শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা যৌক্তিক নয় : সাক্ষাতকারে রাবি উপাচার্য

রাবি উপাচার্য অধ্যাপক এম .আবদুস সোবহান। ফাইল ছবি

আমজাদ হোসেন শিমুল : 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক এম. আবদুস সোবহান দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ আগামী ৬ মে শেষ হচ্ছে। একবার পূর্ণ দায়িত্ব পালনের পর চার বছর গ্যাপ দিয়ে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তা ব্যক্তির আসনে আসিন হয়েছিলেন তিনি। এই দুই মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের  দায়িত্ব পালন করায় দীর্ঘ এই সময়ে তার সফলতা ও ব্যর্থতার গল্প এবং নানান অভিজ্ঞতাসহ সার্বিক বিষয়ে তিনি একটি সাক্ষাতকার প্রদান করেন। সাক্ষাতকারে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কথা বলেছেন। দুবার দায়িত্ব পালনে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বিষয়েও করেছেন আলোচনা।  কথা বলেছেন- তাঁর সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও গবেষণাখাতের নানান সাফল্য নিয়েও। এছাড়া আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাক্ষাতকারে আলোচনার বিভিন্ন দিক ‘সিল্কসিটি নিউজ’র পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন: নিয়োগে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কী বলবেন ?
উপাচার্য: এ ব্যাপারে একটি ভূমিকা দেয়া দরকার। ২০১৩ সাল থেকে অদ্যাবধি ৮ বছরব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন কর্মকর্তা বিশেষ করে কর্মচারী নিয়োগ হয়নি। প্রতিবছর অবসর জনিত কর্মচারী পদ শূণ্য হয়। ফলে প্রশাসন, বিভাগ, হল ও অন্যান্য দপ্তর কর্মচারী স্বল্পতায় প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পাদনে নাকাল অবস্থায়। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি কর্মচারী ২০০টি শূণ্যপদ বিজ্ঞাপিত হয়। বহু সংখ্যক আবেদনকারীর লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন শেষে যখন মৌখিক পরীক্ষায় তাদেরকে ডাকা হবে-সে সময় মহামারী করোনার হানা। ফলে মৌখিক পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ রাখি। ডিসেম্বর ২০২০ এর শুরুর দিকে মৌখিক পরীক্ষারপ্রস্তুতি চলছিল হঠাৎ ১৩ ডিসেম্বর সকাল ১০:৪৭ মিনিটে ই-মেইলে শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে সকল প্রকার নিয়োগের (প্রশাসনিক কারণে) স্থগিতাদেশটি আসে। অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞা আসার পূর্বে ক্যাম্পাসে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল যে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরা জোর চেষ্টা চালাচ্ছে মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা আনতে, যাতে আমার সময় কোন নিয়োগ না হয়। অবশেষে গুঞ্জন বাস্তবে পরিণত হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ একটি স্বাভাবিক চলমান প্রক্রিয়া। নিয়েধাজ্ঞায় আমার কোন অনুতাপ নেই।এরপর যিনি এই পদে আসবেন তাঁকে এই নিয়োগ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় খুলে গেলে এই নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত নিত্যদিনের কার্যসম্পাদনে প্রশাসন মুখথুবরে পড়বে। আমি মনে করি- এই নিষেধাজ্ঞা যৌক্তিক নয়।

প্রশ্ন: দু’বার দায়িত্ব পালন করলেন পূর্ণ মেয়াদে, যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইতিহাসও বটে। প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির জায়গা থেকে কী বলবেন ?
উপাচার্য: বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের মর্যাদাপূর্ণ আসনে আমাকে দুইবার আসীন করেছেন-এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অপরিসীম কৃতজ্ঞতা এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞা-সর্বপরি মহান আল্লাহ পাকের দরবারে অসীম শুকরিয়া। দুইবার উপাচার্য হওয়ার নজীর বাংলাদেশে আরো আছে। কিন্তু আমার বেলায় ব্যতিক্রম হলো একবার পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর ৪ বছর গ্যাপ দিয়ে আবার দায়িত্ব পাওয়া। এটি নাজরবিহীন। এদিক দিয়ে নয়া ইতিহাসও বটে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির কথা বলতে গেলে এ দুইয়ের মধ্যে আমার কোন আক্ষেপ নেই।

