রিকশায় ফের লাইসেন্স, আসছে নীতিমালাও

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

প্রায় ১১ লাখ রিকশা চলছে ঢাকায়। যানজটের জন্য বাহনটিকে দায়ী করা হচ্ছে অনেকদিন ধরেই। এতে লাইসেন্স দেওয়াও বন্ধ রাখে সিটি করপোরেশন। বিপুল সংখ্যক এই বাহনের জন্য নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ অবস্থায় নতুন করে ২ লাখ রিকশার লাইসেন্স দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি। উত্তর সিটিও সে পথেই হাঁটছে।

জানা গেছে, ১৯৮৬ সালের পর রিকশার লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রাখে সিটি করপোরেশন। এরপর বিভিন্ন সংগঠনের নামে লাইসেন্স দেওয়ার আবেদন করা হয়। কিন্তু নতুন করে কোনও লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। ফলে অবৈধভাবেই চলতে থাকে রিকশা। এসব নিয়ন্ত্রণে কোনও কর্তৃপক্ষ না থাকলেও সিটি করপোরেশন বলছে, নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই থাকবে। এজন্য দরকার শক্তিশালী নীতিমালা। ট্রাফিক আইনেই চলতে হবে রিকশাকে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীতে বৈধ রিকশা ৭৯ হাজার ৫৫৪টি, অবৈধ ১১ লাখ। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে প্রায় ৩০টি সংগঠন। লাইসেন্সের কথা বলে সংগঠনগুলো রিকশামালিকদের কাছ থেকে আদায় করছে মাসোহারা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে নগরীতে রিকশার লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দুই সিটি করপোরেশন। এরমধ্যে নতুন করে লাইসেন্স দিতে দুই লাখ ১২ হাজার ৯৯৭টি আবেদন জমা নিয়েছে দক্ষিণ সিটি। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার রিকশার লাইসেন্স বিতরণ করা হয়েছে। প্রস্তুতি নিচ্ছে উত্তর সিটি করপোরেশনও। এজন্য একটি নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এতদিন যানজটের কথা ভেবে অনুমোদন দেইনি। কিন্তু রিকশা বন্ধ হচ্ছে না, রাজস্বও পাচ্ছি না। তাই কিছু রিকশার অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। প্রতিটি রিকশাকে কিউআর কোর্ডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যাতে রিকশায় চলাচলে কাউকে হয়রানির শিকার না হতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি রিকশাকে পাঁচ বছরের জন্য লাইসেন্স নিতে হবে। কোন সড়কে চলবে, আর কোথায় চালানো যাবে না সেসব উল্লেখ থাকবে।’

অনুসন্ধানে দেখা গেছে রাজধানীর অধিকাংশ রিকশার মালিক বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি। ডিএনসিসি বলছে, যারা লাইসেন্স পাওয়ার উপযোগী তাদেরকেই দেওয়া হবে। চালকের সংখ্যাও নির্ধারিত থাকবে। প্রভাবশালী কাউকে লাইসেন্স দেওয়া হবে না।

এদিকে অবৈধ রিকশা-ভ্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, রিকশা-ভ্যানসহ যেসব অযান্ত্রিক যানবাহনে মোটর জুড়ে দিয়ে যান্ত্রিক বানানো হয়েছে, সেগুলো বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর নগরভবনে রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি নিবন্ধন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তাপস আরও বলেন, রিকশাসহ ধীরগতির অযান্ত্রিক যানবাহনগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনবো। কিছু রাস্তা থাকবে দ্রুতগতির যানের জন্য। কিছু সড়কে রিকশা চলবে। কিছু সড়কে হেঁটেই চলাচল করতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন রিকশার লাইসেন্স দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে। যানজট জলজটে মানুষ বিষিয়ে উঠবে। এজন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার। কোন পরিবহন কীভাবে চলবে তার জন্য নীতিমালা দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘লাইসেন্স দেওয়ার পর লাইসেন্সবিহীন রিকশা উচ্ছেদ করা যদি সম্ভব হয় তা হলে সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক হবে। পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ড বা গলিতে কতটি রিকশা চলবে সে বিষয়টিও সুনির্দষ্ট করে দিতে হবে। রিকশা নিয়ন্ত্রণে কমিটিও করা যেতে পারে।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন