নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর-তর্ত্তিপুর ষষ্মানঘাটে মরাপাগলা নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে৷ নিম্নমানের নির্মাণসাগ্রী ব্যবহার করে চলছে ব্রীজ ও নদীর দুই পাড়ে বাঁধ দেয়ার কাজে ব্যবহারের জন্য ব্লকের নির্মাণ কাজ।
ব্রীজে পাতলা রড ব্যবহার, পারস্পরিক রডের অধিক দুরত্ব, ব্লক তৈরিতে নিম্নমানের বালু, অপরিস্কার পাথর, ব্লক তৈরিতে অর্ধেক সিমেন্ট ও সঠিক অনুপাত না দিয়ে ব্লক তৈরির কাজ করার অভিযোগ স্থানীয়দের।
এর সত্যতা মিলেছে সরেজমিনে গিয়ে। দেখা যায়, ব্রীজের দুই ধারে ও নদীর পাড়ে বসানোর জন্য পশ্চিম প্রান্তে চলছে ব্লক তৈরির কাজ। প্রকৌশলীদের মতে, এই কাজের জন্য পাথর, বালু ও সিমেন্টের আদর্শ মান ৬:৩:১ অনুপাত। সেখানে ৮:৪:১ অনুপাতে ঢালায় কাজের ভিডিও রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে। যেসব পাথর দিয়ে ঢালায় কাজ করা হচ্ছে তা ময়লা-আর্বজনা, বালু, মাটিতে পরিপূর্ণ। এসময় ভিডিও ধারন করতে দেখে পানিতে পাথর ধুতে দেখা যায়। এমনকি ঢালায় কাজে ব্যবহার করা বালুও ভরাটের। এসময় স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি হাত দিয়ে কয়েকদিন আগের কয়েকটি ব্লক ভেঙ্গে দেখান।
জানা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলার চর এলাকার কয়েকটি ইউনিয়নের জনগণের দীর্ঘদিনের দাবী বাস্তবায়ন, সহজ যোগাযোগ ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে গত ২০১৮ সালে পাগলা নদীর ওপর তর্ত্তিপুর ব্রিজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানী ২০১৮ সালের ২০ মে প্রায় ১৭ কোটি ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৯৫ টাকা ব্যয়ে ব্রিজটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মাণাধীন ব্রীজের দৈর্ঘ ১৫৬.২ মিটার, যা এর আগে ছিল ১৭২.২ মিটার। ৯.৮ মিটার প্রস্থ ব্রীজের ৫টি স্প্যান ও ৩২টি পাইল রয়েছে এবং ব্রীজটি নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনন্যা এ্যাপার্টমেন্ট। ব্রীজটির নির্মান কাজ শেষ হলে মরাপাগলা নদীর পশ্চিম পাড়ের কয়েকটি ইউনিয়নের জনসাধারণের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে জীবনযাত্রায় অভ‚তপূর্ব পরিবর্তন আসবে।
এছাড়াও উৎপাদিত কৃষি পন্য ও ভারত থেকে আসা গরু বাজারজাতকরনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে তর্ত্তিপুর ষষ্মানঘাটের ব্রীজটি। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে ভারতীয় সীমান্তবর্তী পদ্মাপাড়ের বিপুলসংখ্যক জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যশা পূরনের সুখ। তবে ব্রীজ নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ স্থানীয়দের।
ব্রীজের পাশের বাসিন্দা প্রবাসী আহাদ আলী জানান, ব্রীজের কাজ খুব ভালো হয়না। পাতলা রড ব্যবহার করছে। শক্তপোক্ত করতে ঢালায় কাজে কোন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না, কিন্তু ভালো কাজ পেতে কেমিক্যাল মেশানোর প্রয়োজন রয়েছে। আমরা আরো ভালো কাজ চায়, আমাদেরকে যাতে পরে কোন ভোগান্তিতে পড়তে না হয়।
সানোয়ার সাদিক বলেন, বহুল প্রতিক্ষিত ব্রীজ এটি। যে মানের কাজ হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। যে অনুপাতে ব্লক নির্মানের কথা ঢালায় কাজে, তা করছে না। সিমেন্টের পরিমান অনেক কম দেয়া হচ্ছে এবং সামান্য আঘাতেই ব্লক ভেঙে যাচ্ছে। অনেকদিন আগেই ব্রীজ নির্মাণ হওয়ার কথা থাকলেও জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের খামখেয়ালিতে তা করা হয়নি। এতদিন পরে কাজ শুরু হলেও কাজে ব্যাপক অনিয়ম। পরস্পর রডের দুরত্ব অনেক বেশি এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা ৬-৭ ইঞ্চিও রয়েছে বলে জানান তর্ত্তিপুর ঘাটের বাসিন্দা সুভান আলী।
আরেকজন যুবক জানান, কাদামাটি থাকা অবস্থায় পাথর পানি দিয়ে না ধুয়েই ঢালায় কাজ চলছে। ঢালায়ের সময় সরকারি ইঞ্জিনিয়ার থাকার কথা থাকলেও তারা উপস্থিত থাকেন না। ব্লক নির্মানের পর পানি দেয়া হয় না। প্রতিদিন এই নদী পারাপার হয় ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, এই নদীতে প্রতিদিন ১০-১২ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। ওপারে ৩টি কলেজ, কয়েকটি মাদ্রাসা, উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের সকলের একমাত্র ভরসা এই ব্রীজ। কিন্তু কাজ করতে অনেক দেরি হচ্ছে। এতোবড়ো ব্রীজ নির্মাণে প্রতিদিন ৫-৭ জন শ্রমিক কাজ করছে। কাজটি দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন। এমনকি এখন পর্যন্ত ব্রীজের সংযোগ সড়কের জন্য রাস্তার ব্যবস্থাও করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী হতে ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট হলেও এখন সম্পূর্ণ প্রকল্পের আনুমানিক ৬৫-৭০ শতাংশ হয়েছে বলে জানা গেছে। স্বাভাবিকভাবেই আবারো বাড়বে প্রকল্পের সময়। শেষ হতে আরো ৬-৭ মাস সময় লাগতে পারে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এসব বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী হারুন-অর-রশীদ জানান, সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করতে সকল চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ব্লক তৈরিতে পাথর, বালু, সিমেন্টের অনুপাত ৬:৩:১ অনুসারে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, ব্লকগুলো পরীক্ষা করার পরই তা বসানোর কাজে ব্যবহার করা হবে। এরপরেও কাজে কোন অনিয়ম পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান প্রকৌশলী হারুন-অর-রশীদ।
স/অ