প্রশ্ন: আপনার সময়ে ক্যাম্পাসে বিশেষ কোনো অগ্রগতি, যা নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট?
উপাচার্য: ক্যাম্পাসের অগ্রগতি বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক অগ্রগতি বুঝায়। ২০০৯ থেকে ২০১৩ এবং ২০১৭ থেকে ২০২১ খৃ: এই দুইপর্বে আমি আমার মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা, সততা এবং দেশপ্রেম যতটা আমার আছে তার পুরোটাই আমি নিবেদন করেছি কর্মসম্পাদনে। কতটা সফল হয়েছি সে বিচারের ভারতো আপনাদের। ভৌত অবকাঠামোগত অগ্রগতি, পঠন-পাঠন, গবেষণা, ক্রীড়া, সাহিত্য-সংস্কৃতিতে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এছাড়া প্রথমবারেরমত রাবিতে ডিজিটাল আর্কাইভস প্রতিষ্ঠা, ৫০ বছরের মাষ্টারপ্লান প্রণয়ন, ইন্টারন্যাশনাল এ্যাফেয়ার্সস এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছি। তাছাড়া শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালায় বঙ্গবন্ধু কর্ণার এবং মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। অগ্রগতির তালিকা তৈরী করলে বেশ দীর্ঘ হবে। স্বশরীরে কেউ রাবি ক্যাম্পাসে এলে অগ্রগতির নিদর্শন তার চোখে পড়বেই। অগ্রগতির তো কোন শেষ নেই। তবে আমি আমার কাজে তৃপ্ত। এখানে উল্লেখ করা একান্ত প্রাসঙ্গিক যে-২০১০ সালে গবেষণায় রাবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ এবং ২০১৯ সালে রাবি সামগ্রিকভাবে গবেষণায় বাংলাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছে (যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা কোপাস এর জরিপ)। ২০২০ সালে বিশ্বের ১লক্ষ ৫৯ হাজার ৬১২জন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর তালিকায় রাবির একজন শিক্ষক ২৮৪ তম স্থান অর্জন করেছে। ২০২১ সালে স্পেনের শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিমাগো ইনস্টিটিশন কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৪১২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রাবি ১১তম স্থানে অবস্থান (জরিপকাল ২০১৫-২০১৯)।

প্রশ্ন: অপ্রাপ্তির প্রশ্নে কি বলবেন ?
উপাচার্য: দেখুন-প্রত্যাশা যদি সীমাহীন হয় তবে অপ্রাপ্তি সেখানে থাকবেই। আমার চাওয়া/আকাঙ্খা/প্রত্যাশা সীমাহীন নয়। যতটা চেয়েছি তার শতভাগ পূরণ না হলেও খুব কাছাকাছি। তাই আমার কোন অতৃপ্তি নেই। আকাশচুম্বি প্রত্যাশা থাকলে মৃত্যুটি হবে অতৃপ্তির।

প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানতম কাজ শিক্ষা-গবেষণা। গবেষণা নিয়ে বিতর্ক আছে। আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে আপনার উপলব্ধি কি ?
উপাচার্য: হ্যাঁ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানতম কাজ শিক্ষা এবং গবেষণা। গবেষণা নিয়ে বিতর্ক বলতে-এর মান নিয়ে বিতর্ক, এটা ছিল, আছে এবং থাকবে। উৎকর্ষতার কি কোন শেষ আছে ? বরাদ্দ কম সেই কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গবেষণায় আগ্রহ হারাচ্ছে, এ বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ একমত নই। নিবেদিত প্রাণ গবেষকরা বরাদ্দের দিকে নির্ভর করে গবেষণা করেন না। তাছাড়া বর্তমানে শিক্ষাবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় শিক্ষাখাতে বিশেষ করে গবেষণা ও শিক্ষারমান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অর্থ বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছেন। তাই ভাল গবেষণা করতে চাইলে অর্থের অভাব হবে না।

প্রশ্ন: শিক্ষক রাজনীতি করার দায়ে জেল খেটেছেন। শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন। খোদ সরকারপন্থীরাও নানা ভাগে বিভক্ত। কি বলবেন এ রাজনীতি নিয়ে ?
উপাচার্য: দেখুন শিক্ষকরা ফুলটাইম রাজনীতিবিদ নয় এবং হওয়া উচিৎও নয় যতক্ষণ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন। তবে প্রতিটি নাগরিকের মত শিক্ষকেরও একটি রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ থাকবে। আমার রাজনৈতিক দর্শন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দর্শন-আর আমার আদর্শ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সুযোগ্যতম কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। সেই ১৯৬৯ খৃ: আমি যখন এসএসসি পরীক্ষার্থী- শেখ মুজিবুর রহমান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু খেতাবে ভূষিত হয়ে তৎকালীন সারা পুর্ব-পাকিস্থানে ৬দফার সমর্থনে জনসভা করে চলেছিলেন-তখন তাঁকে দেখেছি এবং তাঁর আদর্শকে ধারণ করেছি। জেল খাটার বিষযটি ১/১১ অর্থাৎ ২০০৭ সালের ঘটনার বিষয়। জননেত্রীকে অন্যায়ভাবে জেলে নেওয়া হলো। আমি তখন রা.বি-এর প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের নির্বাচিত আহ্বায়ক। আমার নেতৃত্বে জননেত্রীর মুক্তির আন্দোলন করা হয়। সুতরাং তৎকালীন সরকার আমাকে গ্রেফতার , রিমান্ড এবং শেষপর্যন্ত শ্রীঘরে ১০৪ দিন। তবে এই জেল খাটা আমার জীবনের গর্ব ও অহংকার। শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে নানামূখী প্রশ্ন- তার কারণ শিক্ষকদের মধ্যে কিছুসংখ্যক ফুলটাইম রাজনীতিকের মত, তবে সে রাজনীতি কদর্যতাপূর্ণ। আপনি বলছেন খোদ সরকারপন্থী শিক্ষকরাও নানাভাবে বিভক্ত- হ্যাঁ এটি সত্য, তবে এর কারণ উচ্চাভিলাষী প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার বেদনা।

