লালপুরে বোমা কালামকে কুপিয়ে হত্যা সৎ ছেলে গ্রেপ্তার

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

নাটোরের লালপুরে আবুল কালাম ওরফে বোমা কালামকে (৫৩) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি ২০২৩) দিনগত রাতে উপজেলার বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের বড়বাদকয়া গ্রামে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আজ শনিবার (২৮ জানুয়ারি ২০২৩) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের সাধুর আখড়া এলাকার একটি পুকুর থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর সৎ ছেলে আল-আমিনকে (১৮) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নিহত আবুল কালাম উপজেলার বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের উধনপাড়া গ্রামের মৃত ইনছার মন্ডলের ছেলে। বর্তমান বড়বাদকয়া গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করতেন। তিনি এলাকায় বোমা কামাল নামে পরিচিত।

আটক আল আমিন একই উপজেলার বড়বাদকয়া গ্রামের মো. হারুনের ছেলে ও নিহত আবুল কালামের দ্বিতীয় স্ত্রী আরজিনা খাতুনের আগের পক্ষের ছেলে।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. সহিদুজ্জামান সালাম (৪৭) বাদি হয়ে নিহতের স্ত্রী ও বিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য বড়বাদকয়া গ্রামের মোছা. আরজিনা খাতুন (৩৫), সৎ ছেলে মো. আল-আমিন (১৮) (পিতা-মো. হারুন, মাতা-মোছা. আরজিনা খাতুন), শ্বশুর মো. জহিম উদ্দিন (৬০), শাশুড়ি মোছা. জালেমা বেগমসহ (৫৫) অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

লালপুর থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রথম স্ত্রী তালাক দিয়ে চলে গেলে প্রায় ১০ বছর আগে বড়বাদকয়া গ্রামের মো. জহিম উদ্দিনের মেয়ে মোছা. আরজিনা খাতুনকে বিয়ে করে ঘর জামাই থাকতেন আবুল কালাম। তাদের সংসারে মো. আবির হোসেন ৯ বছর বয়সের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। দাম্পত্য জীবনে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কলহ বিরাজ করছিল। তারই জেরে শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) দিনগত রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে স্ত্রী, তার সৎ ছেলে ও স্বজনদের ধারালো অস্ত্র ও লাঠির আঘাতে তার মৃত্যু হয়। নিহতের পরিবারের লোকজন তাৎক্ষণিক বড়বাদকয়া গ্রামের বাড়িতে এসে কাউকে না পেয়ে আশেপাশের লোকজনদের সাথে কথা বলে জানা যায় শশুর বাড়ির লোকজন বাঁশের লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে লাশ গুম করেছে।

এ সময় বাড়ির পেছনে অনেক খানি জায়গায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ এবং কিছু দূর পর্যন্ত মাটিতে টেনে ছেঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চিহ্ন ও আবুল কালামের ব্যবহৃত শীতের টুপি ও পায়ের স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখতে পাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়ায় পরিবার থেকে পুলিশকে জানানো হয়। রাতেই অভিযান চালিয়ে সন্দেহজনকভাবে নিহতের আগের পক্ষের ছেলে আল-আমিনকে আটক করে। তার জবানবন্দিতে জানা যায়, ঘটনা ধামাচাপা দিতে রাতে মরদেহ ভ্যান গাড়িতে করে একটি পুকুরে ফেলে রেখে এসেছে। শনিবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের সাধুর আখড়া এলাকার পাশের একটি পুকুর থেকে আবুল কালামের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের শরীর ও মুখমন্ডলে ধারালো অস্ত্র ও লাঠির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. সহিদুজ্জামান সালাম বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পারিবারিক বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে স্থানীয় সাংবাদিকের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে হত্যা চেষ্টা করেন। ওই ঘটনায় তাকে আটক করে তার স্বীকারোক্ত মোতাবেক আরও বোমা উদ্ধার করে লালপুর থানা পুলিশ। সেই থেকে তিনি এলাকায় বোকা কলাম হিসেবে পরিচিতি পান। বর্তমানে তার নামে অস্ত্র, ডাকাতি মামলা আদালতে চলমান আছে বলে জানা গেছে।

স/আর