রেড জোনে করোনা রোধে ‘যে কোনো ব্যবস্থা’ নেবে পুলিশ

দীর্ঘ দুই মাস সাধারণ ছুটি থাকার পরও দেশে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা। শনিবার (৬ জুন) পর্যন্ত দেশে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩ হাজার ২৬ জন। মারা গেছেন ৮৪৬ জন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির লাগাম টানতে এবার এলাকাভিত্তিক লকডাউনের উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। আক্রান্তের সংখ্যা বিচারে রেড জোন, ইয়েলো জোন এবং গ্রিন জোনে চিহ্নিত করা হবে এলাকাগুলোকে। বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড, অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়োলো ও একেবারে কম আক্রান্ত বা সংক্রমণমুক্ত এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। গ্রিন জোনে সতর্কতা এবং ইয়েলো জোনে সংক্রমণ যেন আর না বাড়ে সেজন্য পদক্ষেপ থাকলেও রেড জোনকে করা হবে লকডাউন। এই জোনে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ও জনসাধারণের চলাচল রোধে করোনার বিশেষ গাইডলাইন অনুযায়ী কঠোর হবে পুলিশ।

এ বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, করোনাকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও পুলিশিং কার্যক্রমের জন্য ইতোমধ্যে একটি প্যান্ডেমিক এসওপি (স্ট্যান্ডিং অপারেটিং প্রসেডিওর) প্রণয়ন করা হয়েছে। এই এসওপি করোনা মোকাবিলায় সাফল্য দেখিয়েছে এমন সব দেশের পলিসি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পলিসিসহ বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনার আলোকে পুলিশ সদস্যের জন্য আধুনিকভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি সকল ইউনিটে প্রেরণ করা হয়েছে। এর অধীনে পরিস্থিতি বুঝে ‘যে কোনো ব্যবস্থা’ নেবে পুলিশ।’

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, এসওপি ছাড়া এ পর্যন্ত অন্য কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে প্রকৃত লকডাউনে যা যা করতে হয় পুলিশ তাই করবে। রেড জোনে সার্বক্ষণিক টহল, চেকপোস্ট, অকারণে ঘোরাঘুরি করা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ ইত্যাদি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে পুলিশ সদরদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো. সোহেল রানা , করোনাকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও পুলিশিং কার্যক্রমের জন্য আমাদের একটি প্যান্ডেমিক এসওপি রয়েছে। এসওপিতে সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে যে, করোনাকালে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যরা কখন কীভাবে কাজ করবেন। এই এসওপির সাথে সংগতি রেখে আমাদের কার্যক্রম পরিচালিত হবে এবং উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়ার মতো এলাস্টিক সক্ষমতা রয়েছে এই এসওপির। যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো সময়ে এমনকি স্বল্প সময়ের নোটিশে আমরা এসওপি সংশোধন বা এরই সঙ্গে নতুন কোনো প্রয়োজনীয় কর্মপদ্ধতি সংযোজন করার সুযোগ রেখেছি।

সোহেল রানা আরও বলেন, স্বাভাবিক পুলিশিংয়ের পাশাপাশি সরকারের নির্দেশিত যেসব স্বাস্থ্যবিধি রয়েছে, সেসব বিশেষ নির্দেশনাও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবে পুলিশ।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, আগামীকাল রোববার (৭ জুন) থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার কিছু স্থানে জোনিং ব্যবস্থার মাধ্যমে লকডাউন শুরু হবে। রেড জোনে সবাইকে ঘরে থাকতে হবে, একান্ত প্রয়োজন না থাকলে কেউ বাইরে বের হতে পারবেন না। ওই এলাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব জিনিসের দরকার হবে তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ঢাকায় ২০ হাজার ৭০৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। রেড জোন ঘোষণার ক্ষেত্রে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়ানোর মাপকাঠিতে এখন পর্যন্ত এমন ২৩টি এলাকা রয়েছে, যেখানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা একশ’র বেশি।

এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমিত রোগী পাওয়া গেছে মিরপুর এলাকায়। সেখানে ৯৬৯ করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে মহাখালীতে। সেখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৪৫৭ জন। আক্রান্তের তালিকায় এর পরে আছে উত্তরা, মুগদা ও মোহাম্মদপুর। এ তিন এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৩৩, ৪২৮ ও ৩৯৪।

বাকি যেসব এলাকায় সংক্রমিত রোগী বেশি, সেসব এলাকা হলো- যাত্রাবাড়ী (৩৮৭ জন), কাকরাইল (৩০০ জন), ধানমন্ডি (২৯৪ জন), মগবাজার (২৫৫ জন), তেজগাঁও (২৫১ জন), রাজারবাগ (২২১ জন), খিলগাঁও (২১৯ জন), লালবাগ (২০৬ জন), রামপুরা (১৯৭ জন), বাড্ডা (১৯৫ জন), মালিবাগ (১৬৪ জন), গুলশান (১৬৩ জন), বাবুবাজার (১৬২ জন), গেন্ডারিয়া (১৪২ জন), ওয়ারী (১২৪ জন), বাসাবো (১২২ জন), বংশাল (১০৯ জন) এবং আগারগাঁও (১০৮ জন)।