প্রশ্ন: জামাত-শিবিরের দূর্গ বলে পরিচিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। আপনার প্রথমবার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই এ শক্তির রাজনীতিতে ভাটা পড়ে। এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে কী বলবেন ?
উপাচার্য: দেখুন ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ দুই দশকের অধিক সময় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সরকার দেশ শাসন করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিকে গ্রাম। ফলে এসময়ের সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্টপোষকতায় জামাত-শিবিরের উত্থানের উৎকর্ষ চারণভূমিতে পরিণত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের রাজনীতি ক্যাডারভিত্তিক, চেইন অব কমান্ড খুব মজবুত। পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে বিভক্তি নেই। প্রথমবার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই রাবিতে একটি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। পরিস্থিতি উত্তরণে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা পাই। এছাড়া স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ পন্থি শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারী এবং আশে-পাশের প্রগতিশীল জনগণ পরিস্থিতি উত্তোরণে ভূমিকা পালন করেছে। বৎসরাধিকাল ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে। সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলার উপকরণ নেই। শূণ্য ক্যাম্পাসে ভাল থাকা কি ভাল?

প্রশ্ন: আপনার প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করেছে ইউজিসি। এ নিয়ে মন্তব্য জানতে চাই।
উপাচার্য: ইউজিসির তদন্ত একপেশে-পক্ষপাতমূলক। যে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি-সেগুলি আমলযোগ্য কিনা সেইটি বিবেচনায় নেয়া হয়নি। যারা অভিযোগ করেছে তাদের মধ্যে প্রধানতম দুইজনের বিরুদ্ধে লক্ষ ও কোটি টাকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাবি প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্তকাজে উভয়েই অসহযোগিতা করেছে। উপরন্তু তাদের মধ্যে একজন উচ্চ আদালতে রিট করে তদন্ত কাজ স্থগিত করিয়েছে। এই যে, আর্থিক দুর্নীতির জন্য তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি-এইটিই বর্তমান প্রশাসনের জন্য কাল হয়ে গেল। তখন থেকেই ঐ দুইজন এবং তাদের কয়েকজন অনুসারী মিলে আমার বিরুদ্ধে খোড়া অভিযোগ বিমক ও শিক্ষামন্ত্রণালয়ে পাঠাতে থাকে। খোড়া অভিযোগের মূল হলো শিক্ষক নিয়োগে নিম্নমানের (তাদের ভাষায়) নীতিমালা প্রনয়ণ। দেখুন, যেকোন নিয়োগনীতিমালা প্রনয়ণ রাবি এ্যাক্ট ১৯৭৩ অনুসরন করে সকল প্রক্রিয়া সম্পাদন শেষে সিন্ডিকেট কর্তৃক চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। উপাচার্যের এককভাবে এখানে কিছু করার নেই। তদুপরি ২৫ অক্টোবর ২০২০ সালে আমি সকল মিডিয়ার শতাধিক সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ২ ঘণ্টাব্যাপী সম্মেলন করেছি এবং সকল প্রশ্নের উত্তর যথাযথভাবে দিয়েছি। আমি আমার অবস্থান সরকার ও দেশবাসীর নিকট পরিষ্কার করেছি। অধিকন্তু আমি নিজে দাবী করেছি আমার বিরুদ্ধে কোন রকম দুর্নীতি যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তদন্ত করতে।

