সাতক্ষীরা ঘুরে এসে..
জেসমিন আরা ফেরদৌস:
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার গাবুরা ইউনিয়নের গ্রাম সোরা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বেড়েছে এ উপকূলীয় অঞ্চলে। গ্রামে মিঠাপানির তীব্র সংকট। তাই দৈনন্দিন সকল কাজে লবণাক্ত পানি ব্যবহার করতে হয় এ অঞ্চলের নারীদের। এছাড়াও দীর্ঘক্ষণ চিংড়ির ঘেরে কোমর পানিতে ডুবে থেকে কাজ করেন অনেকেই৷ যার ফলে জরায়ু ইনফেকশন,টিউমার,ক্যান্সার,জরায়ু নেমে যাওয়ার মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা৷ এমনকি অল্প বয়সেই জরায়ু কেটে ফেলতে হচ্ছে গ্রামের অধিকাংশ নারীর।
গ্রামের বাসিন্দা আসমা বেগম(৩০)। ২ সন্তানের জননী তিনি। দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার পরই জরায়ুতে টিউমারের কারণে জরায়ু কেটে ফেলতে হয়েছে তার। তিনি সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, আমার দ্বিতীয় বাচ্চা হওয়ার পর আমার জরায়ুতে ৪ কেজি ও সাড়ে ৪ কেজি ওজনের দুটি টিউমার হয়৷ এরপর অপারেশন করে আমার জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা রহিমা। জরায়ু ক্যান্সারের কারণে তার মাকে হারিয়েছেন ৫ বছর আগে। তিনি বলেন, আমার মায়ের নিয়মিত ব্লাড ভাঙ্গতো। এই সমস্যার কারণে ডাক্তারেরে কাছে নিয়ে গেলে ৫ বছর আগে আমার মায়ের জরায়ু ক্যান্সার ধরা পড়ে৷ আমরা চিকিৎসার জন্য তাকে সাতক্ষীরা নিয়ে গেছি৷ কিন্তু গরীব মানুষ আমরা। ভালো চিকিৎসার জন্য টাকা কোথায় পাবো? তাই টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা করতে পারিনি। এর কিছুদিন পর মা মারা গেছে।
দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত লবন পানিতে মাছ ধরার কারণে জরায়ুতে সমস্যা দেখা গেছে হীরা বিবির। তিনি বলেন, আমার বড় মেয়ে যখন আমার পেটে ছিলো তখন আমি তাকে নিয়েই লবণ পানিতে মাছ ধরতে যেতাম। আবার ওর জন্ম হওয়ার ১৫ দিন পর থেকেই আমি আবার মাছ ধরতে শুরু করি৷ এ কারণে ডাক্তার বলেছে আমার জরায়ু নিচে নেমে গেছে। এখন আমার বাচ্চা হওয়ার নাড়ী ফুলে গেছে আর সেখানে অসম্ভব ব্যাথা করে।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সি.এইচ.সি.পি. হেলেনা বিলকিস সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, লবণ পানি ব্যাবহারের কারণে গ্রামের অধিকাংশ মেয়েরই জরায়ু ইনফেকশন, টিউমার ও ক্যান্সার হচ্ছে।এছাড়াও গ্রামের ৮০ ভাগ মেয়েই লিউকোরিয়ার ভুগছেন। দীর্ঘদিন লিউকোরিয়ায় ভুগবার কারণে তাদের জরায়ু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এক পর্যায়ে যেয়ে জরায়ু কেটে ফেলতে হচ্ছে এসব ভুক্তভোগীদের।
বিনামূল্যে সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যান্সার নির্ণয় (ভায়া টেস্ট) করা হয়। এ সুযোগ সুবিধা গাবুরা ইউনিয়নের নারীরা পাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভায়া টেস্টের এই সুবিধাটা আমরা উপজেলা পর্যায়ে মাত্র ১ বছর পূর্বে পেয়েছি৷ এর আগে এ সুবিধা জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ছিলো। ইউনিয়ন পর্যায়ে এর একটি ক্যাম্প হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। উপজেলা পর্যায়ে এর কার্যক্রম চলছে। আমাদের এখানে আসা নারীদের যদি আমরা কোন লক্ষণ দেখতে পাই তাহলে আমরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেফার্ড করি। সেখানে সপ্তাহে ২ দিন বিনামূল্যে ভায়া টেস্ট করা হয়।
জেএ/এফ