শুক্রবার , ২১ জুন ২০২৪ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

রাসেল ভাইপার আতঙ্কে রাজশাহীর চরের বাসিন্দারা

Paris
জুন ২১, ২০২৪ ১০:৫৭ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বরেন্দ্র অঞ্চলখ্যাত রাজশাহীতেও শুরু হয়েছে রাসেল ভাইপার আতঙ্ক। নদ-নদী ও খাল-বিলের পানি বাড়ার কারণে মৎস ও কৃষিজীবি মানুষ রাসেল ভাইপার আতঙ্কে রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকায় স্থানীয়রা বিষধর এ সাপকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ

খন পর্যন্ত রাসেল ভাইপার সাপের ছোবলের শিকার হয়েছেন অনেকেই। বিশেষ করে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির পর থেকে চর এলাকার মানুষ বেশি আতঙ্কে রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার (২১ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাঘা উপজেলার পলাশি ফতেপুর পদ্মার চরে একটি রাসেল ভাইপারকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। এছাড়াও গত কয়েকদিনে তানোর, গোদাগাড়ী, চারঘাটটেও এ সাপ মারা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ সাপের উপদ্রব খুব বেশি দেখা না গেলেও মানুষ আতঙ্কে রাসেল ভাইপার সাপ দেখলেই দল বেধে তাকে পিটিয়ে হত্যা করছেন।

বাঘা উপজেলার পলাশি ফতেপুর চরের জনি আহমেদ বলেন, শুক্রবার সকালে পলাশি ফতেপুর পদ্মা নদী থেকে জাল তুলে বাড়ি ফিরছিলাম। এ সময় সামনে রাসেল ভাইপার দেখতে পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। পরে তার চিৎকারে কয়েকজন এগিয়ে এসে রাসেল ভাইপার সাপটিকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।

গত ৫ দিন আগেও এর পাশে আরেকটি রাসেল ভাইপার মারা হয়েছে। দুইদিন থেকে পদ্মায় নতুন পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে রাসেল ভাইপারের বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে বাঘা, গোদাগাড়ী, চারঘাট উপজেলা এলাকায় পদ্মায় এসেছে নতুন পানি। ফলে এসব উপজেলার সীমান্ত এলাকার লোকজনের মধ্যে বেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে বাঘার চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১৫টি চরের প্রায় তিন হাজার পরিবারের ২০ হাজার মানুষ ভাইপার আতঙ্কেরর মধ্যে বসবাস করছে।

এছাড়াও চরখানপুর, চরমাঝারদিয়াসহ এসব এলাকায় নতুন পানির সাথে রাসেল ভাইপার আসছে বলে লোকজন জানিয়েছেন।

বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু দেয়ান বলেন, পদ্মার নতুন পানি আসার সাথে সাথে রাসেল ভাইপার আতঙ্কে রয়েছে ২০ হাজার মানুষ। তিনি বলেন, সবাইকে সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে।

এছাড়াও যদি কোনো ব্যক্তি রাসেল ভাইপারের ছোবলের শিকার হয় তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার জন্য জানানো হয়েছে। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনার পরামশ্য দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

রাসেল ভাইপার দেখলে যোগাযোগ করবেন যেসব নাম্বারে

দেশের যেকোনো স্থানে এ সাপ দেখার সঙ্গে সঙ্গে তা জানানোর জন্য অনুরোধ করেছে স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ।

রেসকিউ টিমের সভাপতি মো. রাজু আহমেদ একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এ অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সাপ মারতে গিয়ে নিজে সাপের কামড়ের শিকার হবেন না। বিনামূল্যে সাপ উদ্ধার করে আপনাকে বিপদমুক্ত করবে স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ।

আরেকটি পোস্টে রাসেল ভাইপার কামড়ের শিকার হলে করণীয় বিষয়গুলোও জানিয়েছেন তিনি।

কেউ যদি রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ের শিকার হন, কোনো ওঝা বা বেদের কাছে না গিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিকটস্থ হাসপাতালে যাবেন।

স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগের নাম্বার : ০১৭৮০৯৩২৭১৭, ০১৬১৪৫৮৯১১১ এবং ০১৮৪১৫৯৭০০৩।

‘রাসেল ভাইপার’, বাঁচার উপায়

চিকিৎসকের মতে, গোখরো সাপের দংশনের গড় ৮ ঘণ্টা পর, কেউটে সাপের দংশনের গড় ১৮ ঘণ্টা পর ও চন্দ্রবোড়া (রাসেল ভাইপার) সাপের দংশনের গড় ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন পর রোগীর মৃত্যু হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সময়সীমার মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা জরুরি। সাপের কামড় বা দংশনের পরে, দ্রুত অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিলে, অ্যান্টিভেনমের অ্যান্টিবডিগুলি বিষকে নিষ্ক্রিয় করে। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেঁচে যায়।

সাপে কামড়ালে যা করবেন:

