রিজার্ভ নিয়ে সরকারের তথ্য অসত্য: ফখরুল

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে সরকারের পাশাপাশি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকও বিভিন্ন তথ্য ও পরিসংখ্যান নিয়ে অসত্য কথা বলছে। আইএমএফ মনে করছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবায়নে সমস্যা রয়েছে।’

‘সম্প্রতি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। সংস্থাটির হিসাব অনুসারে, চলতি বছরের জুনের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪৬ বিলিয়ন ডলারের যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকার কথা বলা হয়েছিল, তা আসলে ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হবে ৩৯ বিলিয়ন ডলার।’

ফখরুল বলেন, ‘যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত রীতি মেনে দীর্ঘদিন ধরে একই পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব করা হচ্ছে। এটি সঠিক নয়। আন্তর্জাতিক ফর্মুলা অনুসরণ না করলে গ্লোবাল আউটলুকে বাংলাদেশ গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।’

বুধবার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গত সোমবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল ওই সভা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত ১৩-১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে চাপে রয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি এবং রেমিটেন্স আয়ে ঘাটতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে অসহনীয় হয়ে উঠছে জিনিসপত্রের দাম। মনে হচ্ছে, আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও বেসামাল হয়ে উঠবে। রিজার্ভ নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। এটি দ্রুত কমে আসছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গত মার্চে রপ্তানি আয় হয় ৪৭৬ কোটি ডলার; আর প্রবাসী আয় আসে মাত্র ১৮৬ কোটি ডলার। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় মিলিয়ে মার্চে ৬৬২ কোটি ডলারের আয়ের বিপরীতে আমদানি দায় শোধ করতে হয় ৭১৪ কোটি ডলার। তাতে ঘাটতি দাঁড়ায় ৫২ কোটি ডলার। আমদানি খরচও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করেছে সরকার। এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছে ৫২০ কোটি ডলার, এতে রিজার্ভ কমে হয়েছে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার। আমদানি খরচ এভাবে বাড়তে থাকলে রিজার্ভ আরও কমে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাভাবিক ব্যয়বহুল এসব আমদানির সুযোগ নিয়ে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিপুল অর্থপাচার হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চাপ রয়েছে রিজার্ভের হিসাব সঠিক নিয়মে করার। এতে রিজার্ভ কমবে ৭০০ কোটি ডলারের বেশি। এখন রিজার্ভ রয়েছে ৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার।’

ফখরুল বলেন, ‘আইএমএফের সুপারিশ মোতাবেক সঠিক নিয়মে রিজার্ভ হিসাব করলে বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ দাড়ায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। তাই বাস্তবিকভাবে আইএমএফ প্রণীত নিয়মে রিজার্ভ হিসাব করা হলে বাংলাদেশের হাতে আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে মাত্র সাড়ে তিন মাসের। যা একেবারেই উদ্বেগজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইএমএফ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উচ্চ খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় বলে ধরা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এই হার ৮ শতাংশের বেশি। সরকারি ব্যাংকে এই হার ২০ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের সঠিক তথ্য উপস্থাপন হচ্ছে না। তাদের মতে, খেলাপি ঋণের হার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রস হিসাবে খেলাপি ঋণ বেশি হলেও নিট হিসাবে কম। এই হার ৩-৪ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে।’

সূত্র: যুগান্তর