প্রশ্ন: আপনার মেয়ে-মেয়ের জামাইয়ের নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা আছে। এর জবাবে আপনার ব্যাখ্যা কী?
উপাচার্য: দেখুন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় উল্লেখিত যোগ্যতায় যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোন ব্যক্তি আবেদন করতে পারেন। আবেদন করলেই সকলেই নিয়োগ পাবেন এমনতো নয়। কেননা, এটি হলো আবেদন করার যোগ্যতা। পরবর্তীতে চূড়ান্ত নিয়োগের সুপারিশ করে নিয়োগ নির্বাচনী বাছাই কমিটি (সিন্ডিকেট কর্তৃক গঠিত)। আবেদনকারীগণ এদেশের নাগরিক এবং প্রত্যেকেই এদেশের নাগরিকদের কারো পুত্র, কারো কন্যা, জামাই, বৌমা ইত্যাদি, যে যোগ্যতায় এদেরকে নিয়োগ দেয়া হয় ঠিক একই যোগ্যতায় উপাচার্যের আত্নীয়-স্বজনের নিয়োগ হলে এটি কি অপরাধ ? অভিযোগকারীদের অধিকাংশের একাডেমিক রেজাল্ট উপাচার্যের জামাই-মেয়ের রেজাল্টের অনেক নিচে। বিশ্বের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োগ একমাত্র একাডেমিক রেজাল্ট নয়। তা যদি হতো তবে নিয়োগ নির্বাচনী বাছাই কমিটির প্রয়োজন হতো না।

প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের গেষ্ট হাউজের জমি কেনাসহ সাবেক উপাচার্য ড. মিজান উদ্দীন প্রশাসনের বিরুদ্ধেও বেশ কয়েকটি দূর্নীতির তদন্ত হচ্ছিল। এখন কোন পর্যায়ে ?
উপাচার্য: বিষয়টি দুর্নীতি দমনকমিশন (দুদক) এরতদন্তাধীন ২০১৭ সাল থেকে। দুদক-কে সহায়তা প্রদানের জন্য বর্তমান রাবি প্রশাসন সিন্ডিকেট কর্তৃক একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করে এবং এই কমিটি ২৮৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রস্তুত করে সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ২৫/২৬ ফেব্রুয়ারি বিমক, দুদক ও শিক্ষামন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে।

প্রশ্ন: স্বায়ত্বশাসিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ বাড়ছে বলে মনে করা হয়। এর প্রভাব কি বলবেন?
উপাচার্য: বিষয়টি এমন নয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের এ্যাক্ট দ্বারা পরিচালিত হয়। স্বায়ত্বশাসনের ধারণাটা অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়। স্বায়ত্বশাসন একাডেমিক বিষয়- অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব একাডেমিক কোর্স কারিক্যুলাম, শিক্ষা সহায়ক কারিক্যুলাম এবং শিক্ষাতিরিক্ত কারিক্যুলাম তৈরী করবে। কিন্তু আর্থিক বিষয়ে সরকারের আর্থিক নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হবে। এ্যাক্ট-এর কপি মন্ত্রণালয়ে আছে এবং এর আলোকে মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। ব্যতিক্রম ভুলবশত হতে পারে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার মান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কী বলবেন ?
উপাচার্য: বাংলাদেশে সামগ্রিক অর্থে শিক্ষার হার বেড়েছে-উচ্চ শিক্ষারও প্রসার ঘটেছে। এখন মান নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। দেখুন, ভাল বা মন্দ এটিকে কোন না কোন মানদন্ডে বিচার করে বলতে হয়। একটি ভাল আর একটি ভাল অপেক্ষা আরো ভাল-মন্দের বেলায়ও তাই। তাহলে কি প্রথম ভালটি খারাপ ? তা নয়। বিষয়টি আপেক্ষিক। অর্থাৎ চাওয়াটা হচ্ছে ভালর উৎকর্ষের উন্নয়ন। আর এটা রাতারাতি হওয়ার বিষয় নয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকার একটি যুগপোযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। সেটি প্রণীত হয়েছিল কিন্তু বাস্তবায়নের পূবেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্যে দিয়ে যারা ক্ষমতা দখল করে, তারা খুদা-কমিশনের নীতিটিকেও হত্যা করে-এটা বাঙ্গালি জাতির দুর্ভাগ্য। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতায় দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শিক্ষা ক্ষেত্রেও উল্লেখ্যযোগ্য উন্নয়ন ঘটেছে। খুদা কমিশনের আলোকে ২০১০ সালে একটি বাস্তবধর্মী শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন সময় সাপেক্ষ। একটি কল্যাণকামী সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। আমাদের দুর্ভাগ্যের মধ্যে সৌভাগ্য এটাই যে, আমরা এরকমই একটি সরকার পেয়েছি যার ধারাবাহিকতায় দেশ উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই ধারাবাহিকতায় অব্যাহত থাকা একান্ত প্রয়োজন। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেশের উচ্চ শিক্ষার মান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ নই।

এএইচ/এস