* শান্ত থাকুন এবং অতিদ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।

* শুধু রাসেল ভাইপার নয়, যে কোনো সাপের কামড়ের শিকার হলেই ওঝার কাছে যাওয়া যাবে না। ওঝার কাছে না গিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে যে সাপ দংশন করেছে, তা চিহ্নিত করার জন্য সেই সাপের ছবি তুলে স্থানীয় বন কর্মকর্তা ও চিকিৎসককে দেখাতে হবে।

* শরীরের যে স্থানে সাপ কামড়েছে সেটি যতটা সম্ভব কম নড়াচড়া করুন। ঘড়ি বা অলঙ্কার পড়ে থাকলে তা খুলে ফেলুন।

* কাপড়ের গিঁট ঢিলা করুন, তবে খুলবেন না।

সাপে কামড়ালে যা করবেন না:

* কামড়ের স্থান থেকে চুষে বিষ বের করে আনার চেষ্টা করা।

* কামড়ের স্থান আরও কেটে বা সেখান থেকে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে বিষ বের করে আনার চেষ্টা করা।

* বরফ, তাপ বা কোনও ধরনের রাসায়নিক ক্ষতস্থানে প্রয়োগ করা।

* আক্রান্ত ব্যক্তিকে একা ফেলে যাওয়া।

* কামড়ের স্থানে শক্ত করে বাঁধা। এর ফলে বিষ ছড়ানো বন্ধ হবে না এবং আক্রান্ত ব্যক্তি পঙ্গুও হতে পারেন।

* বিষধর সাপ ধরা থেকেও বিরত থাকা উচিত। এমনকি মৃত সাপও সাবধানতার সাথে ধরা উচিৎ, কারণ সদ্যমৃত সাপের স্নায়ু মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরও সতেজ থাকতে পারে এবং তখন তা দংশন করতে পারে।

প্রায় ৪০০০ এর বেশী সর্প দংশনের রোগীর চিকিৎসা দেওয়া ডা. ফরহাদ উদ্দীন হাসান চৌধুরী ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন,

“বাংলাদেশের প্রধান ৩ টি বিষাক্ত সাপ হলো গোখরা (কোবরা), কেউটে (ক্রেইট) এবং রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া। রাসেলস ভাইপার অপেক্ষাকৃত বেশি বিষধর। অতিসম্প্রতি এই সাপটির প্রকোপ বেড়ে গেছে। তবে এই সাপটি নিজ থেকে তাঁড়া করে কাউকে দংশন করে না। মূলত অসাবধানতাবশত কেউ এই সাপের গায়ে পারা দিলে এই সাপটি ছোবল দেয়।

তিনি বলেন, এই সাপের বিষ শরীরে প্রবেশ করলে মূলত শরীরের রক্ত পাতলা হয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে স্বতঃস্ফূর্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে, কিডনি বিকল হতে পারে, স্নায়ু অবশ হয়ে ফুসফুসের কার্যকারিতা হারিয়ে যেতে পারে এমনকি হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে। বাংলাদেশে সর্প দংশন প্রতিরোধী যে অ্যান্টিভেনম রয়েছে সেগুলো কোবরা এবং ক্রেইটের বিপরীতে ভালোভাবে কাজ করলেও রাসেলস ভাইপারের বিরুদ্ধে ভালোমতো কাজ করে না। এই এন্টিভেনমটিতে ভারতীয় রাসেলস ভাইপারের বিরুদ্ধে উপাদান রয়েছে। ভারতীয় রাসেলস ভাইপারের বিষ এবং বাংলাদেশের রাসেলস ভাইপারের বিষের ভিতরে উপাদানগত বৈসাদৃশ্য বেশি হওয়ায় এটি পুরাপুরি কাজ করে না।

ডা. ফরহাদ বলেন, আমাদের দেশের এই সাপটির বিরুদ্ধে একটি কার্যকরী অ্যান্টিভেনম তৈরি করার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষের নেতৃত্বে একদল গবেষক বিগত প্রায় ৪-৫ বছর নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আশা করি আমরা অদূর ভবিষ্যতে রাসেলস ভাইপারের বিরুদ্ধে কার্যকরী দেশীয় একটি অ্যান্টিভেনম পেতে পারি। বিষাক্ত আর অবিষাক্ত মিলিয়ে আমি জীবনে ৩০০০-৪০০০ এর বেশী সর্প দংশনের রোগী নিজেই চিকিৎসা করেছি। কোবরা, ক্রেইট, রাসেলস ভাইপার সব ধরনের সাপের কামড়ের চিকিৎসা করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রাসেলস ভাইপারের ক্ষেত্রে ৫০% এর বেশি রোগীকে বাঁচাতে পারিনি। তবে আক্রান্ত হওয়ার পরপরই দ্রুততম সময়ে হাসপাতালে আসলে, অতিদ্রুত অ্যান্টিভেনম শুরু করলে ও সাপোর্টিভ চিকিৎসা যেমন ডায়ালাইসি, ভেন্টিলেশন ইত্যাদি দিলে রোগী বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করি।”

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর