রাশিয়াকে বড় যুদ্ধে ঠেলে দিচ্ছে পশ্চিমারা

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

ইউক্রেনকে ভারী অস্ত্র দেওয়া মানেই রাশিয়াকে পারিমাণবিক অস্ত্রের দিকে ঠেলে দেওয়া। ইউক্রেনকে জার্মিানির লেপার্ড-২ যুদ্ধট্যাংক সরবরাহের গুঞ্জন শুরু হতেই আকার-ইঙ্গিতে বারবারই এই হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া।

পার্লামেন্ট নেতাদের থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইজু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ থেকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দফতর- সবখান থেকেই একইরকম সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার কোনো হাঁকডাকেই দমছে না ইউক্রেন। পিছু হটছে না মিত্ররাও। বরং মস্কোর হুমকি-ধমকিতে ফল হয়েছে আরও উলটো।

এখন এক লাফে ১২ দেশ দাঁড়িয়ে গেছে ইউক্রেনকে লেপার্ড দেওয়ার জন্য। সমরবিশারদরা বলছেন-ইউক্রেনে এখন যা ঘটছে, তার সবই হচ্ছে মার্কিন কলকাঠিতে। রাশিয়ার অর্থনীতি, বৈশ্বিক ভাবমূর্তি ধ্বংসে ইউক্রেনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে দেশটিকে বড় যুদ্ধে ঠেলে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা।

তাদের উসকানিতেই ‘ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে ১০০ ট্যাংক প্রয়োজন’ বলে বারবার আকুতি-মিনতি করেছে ইউক্রেন। খবর এএফপি, বিবিসি, গার্ডিয়ানের।

মঙ্গলবার দেশটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুক্রবার রামস্টেইনের সম্মেলনে ১২টি দেশ ১০০টি ‘লেপার্ড’ দিতে রাজি হয়েছে। তবে এর জন্য রপ্তানি লাইসেন্সে উৎপাদক দেশ জার্মানির অনুমতি দরকার। যদিও বেশ কিছু দিন ধরেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল দেশটি। তবে খুব দ্রুতই সিদ্ধান্তে আসতে পারে বলে জানান জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস। মঙ্গলবার ইউক্রেনে লেপার্ড পাঠানোর অনুমতির জন্য জার্মানির কাছে আবেদনও করেছে পোল্যান্ড।

লেপার্ড ট্যাংকের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দি ইয়ারমাক টেলিগ্রামে একটি পোস্টে বলেন, ‘আমাদের ট্যাংক প্রয়োজন। ১০টি কিংবা ২০টি নয়, বরং কয়েকশ’ ট্যাংক।’

পোল্যান্ড এবং ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলো ইতোমধ্যেই প্রকাশ্যে লেপার্ড-২ ট্যাংক সরবরাহ করতে ইচ্ছা পোষণ করেছে। সম্মতি আছে স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং ডেনমার্কেরও। পোল্যান্ড ইতোমধ্যে জার্মানির কাছে লেপার্ড-২ ট্যাংক রপ্তানির অনুরোধ করেছে। মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পোলিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারিউস ব্লাজ্যাক।

তিনি টুইটারে বলেন, ‘জার্মানিকে ইউক্রেনে লেপার্ড-২ ট্যাংক স্থানান্তরের অনুমতির জন্য অনুরোধ পাঠানো হয়েছে।’ এর আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি বলেছিলেন, ইউক্রেনে লেপার্ড ট্যাংক পাঠানোর বিষয়ে জার্মানির অনুমতি চাওয়া হবে। জার্মানি রাজি না থাকলেও তারা বিষয়টি অগ্রাহ্য করবেন।

মূলত যে দেশে সামরিক সরঞ্জাম তৈরি হয়, তৃতীয় কোনো দেশে তা পাঠাতে হলে অবশ্যই দেশটির রপ্তানি লাইসেন্সের অনুমোদন প্রয়োজন পরে। এদিকে জার্মানির দোলাচলের মধ্যেও ইউক্রেনকে ১৩৯টি লেপার্ড ট্যাংক দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে জার্মান অস্ত্র প্রস্তুতকারী কোম্পানি রাইনমেটাল।

জানায়, আগামী এপ্রিল-মে মাস নাগাদ ২৯টি লেপার্ড-২ ইউক্রেনে সরবরাহ করতে পারবে। ২০২৩ সালের শেষে আর ২০২৪ সালের শুরুতে আরও ২২টি ট্যাংক সরবরাহ করতে পারবে। তাদের কাছে পুরোনো ৮৮টি লেপার্ড রয়েছে বলেও জানানো হয়। সেই ট্যাংকগুলোও ইউক্রেনকে দেওয়া সম্ভব বলে নিশ্চিত করেছেন কোম্পানির একজন মুখপাত্র।

পশ্চিমা বিশ্ব শুরু থেকে নানাভাবে ইউক্রেনকে সহায়তা করার মাধ্যমে যুদ্ধকে চাঙ্গা রেখেছে। একজন পশ্চিমা কূটনীতিবিদ ইউক্রেনকে ট্যাংকের মতো নতুন সক্ষমতা প্রদানের জন্য ‘এখনই সঠিক সময়’ বলে অবিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, ইউক্রেনের মিত্রদের সামরিক সক্ষমতার পরিমাণ এমনভাবে বাড়ানোর ক্ষমতা আছে যা রাশিয়ার নেই। নাম প্রকাশ না করে ইউক্রেনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবিসি নিউজকে জানান, ইউক্রেনের জন্য জার্মান তৈরি লেপার্ড ট্যাংক প্রয়োজন ছিল। কারণ এর সোভিয়েত যুগের ট্যাংকগুলোর গোলাবারুদের মজুদ শেষের পথে।

তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন সোভিয়েত যুগের ট্যাংকের জন্য প্রয়োজনীয় নতুন গোলাবারুদ উৎপাদনে অক্ষম। তাই বাধ্য হয়েই বিকল্প উপায় খুঁজে বের করছে দেশটি। লেপার্ড নিয়ে দ্বিধায় সন্দিহান ছিল জার্মানি। এর জন্য তাকে পড়তে হয়েছিল কড়া সমালোচনায়।

সূত্র: যুগান্তর