শহীদুজ্জামান সেলিম, আমিন খান, পপি ও মম করোনায় কোরবানি নিয়ে যা বললেন..

করোনার প্রভাব পড়বে কোরবানির ঈদেও। স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয় আছে, আছে অর্থনৈতিক টানাপড়েনও। অনেকে এ বিষয়ে কথা বলতেও চান না। শোবিজের কয়েকজন অবশ্য অকপট। ঈদুল আজহায় কোরবানি নিয়ে কালের কণ্ঠকে বলা তাঁদের ভাবনা তুলে ধরা হলো:

কোরবানির টাকাটা বিলিয়ে দিতে চাই

শহীদুজ্জামান সেলিম

কোরবানি দেওয়ার উপযুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রতিবছরই কোরবানি দিয়েছি। কিন্তু এ বছর কোরবানি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঢাকাতেই থাকব এবার। গরু হয়তো কেনা যেত, অনলাইনে গরু পাওয়া যায়। অনেকে বলেছেও গরু পৌঁছে দেবে বাসায়। কিন্তু মন বলছে, এবার কোরবানির জন্য বরাদ্দ অর্থটা আমি যেন অসহায়দের মধ্যে ভাগ করে দিই। নিয়মই আছে, কোরবানির পশুর মাংসের একটা অংশ গরিব-অসহায়দের, একটা অংশ নিজের, আরেকটা অংশ আত্মীয়-স্বজনের। আমি পুরো টাকাটাই মানুষের মাঝে দিতে চাই। আমাদের শিল্পীদের মধ্যেই অনেকে আছেন স্বল্প আয়ের, ‘দিন আনি দিন খাই’ অবস্থা। এই করোনায় কোনো কাজ ছিল না তাঁদের। পরিবার পরিজন নিয়ে কী দুর্দশার মধ্যেই না পড়তে হয়েছে তাঁদের! রাস্তায় নেমে মাংস চাইতেও পারবে না তাঁরা। তাঁদের আত্মসম্মানবোধ প্রকট। কোরবানি দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ওদের কাছে মাংস পৌঁছে দেওয়াও সম্ভব হবে না। তাই নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে সাহায্য করব। সেই অর্থ দিয়ে ওরা যদি মাংস কিনে খায় তো খাবে, অন্য দরকারেও ব্যবহার করতে পারে।

 

গরুর হাটে যাওয়া হবে না

আমিন খান

প্রতিবছর হাটে গিয়ে গরু কিনি। আমার সন্তানরাও সঙ্গে যায়। প্রিয় বস্তু কোরবানি দেওয়ার নিয়ম, নিজে গরু কিনলে সেই গরুর প্রতি অন্যরকম একটা মায়া জন্মে। কিন্তু এ বছর গরুর হাটে যাওয়া হবে না। যতই স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হোক, ভিড়ের মধ্যে সেটা রক্ষা করা সম্ভব হবে না। ছেলেদের সঙ্গে নেওয়া তো সম্ভবই না। কোরবানির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থেই অন্যদের সাহায্য করতে হবে—এমনটা আমি মনে করি না। সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ বছর ঢাকায় কোরবানি দেব না। গ্রামের বাড়িতে পরিবারের আরো অনেক সদস্য আছেন, তাঁদের সঙ্গে মিলে কোরবানি দেব। সেখান থেকে যতটুকু সম্ভব গরিবদের সাহায্য করব। অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে হবে কোরবানি। জীবন-জীবিকার জন্য হয়তো অনেকে এখন বের হচ্ছেন, তবে আমার মনে হয় মানুষ অনেক বেশি সচেতনও হয়েছে।

 

কোরবানি ও দান দুটি আলাদা বিষয়

সাদিকা পারভীন পপি

করোনার শুরু থেকেই আমি খুলনায়। ঈদে খুলনা আসতামই, এবার আগে থেকেই আছি। যখন থেকে উপার্জন করা শুরু করেছি তখন থেকেই কোরবানি দিচ্ছি। এবারও দেব। অনেকে হয়তো দিচ্ছেন না, তাঁরা কোরবানির অর্থ গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দেবেন ভাবছেন। আমি মনে করি কোরবানি দেওয়াটাই উচিত। কোরবানি ও দান দুটি আলাদা বিষয়। করোনায় সময় যতটা পেরেছি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমাদের বাড়িতে অনেক ঘরে ভাড়াটিয়া আছে, সবার দরকারে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। কোরবানির মাংসও তাঁদের দরকার। আমাদের পরিচিত কিছু লোক আছেন, তাঁরা গরু কিনে আমাদের বাড়িতে দিয়ে যান। ঈদের দিন গরু জবাই, মাংস কাটাকুটি, ভাগ করা থেকে শুরু করে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার সব কাজ তাঁরাই করেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু করার কথা বলে দিয়েছি। শুনেছি মাংসের মাধ্যমে করোনা ছড়ায় না, তবু সাধ্যমতো চেষ্টা করব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার।

 

একবেলা ভরপেট খাওয়ানোর চেয়ে অর্থ সাহায্য করা ভালো

জাকিয়া বারী মম

অর্থ উপার্জনের পর থেকে প্রতিবছরই কোরবানি দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আমি মনে করি, পশু কেনার টাকাটা কাউকে দান করলে তাঁদের বেশি কাজে লাগবে। মানুষকে একবেলা ভরপেট মাংস দিয়ে ভাত খাওয়ানোর চেয়ে তাঁকে অর্থ সাহায্য করাটাই ভালো। তাহলে নিজেই ঠিক করতে পারবেন টাকাটা দিয়ে তিনি কী করবেন। আসছে দিনে অর্থনৈতিক সংকট আরো প্রকট হতে পারে। সে জন্যই আমি কোরবানির জন্য বরাদ্দ রাখা অর্থ দান করতে চাই। অনেকে হয়তো কোরবানি দেবেন, সেটারও বিপক্ষে নই। সারা বছর আমাকে যাঁরা সাহায্য করেন এই বিপদের দিনে তাঁদের দরকারে এগিয়ে আসতে চাই। হ্যাঁ, সামর্থ্য অনুযায়ী অন্য সময়ও আমি তাঁদের কিছু না-কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি। কোরবানির অর্থটাও যদি দিতে পারি সেটা তাঁদের কাজে লাগবে। ড্রাইভার থেকে শুরু করে আমার বাসার গৃহপরিচারিকা, আমার আম্মার বাসার লোকজনও আছেন—তাঁদেরই টাকাটা দেব। বড় অঙ্কের টাকা পেলে ওরা ভবিষ্যতের জন্য ফিক্সড কিছু করতে পারবে। নিম্নবিত্তের মানুষদের খাবার অনেকেই দেন। এই কোরবানিতেও অনেক জায়গা থেকে মাংস পাবেন তাঁরা; কিন্তু নগদ অর্থ তাঁদের বেশি দরকার।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