এনজিও’র দুই কর্মকর্তা ৯দিন থেকে অবরুদ্ধ

শিবগঞ্জে গ্রাহকের ৪ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা যমুনার পরিচালক

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
গ্রাহকের প্রায় চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে স্থানীয় একটি এনজিও’র দুই কর্মকর্তাকে ৯দিন যাবত অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ওই এনজিও’র গ্রাহকরা। ঘটনাটি ঘটেছে স্থানীয় এনজিও যমুনা মানবিক উন্নয়ন সংস্থার শাখা কার্যালয় শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নের চাতরা নতুন বাজারে।

তবে গ্রাহকরা বলছেন তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি। বরং আমাদের টাকা ফেরত না দেয়ার কৌশল হিসাবে তারা নিজেরাই অফিসে থাকছেন। কোন পক্ষই থানায় বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কোন লিখিত অভিযোগ না করায় প্রশাসন আইনী ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলে জানান স্থানীয় প্রশাসন।

সরেজমিনে অবরুদ্ধ এরিয়া ম্যানেজার কবির আলী ও হিসাব রক্ষক সেলিম রেজার সাথে কথা বলে জানা গেছে, যমুন এনজিও’র চাতরা শাখায় প্রায় পাঁচশ গ্রাহক রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ২’শ জন এফ.ডি.আর গ্রাহক। তাদের টাকার সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি টাকা। ২৪ শতাংশ লাভ দিতে চেয়ে বিভিন্ন মেয়াদে টাকা নেয়া হয়েছে গ্রাহকদের কাছ থেকে। বাকী প্রায় ৩’শ জন সাধারণ গ্রাহক। তারা বলেন, তাদের পরিচালক মো. মঈন আলী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাতে এ শাখার প্রায় ৩কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন। প্রায় ৬ মাস থেকে যোাগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছেন। বাকী টাকা মাঠে ঋণ হিসাবে দেয়া আছে। করোনার কারণে ঋণের কিস্তি আদায় হয়নি।
কবির ও সেলিম আরো জানান, পরিচালক এ শাখার টাকা দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে জমি, বাড়ি ও মার্কেট কেনে তার স্ত্রীর নামে রেজিস্ট্রি করেছেন বলে আমরা গোপন সূত্রে জানতে পেরেছি। করোনাকালে আমাদের বেতন ঠিকমত দেয়নি পরিচালক। বরং নানাভাবে হয়রানী করেছে। গত ১০ অক্টোবর মঈন আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন আর ফোন ধরেন না। তাদের দাবী প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টির মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা ফেরতের ব্যবস্থার মাধ্যমে মুক্তি পেতে চাই।

অন্যদিকে, গ্রাহকরা বলছে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি। গ্রাহকের টাকা ফেরত দিবে না বলে গোপনে পরিচালক মঈন আলীর সাথে যোগাযোগ করে তারা নিজেরাই অফিসের থেকে সময় ক্ষেপণ করছে। চাতরা এলাকার হাজেরা বেগম বলেন, আমি বিধবা মহিলা। লাভের আশায় আট লাখ টাকার এফ.ডি.আর করেছিলাম। লাভতো দূরের কথা পুঁজিটা পাচ্ছি না। অতি কষ্টে দিনাদিপাত করছি। একই কথা বললেন এলাকার বাসরী বেগম। তিনিও ২লাখ টাকার এফ.ডি.আর করেছিলেন। অনেক দিন থেকে হয়রানীর শিকার হচ্ছি। শুধু তারাই নয় এধরনের শতাধিক নারী-পুরুষ অফিসের বাইরে অবস্থানকারী একই ধরনের অভিযোগ করেন।

এলাকার বিশিষ্ট সমাজ সেবক হারুন অর রশিদ পাভেল মিঞা জানান, এ শাখায় ২২জন ভিক্ষুক, ৫০জন ভ্যানওয়ালা ও এক’শ জন বিধবা ও শতাধিক কামলা-দিনমুজুরের টাকা জমা দিয়ে কান্নায় বুক ভাসাচ্ছে। কোন প্রতিকার পাই না। তিনি আরো বলেন তারা কৌশল করেই অফিসে থেকে জনগণকে দোষারোপ করছে। তিনি আরো বলেন পরিচালকের সাথে তাদের যোগাযোগ ঠিকই আছে।

এ ব্যাপারে পরিচালক মঈন আলীর সামাজিক ম্যাধ্যম ফেইসবুকের ম্যাসেঞ্জারে মিডিয়ার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার টাকা আমি দিব। মিডিয়ার এতো মাথা ব্যাথা কেন? তবে টাকা আত্মসাতের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেনি।
এব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা এনজিও ফোরামের সভাপতি তোহিদুল আলম টিয়া বলেন, ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও যমুনা এনজিওর পরিচালক মঈন আলীর জন্য এটি একটি দূর্ঘটনা। বৃহত্তর জনস্বার্থে আমরা শীঘ্রই এনজিও ফোরামের সভা ডেকে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহনের চেষ্টা করবো।

শিবগঞ্জ থানার অফিসার মো. ইনচার্জ ফরিদ হোসেন বলেন, আমাদের কাছে কোন পক্ষই কোন অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো। তিনি আরো বলেন, ঘটনাটি অবরুদ্ধ নয়।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস বলেন, শুধু সমাজ সেবা থেইে অনুমোদন নেয়নি। তারা যুব উন্নয়ন ও মহিলা বিষয়ক দপ্তর থেকেও অনুমোদন নিয়েছে। তিনি বলেন গ্রাহকদের সচেতন না হওয়ায় এ ঘটনার মূল কারণ। অভিযোগ পেলেই সঠিক তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় যোগযোগ করা সম্ভব হয়নি।

জেএ/এফ