লালপুরে কমল-মমতা দম্পতির অসহায় জীবন সংগ্রামের পনেরো বছর

আলাউদ্দিন, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধিঃ “কোনদিনও কোন কালেও পুরুষের তরবারী একলা হয়নিকো জয়ী শক্তি দিয়েছে প্রেরণা দিয়েছে বিজয় লক্ষী নারী। রাজা করেছে রাজ্য শাসন রাজারে শাসিছে রানী, রানীর শাসনে ধুয়ে মুছে যাবে রাজ্যের যত গ্লানি” কবি নজরুলের এই “নারী” কবিতার প্রতিচ্ছবি যেন কমল সরকার- মমতা রানী দম্পতির ইতিহাস।

পেশায় ঝালমুড়ি বিক্রেতা কমল সরকার (৪০) নাটোরের লালপুর উপজেলার নওপাড়া গ্রামের ভবেস সরকারের ছেলে। ২০০৫ সালে তার পায়ে ইনফেকশনের কারণে পা কেটে বাদ দিতে হয়। তারপর থেকে জীবন সংগ্রামে স্বামী-স্ত্রী লড়ছে একসাথে। স্থানীয় নওপাড়া বাজারে ১৫ বছর যাবত পিঁয়াজি, পিঠা কালায়ের রুটি বিক্রি করে চলছে তাদের সংসার। দুই কন্যা সন্তান নিয়ে করোনা কালীন সময় থেকে চরম দূর্দশার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার নওপাড়া বাজারে ভ্রাম্যমাণ দোকান খুলে পিঁয়াজি, শীতের পিঠা কালাইয়ের রুটি বিক্রি করছে কমল সরকার। পাশেই সেগুলো তৈরি করে দিচ্ছে স্ত্রী মমতা রানী। মা-বাবার কাজে সাহায্য করছে তাদের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে লাকী।

স্ত্রী মমতা রানী জানান, স্বামীর পা হারানোর পর থেকে দীর্ঘ দিন ধরে এই ব্যবসা করে আসছেন তারা। বড় মেয়েকে অর্থ সংকটে অল্প বয়সেই বিয়ে দিতে হয়েছে। ছোট মেয়েটা এবার ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ে। স্বল্প পুঁজি ব্যবসা, তার ওপর করোনাকালীন সময়ের পর থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বৃত্তবান বা সরকারের সহযোগিতা চান কমল-মমতা দম্পতি।

এ বিষয়ে বাজার কমিটির সভাপতি মাহামুদুর রহমান পলাশ বলেন, কমল সরকার আগে ঝালমুড়ি বিক্রি করত, পা কাটার পরেও ভিক্ষাবৃত্তি বেছে না নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এ বাজারে ভাসমান দোকান দিয়ে শীতকালীন পিঠা বিক্রি করে কোনমতে দিনাতিপাত করছে এই দম্পতিরা। ব্যবসার পুঁজি অল্প হওয়ার কারণে ব্যবসায় ভালো করতে পারে না তারা। কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাকে সহায়তা করলে ব্যবসায় উন্নতি করতে পারতো তারা।