রামেবির সেই কলেজ পরিদর্শক একাই ৬৯টি পরিদর্শন কমিটির আহবায়ক!


নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) কলেজ পরিদর্শক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সবমিলিয়ে অন্তত সাতটি পদ দখলে রয়েছে তাঁর। কিন্তু এতো কিছুর পরেও বিধি লঙ্ঘন করে এবার তাঁর বিরুদ্ধে ৬৯টি পরিদর্শন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে সম্মানী নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী তিনি এক বছরে সর্বোচ্চ চারটি পরিদর্শন কমিটির আহ্বায়ক হতে পারবেন। কিন্তু সেই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপাচার্যের (ভিসি) প্রশ্রয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক নানা অপকর্মের বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছেন। আর সেই তিনি হলেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের (রামেক) কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ডা. জাওয়াদুল হক।

রামেবির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের এই শিক্ষক সম্প্রতি আরও দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। এই পরিচয়কে পুঁজি করেই তিনি রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (রামেবি) অনিয়ম-দুর্নীতির রামরাজত্ব কায়েম করেছেন। ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক মাসুম হাবিরের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে রামেবি’র সবকাজেই সর্বদা নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকেন তিনি।

সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি মিলে ৫৮টি মেডিকেল প্রতিষ্ঠান রামেবির অধিভুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিভুক্তি নবায়ন ও পরীক্ষা কেন্দ্র প্রদানে প্রতি শিক্ষাবর্ষে পরিদর্শন কমিটি গঠিত হয়। রামেবি’র নিজস্ব সংবিধি না থাকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সংবিধি অনুযায়ী অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও পরীক্ষা গ্রহণসহ সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ওই সংবিধি অনুযায়ী কলেজ পরিদর্শক বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের প্রাথমিক অধিভুক্তি, অধিভুক্তি নবায়ন বা কেন্দ্র প্রদান সংক্রান্ত কোনো পরিদর্শন কমিটিতে আহবায়ক হওয়ার সুযোগ নেই। তবে কলেজ পরিদর্শক সদস্য সচিব হিসেবে একটি শিক্ষাবর্ষে সর্বোচ্চ ২টি কলেজ পরিদর্শন বাবদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানী গ্রহণ করতে পারেন। আর অধ্যাপক পদ মর্যাদার একজন চিকিৎসক আহবায়ক বা সদস্য যে যে দায়িত্বেই থাকেন না কেন একটি শিক্ষাবর্ষে সর্বোচ্চ ৪টি কলেজ পরিদর্শনে যেতে পারবেন। কিন্তু ডা. জাওয়াদুল হক ওই বিধির তোয়াক্কা না করে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে-ই রামেবির ৬৯টি পরিদর্শন কমিটির আহবায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামেবির একাধিক সূত্র জানায়, ভিসি অধ্যাপক ডা. মাসুম হাবিব ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি অফিস করতে পারেন না। বাসা থেকে কোনোমতে কিছু ফাইল-পত্রে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু দাপ্তরিক বিষয়ে ডা. জাওয়াদুল হক ছাড়া অন্য কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারির ভিসির সাথে যোগাযোগের সুযোগ নেই। তাই ডা. জাওয়াদুল হকের মাধ্যমেই দাপ্তরিক সব ফাইল-পত্র ভিসির কাছে যাচ্ছে। এ সুযোগে ডা. জাওয়াদুল হক কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়াল-খুশি মতো দাপ্তরিক কাজ-কর্ম চালাচ্ছেন।

এসব বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) রাজশাহী জেলার সভাপতি অধ্যাপক ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, রামেবি অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজগুলোতে স্বাচিপ সমর্থিত শত শত অধ্যাপক রয়েছেন। তাদের সরাসরি উপেক্ষা কিংবা পাশকাটিয়ে চলছেন রামেবি ভিসি। শুধু তাই নয়, কট্টর জামায়াতের অনুসারী এবং আত্মীয়-স্বজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে ভিসি রামেবিতে স্বাধীনতা বিরোধী বলয় গড়ে তুলেছেন।

বিএমএ রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘রামেবির ৮জন ডিনের কাউকেই ভিসি যোগ্য মনে করেন না। অজ্ঞাত কারণে ওই একজনকে দিয়ে ভিসি রামেবির নিয়োগ, বাছাই, পরীক্ষা, সকল পরিদর্শন, সকল সিলেকশন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, কলেজ পরিদর্শক, কেন্দ্র প্রধান, অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান অ্যাফেলিয়েশন সহ সমস্ত কর্মকান্ড করাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, রামেবি আইনে আছে, সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে কাউকে শুধুমাত্র ছয় মাসের জন্য অস্থায়ী নিয়োগ দিতে পারবেন উপাচার্য। কিন্তু এ পর্যন্ত রামেবিতে যত নিয়োগ হয়েছে, তার কোনোটিতেই সিন্ডিকেটের পূর্বানুমোদন নেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

তবে অভিযুক্ত অধ্যাপক ডা. জাওয়াদুল হকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাতটি পদের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি সঠিক নয়। ডিনের একটি আমার মূল পদ। বাকিগুলোর অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ভাইস চ্যান্সেলর আমাকে যোগ্য মনে করেই দায়িত্বগুলো দিয়েছেন, তাই আমি তা পালন করছি। কলেজ পরিদর্শক প্রত্যেকটি কমিটির সদস্য সচিব থাকতে পারেন। এখানে দোষের কিছু নাই।

এ বিষয়ে মতামতের জন্য রামেবির ভিসি অধ্যাপক ডা. মাসুম হাবিবের সাথে একাধিবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, এর আগে অঘোষিত উপাচার্য শিরোনামে অধ্যাপক জাওয়াদুল হককে নিয়ে একটি অনুসন্ধানী খবর প্রকাশ হয়। এতে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কলেজ পরিদর্শক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ মোট সাতটি পদ দখল করে রাখার বিষয়টি উঠে আসে।

স/জে