবারকপুর ইউনিয়নে ২৩৬৭জনের মধ্যে  ৪৬.১৪০মেট্রিক টন, চককীর্তি ইউনিয়নে ২৮২২জনের মধ্যে সাড়ে ৫৬মেট্রিক টন, কানসাট ইউনিয়নে ৩০৪৮জনের মধ্যে প্রায় ৬২মেট্রিক টন, শ্যামপুর ইউনিয়নে ৩১১১জনের মধ্যে ৬২.২২০ মেট্রিক টন, বিনোদপুর ইউনিয়নে ৩১৬৩জনের মধ্যে ৬৩.২৪০মেট্রিক টন, মনাকষা ইউনিয়নে ৪০৫১জনের মধ্যে সাড়ে ৮১মেট্রিক টন, দূর্লভপুর ইউনিয়নে ৪২১৩ জনের মধ্যে ৮৪.২৬০মেট্রিক টন, উজিরপুর ইউনিয়নে ৭৩৫ জনের মধ্যে ১৪.৭০০ মেট্রিক টন, পাঁকা ইউনিয়নে ১৬১২ জনের মধ্যে ৩৩.২৪০ মেট্রিক টন, ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নে ১২৮৮জনের মধ্যে ২৫.৭৭৭ মেট্রিক টন, ধাইনগর ইউনিয়নে ২৯৮৬ জনের মধ্যে ৫৯.৭২০ মেট্রিক টন, নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নে ৩২১২ জনের মধ্যে ৬৪.২৪০মেট্রিক টন ও ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নে ১৫৫৭ জনের মধ্যে ৩১.১৪০ মেট্রিক টন চাউল রবাদ্দ দেয়া হয়েছে।

 

চাউল বিতরণের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে মনাকষা ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন, দূর্লভপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু আহমেদ নজমুল কবির মুক্তা, বিনোদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোহবুল হকসহ আরো কয়েকজন চেয়ারম্যন জানান, চাউল আনতে গাড়ী ভাড়া ও গোডাউন থেকে চাউল বের করার সময় কিছু চাউল পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাই  সামান্য কিছু কমিয়ে গড়ে ১৯ কেজি করে  চাউল  বিতরণ করা হয়েছে।

স/মি

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর