রাস্তায় রাস্তায় তুলির খেলনা বিক্রি: অনন্য এক জীবনের গল্প

স্মৃতি আক্তার:

তিনটি অক্ষরের সমন্বয়ে গঠিত ‘জীবন’। আর এই জীবদ্দশায় কেউ বিলাসিতায় যাচ্ছেন আবার কেউবা অনাহারে কিংবা অর্ধাহারে অতিবাহিত করছেন এই ‘জীবন’। আর অনাহারে কিংবা অর্ধাহারে ‘জীবন’ কাটাতেই অনেককে সংগ্রামী ‘জীবন’ অতিবাহিত করতে হয়।

এমনই একজন ‘জীবনযুদ্ধে’ জীবন অতিবাহিত করছেন তুলি বেগম। মাথার ওপর কেউ না থাকায় একাই সংসার চালাতে রাস্তায় রাস্তায় খেলনা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। তুলি বেগম নগরীর বিহারী কলোনী ১৯ নম্বর ওর্য়াডের বাসিন্দা। নগরীর রেলগেট, নগর ভবন, সাহেব বাজার বিভিন্ন এলাকায় খেলনা বিক্রি করেন।

সংগ্রামী জীবনের গল্প বলতে গিয়ে তুলি বেগম জানান, গত ৫ মাস আগে মাত্র ৬৬০ টাকার খেলনা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। প্রথমে গ্যাস বেলুন হাতে নিয়ে বিক্রি করছিলো। ৩ মাস হলো অন্যের ভ্যানে খেলনা বিক্রি করছেন। ভ্যান ভাড়া দিতে হয় না কিন্তু ভ্যানটি নিজেরও না। তার এক ভাই ভ্যানটি চালাতে দিয়েছেন। কোনো এক সময় ফেরত নিতে পারেন, তার নিজের কাজে। ভ্যান চালাতে কষ্ট হলেও মাঝে মাঝে তার ভাগিনা তাকে সাহায্য করে।

৪ সন্তান রেখে স্বামী অন্য কোথাও বিয়ে করে, এক বছর আগে ঋণ বোঝা রেখে চলে যায় । চার সন্তানে মধ্যে ২ মেয়ে ২ ছেলে। ছোটো ছেলের আলাদা সংসার থেকেও মা কে কিছু অর্থ দিয়ে দেখাশোনা করে। খেলনা বিক্রি করে তুলি নিজের এক মেয়ে সালমা ও বাবার দিন পার হয়।

তিনি আরও জানান, প্রতিদিন সকাল ১০ টায় বের হয় খেলনা বিক্রি করতে। বাড়ি ফিরতে রাত ৯-১০টা হয়। সারাদিনে ১৫০ থেকে ২০০ আয় আসে। বিক্রি উপর নির্ভর করে আয় হয়ে থাকে বলে জানান তিনি। বাবার বাসায় থাকে রেলওয়ের মাটিতে। করোনাকালে কোনো অর্থিক সহয়তা পাননি।

বিয়ের পর রাজশাহীর ২নম্বর ওর্য়াডে থাকায় সেখানের জাতীয় পরিচয়পত্র হয়। করোনার সময় অর্থিক সহয়তা জন্যে গেলে ২নম্বর ওয়ার্ডে থেকে বলে যেখানে বসবাস করছেন সেখানেই সব কিছু পাবেন। এখানে থাকলে পেতেন। আর ১৯নম্বর ওয়ার্ডে থেকে কোনো সাহায্য পাইনা এখানে জাতীয় পরিচয়পত্র না বলে।

ভাগ্যের কথা বলে তুলি বলেন, ভাগ্যের অনেক কাহেনী আছে। কবেই তো কপাল পুরেছে তার মধ্যে লিভারের রোগী আমি। ২০১৯ সালে এজেন্টের মাধ্যমে বিদেশ পারি দেন। ভাগ্যের পরিহাসে সেখানেও থাকা হয়নি। অসুস্থতার কারণে ঠিক মত খেতেও পেতো না। ৬ মাস না যেতেই দেশে ফিরতে হয়েছে।

এসবের মাঝে আবার দেশে ফিরে এসে শুরু করেন সংগ্রামী জীবন।

স/আ