৫ কোটি টাকা এটিএম কার্ডে

রাবি শিক্ষককের ছেলের লাখ টাকার মাদক লাগে প্রতিমাসে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শরীরচর্চা অনুষদের সাবেক পরিচালক মৃত আবেদ আলীর ছেলে আজাহার আলী আপেলের (৪১) ব্যাংকের পাঁচ কার্ডে রয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। বিভিন্ন শহরে রয়েছে একাধিক মার্কেট ও বাড়ি। তার রয়েছে একাধিক গার্লফ্রেন্ড। তাদের পেছনেই খরচ করেন এসব টাকা। আর মাদক সেবনে প্রতি মাসে তার খরচ হয় লাখ টাকা।

শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর সানারিয়া চৌধুরী।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে শিবগঞ্জের জালমাছমারী গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব-৫, সিপিসি-১ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের একটি দল এসময় আপেলসহ মাদক সরবরাহকারী আসিফ আলী নিশান ও আপেলের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ভাইয়ের ছেলে মাদকসেবী সাদমান শাকিব আলীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে শুক্রবার সকালে আরও চার মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা পেয়েছে র‌্যাব।

গ্রেফতাররা হলেন-শিবগঞ্জ উপজেলার জালমাছমারী এলাকার মৃত আবেদ আলীর ছেলে আজাহার আলী আপেল, আতাহার আলীর ছেলে ও আপেলের ভাতিজা সাদমান শাকিব আলী (২০), দৌলতপুর উপরটোলা গ্রামের মৃত আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে আসিফ আলী নিশান (২৬), উজিরপুর ডাকাতপাড়া গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে জাহির (৩৫), সেলিমাবাদ গ্রামের মৃত ধনা মমিনের ছেলে রানাউল হক (৩১), দৌলতপুর মহাজনপাড়ার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে মাসুদ রানা ইয়াসিন (৪২) ও তার ছেলে শাহরিয়ার নাজিম জয় (২২)।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, ২০০০ সালে এইচএসসি পাসের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন আজাহার আলী আপেল। কিন্তু বেপরোয়া জীবনযাপন ও মাদকে জড়িয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই শেষ হয়ে যায় শিক্ষাজীবন। তিনি ১২ বছর আগে মাদক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হলেও নানান প্রভাব খাটিয়ে গ্রেফতার এড়িয়ে বিভিন্ন অসামাজিক কর্যকলাপ করে আসছিলেন। সঙ্গীদের নিয়ে প্রতিদিন তার বাড়িতে মাদকের আসর বসতো।

আপেলের সাবেক স্ত্রী তাসনুভা তাজরিন অভি বলেন, ‘আমার বাসা রাজশাহীতে। আপেলের সঙ্গে পারিবারিকভাবেই আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর দিনই সে বাইরে থেকে মাদক সেবন করে এসে আমাকে মারধর করেছিল। শুধু তাই নয়, আমার গর্ভের সন্তানও তার নির্যাতন ও তার মা খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দিলে আমার বাচ্চাটা মারা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপেল ৫-৬ রকমের মাদক সেবন করেন। আমার বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করেও মাদক সেবন করেছেন। আমি এখন সর্বশান্ত হয়ে পড়েছি।’

র‌্যাবের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর সানারিয়া চৌধুরী, ২০১৭ সালে হেরোইনে আসক্ত হয়ে পড়েন আপেল। পরে ২০১৮ সালে ঢাকায় একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করা হলেও সেখান থেকে পালিয়ে যান। ২০১৯ সালে তাজনুভা তাজরিন অভি নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। পরে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন অভি। আজাহার আলী আপেল ২০১০ সালের একটি মাদক মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি।

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে ১২ বছর ধরে অনৈতিক কার্যকলাপ করে আসছিলেন আপেল। তার একাধিক গার্লফেন্ড রয়েছে, যাদের সঙ্গে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টিকটক ভিডিও বানিয়ে আপলোড করেন। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে পাঁচটি ব্যাংকের কার্ড, নগদ টাকা ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। আপেলের দেওয়া তথ্যমতে, উদ্ধার পাঁচটি কার্ডে পাঁচ কোটির বেশি টাকা রয়েছে।’ গ্রেফতার আপেলের বিরুদ্ধে শিবগঞ্জ থানায় একটি মাদক মামলা করা হয়েছে।