লকডাউন নিয়ে চিন্তায় রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা, পাচার রোধে সীমান্তে কঠোর বিজিবি

শাহিনুল আশিক:
দেশের ‘র’ কাঁচামাল পশুর চামড়া। কোরবানিকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর দেশে প্রচুর পশু জবাই হয়। চামড়া কেনাবেচা হয় কোটি কোটি টাকার। এবছর গরুর চামড়ায় ৫ টাকা ও খাসির চামড়ায় দাম বেড়েছে দুই টাকা। এমন দামে অপত্তি না থাকলে ইদের পরেরদিন লকডাউনকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন রাজশাহী-নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন- ‘চামড়া সংগ্রহ, বিক্রি ও রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য কমপক্ষে এক সপ্তা সময় চান তারা। এসময় চামড়া ব্যবসার জন্য পরিবহন ও যোগাযোগ বিষয়ে লকডাউনের মধ্যে চলাফেরার সুযোগ চান তারা।’ অন্যদিকে, সীমান্তে চামড়া পাচার রোধে কঠোর অবস্থানে থাকবে বিজিবি। রাজশাহী-১ বিজিবি জানায়, সিমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে।

রাজশাহী ও নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন- বর্তমান পরিস্থিতিতে কষ্টে আছেন তারা। ট্যানারি মালিকদের কাছে বয়েকায়া পড়ে আছে কোটি-কোটি টাকা। ইদের আগে কিছু টাকা পেলে বেশি করে চামড়া কিনে ব্যবসা করার আশা প্রকাশ করেন তারা। এছাড়া রাজশাহী জেলার ব্যবসায়ীদের ২০১৫ সালের ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে ট্যানারি মালিকদের কাছে। এছাড়া নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া রয়েছে ১৯৯০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত। এসময়ে বকেয়ার পরিমান ৬৫ থেকে ৭০ কোটি টাকা।

জানা গেছে- এবছর রাজধানীতে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম গরুর প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা, বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর গতবছর রাজধানীতে লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ছিলো ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে ছিলো ২৮ থেকে ৩২ টাকা।

কোরবানিতে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা:
রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির পশু পালনে গ্রামীণ মানুষের ভূমিকা বেশি। গ্রামের নারী-পুরুষ গৃহস্থালিতে গরু-ছাগল পালন ছাড়াও খামারে ইদ-উল-আযহার জন্য পশু লালন-পালন করে থাকেন। এর ফলে প্রতিবছর কোরবানির সময়ে পশু বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা একসঙ্গে পান তারা। এই টাকায় নিজ পরিবারের উন্নয়ন ছাড়াও আবার কোরবানির জন্য পশু পালনের লক্ষ্যে টাকা রেখে দেন তারা।

শুধু পশু কেনাবেচাই নয়, প্রতিবছর কোরবানির দিন থেকে শুরু হয় চামড়া কেনাবেচা। পাড়া-মহল্লায় গিয়ে সমাজপ্রধান (মন্ডল) বা কোরবানির ভাগিদারদের থেকে চামড়া কেনেন ব্যবসায়ীরা। এর পরে পাইকারি ও ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করা হয় চামড়াগুলো। এমন কর্মযজ্ঞ চলে দুই-তিন সপ্তা ধরে। এর আগে কোরবানির পশুর চামড়া কেনাতে মাঠে নামে মূল ব্যবসায়ী ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

আব্দুস সালাম নামের এক মৌসুমি ব্যবসায়ী জানান, ‘আমি ঠিকায় ঘর-বাড়ি ভাঙ্গা কাজ করি। তবে বছরের একদিন লাভ-লোকসান যায় হোক, চামড়ার ব্যবসা করি। এবারও করবো। এক থেকে দেড় লাখ টাকার চামড়া কিনি প্রতিবছর। বিক্রি করি পুঠিয়ার বেলপুকুরে। সেখানে দামে পর্তা না হলে নিয়ে যায় নাটোরের চামড়া আড়তে। এই চামড়া কেনাবেচায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ হয়।’

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইসমাইল হক জানান, রাজশাহীতে কোরবানির পশুর চাহিদা আছে ২ লাখ ৭০ হাজার। প্রায় এই সঙ্খক পশু কোরবানি হবে। তিনি বলেন, গত তিন বছর থেকে আমরা বলে আসছি, ভারত থেকে গরু নিয়ে আসার কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের যে চাহিদা, তা দেশি গরু দিয়ে পূরণ করা সম্ভব।

চামড়া ব্যবসায়ীদের কথা:

রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘কোরবানির পরে পশুর চামড়াগুলো কিনে একত্রিত করে, সংরক্ষণ ও বিক্রি করতে সময় লাগে সপ্তাখানেক। ইদের পরেরদিন লকডাউন নিয়ে চিন্তায় আছি আমরা। আমাদের ব্যবসার স্বার্থে লকডাউনে চলা ফেলার সুযোগ দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে চামড়া রাখার মতো ব্যবস্থা নেই। চামড়ায় লবণ দেওয়া পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের কাছে তাকে। এর পরে ট্যানারে বিক্রি করা হয়। ট্যানারে বিক্রি করতে সময় লাগে, সেখানে দর দামের ব্যপার থাকে। লকডাউনে চামড়া কেনাবেচা ও পরিবহণ আওতামুক্ত রাখার দাবি করেন তিনি।

নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি শরিফুল ইসলাম জানান, ‘বৃহস্পতিবার নাটোর জেলা প্রশাসক ও এসপির সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন লকডাউনের মধ্যে তাদের চামড়ায় ব্যবসায় সমস্যা হবে না।’ বর্তমানে চামড়ার দামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চামড়ার দাম কম। লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও খাসির চামড়া ১২ থেকে ১৩ টাকা দরে ট্যানার মালিকরা কিনছেন।’

রাজশাহী-১বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. সাব্বির আহম্মেদ জানান, করোনাকে কেন্দ্র করে সিমান্ত এলাকায় তাদের টহল অব্যহত রয়েছে। বিশেষ করে ইদ ও পশুর চামড়া পাচার রোধে অপারেশনাল, টহল জোরদার করা হয়েছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, লকডাউনের বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটি সবাইকে মানতে হবে। কোরবানির পশুর চামড়ার বিষয়ে আলাদ সিন্ধান্ত নেই। তবে দুই একদিনের মধ্যে ঘোষণা আসতে পারে।

স/আ