শিক্ষক সন্তানসহ ৭ সন্তানের ঘরে ঠাঁয় হলো না বৃদ্ধ বাবা-মার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি :

আমার নিজ ছেলে-মেয়েরা আমাদের ভরণপোষণ ও দেখাশুনা না করে বাড়ি থেকে বের করে  দিয়েছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী এখন অসহায় জীবন-যাপন করছি।

কোনো আয় করতে পারিনা। পরের বাড়িতে আছি। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের কামাটোলা বাবুপুর গ্রামের দাহারুল ইসলাম (৯০) ও তার স্ত্রী শেরিনা বেগম (৮৫)।কান্না জড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, আমাদের সাত ছেলে ও মেয়ে। তারা সবাই প্রতিষ্ঠিত। দুইজন শিক্ষক ও একজন ব্যবসায়ী। কিন্তু সবাই আমাদের দূর দূর করে বের করে দিয়েছে। বর্তমানে আমরা কানসাট ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামে আমিনুল ইসলামের বাড়িতে আশ্রয়ে আছি।

শেরিনা বেগম বলেন, বড় ছেলে রায়নুল হক ঢাকায় ব্রাকে চাকরি করে। মেজো ছেলে বাগির আলম ভারতের বাসিন্দা। সেজো ছেলে ইমরান আলি শাহবাজপুর সোনা মসজিদ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। ছোট ছেলে সাইদুর রহমান শিবগঞ্জের বড় ব্যবসায়ী। মেয়েদের মধ্যে মেজো মেয়ে পারচৌকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর এক মেয়ের স্বামী তারাপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অপর মেয়ের স্বামী মারা যাওয়ায় ওই মেয়েটি নিজেই অসহায়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দুইজনের ১৩ বিঘা জমি ও ৪০ লাখ টাকা ছিল, যা ছেলে-মেয়েরা হাতিয়ে নিয়েছে। জমি ও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর কেউ আশ্রয় না দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এমনকি  আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দুটিও তাদের কাছে আছে।

স্থানীয়রা জানায়, এলাকার কয়েকটি প্রভাবশালী পরিবারগুলোর মধ্যে তারা একটি। ভাই বোন অনেক হওয়ায় পিতামাতার দায়িত্ব কেউ নিতে চান না। সন্তানেরা সবাই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও একে অপরের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টার কারণেই বুধবার (৩ মে) বৃদ্ধ দম্পতি বাড়ি ছাড়া হন। বর্তমানে তারা এক প্রতিবেশীর আশ্রয়ে রয়েছেন।

এ বিষয়ে শাহবাজপুর সোনা মসজিদ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. ইমরান আলী বাবা-মায়ের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, তার বাবা-মা সব সম্পত্তি সব ছেলেমেয়েদের ভাগ করে দিয়েছেন। সর্বশেষ চার বছর আগে বাগান বিক্রির ৮৫ লাখ টাকা ভাগের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা তিনি পেয়েছেন। চার বছর ধরে তিনি তার পিতামাতাকে দেখভাল করলেও অন্য ভাই-বোনেরা কেউ তাদের খোঁজ নেন না। সম্প্রতি পারিবারিক ঝামেলার কারণে তিনি তার ভাই বোনদের কিছু দিনের জন্য দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সাড়া পান নি। তাই সবাইকে বাড়িতে আসতে নিষেধ করেন তিনি। এতে বাবা-মা ক্ষুব্ধ হয়ে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন।

অন্যদিকে, অপর ছেলে রায়নুল ও সাইদুর রহমানকে ফোন করা হলে তারা ফোনে ব্যক্তিগতভাবে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান। তবে তারা বলেন, আপনারা আমাদের সাত ভাইবোনকে একত্রিত করেন, তারপর মন্তব্য করব।

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত বলেন, তাদের সন্তানদের উচিত হবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নৈতিকতার সঙ্গে জন্মদাতা ও গর্ভধারিণী বাবা-মাকে আশ্রয় দিয়ে সেবাশুশ্রূষা করা। তবে সেই ভুক্তভোগী অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আমার কাছে আসলে, আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।