রাবি ভিসি সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় চলছে। এরই মধ্যে বেশকিছু অনিয়ম-র্দুনীতির প্রমাণও পেয়েছে ইউজিসি। সেই আলোকে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কাছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ রবিবার সংবাদ সম্মেলন করে ভিসি তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। কি ছিলো ভিসির সেই বক্তেব্যে-তা সিল্কসিটিনিউজের পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো-

সম্প্রতি বিমক তদন্ত কমিটি কর্তৃক দাখিলকৃত তদন্ত রিপাের্টের বরাত দিয়ে বেশ কিছু সংখ্যক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় যে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে তা আমার নজরে এসেছে । তদন্ত প্রতিবেদনে কী আছে আমার জানা নেই , তবে প্রকাশিত খবরগুলাে জনমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি – বিধান সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে বলে আমার মনে হয়েছে । তাই এ বিষয়ে জাতি ও সরকারের কাছে আমার অবস্থান পরিস্কার করার দায় অনুভব করছি ।

তবে এ বিষয়ে কথা বলার পূর্বে আজকের এ অবস্থা সৃষ্টির পিছনের কিছু তথ্য আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা প্রয়ােজন মনে করছি । দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বড় বড় আর্থিক দূর্নীতি ও অনিয়ম যেমন – ঢাকাস্থ অতিথি ভবন ক্রয়ে ১৩ কোটি টাকা , কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে হেকেপ প্রকল্পের সাড়ে তিন কোটি টাকা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণে ৮০ লক্ষ টাকা তছরূপের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সিন্ডিকেট কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠনের পরপরই বর্ণিত অপকর্মের সাথে সংশ্লিষ্টরা আমার বিরুদ্ধে নিরন্তর অসত্য, বানােয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোেগ মজুরী কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে এবং পত্র – পত্রিকাসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করতে থাকে ।

আসলে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ নামধারী কতিপয় দূর্নীতিপয়ন শিক্ষক নিজেদের অপকর্ম আড়াল করার নিমিত্তেই সরকার ও স্বাধীনতা বিরােধী চক্রের যােগসাজসে আমার বিরুদ্ধে অসত্য অভিযােগসমূহ উত্থাপন করে একদিকে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়কে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত , অন্য দিকে তেমনি সরকারকেও ব্ৰিত করছে । এরাই মূলতঃ ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অথরিটির নির্বাচনে জামাত – বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করে ।

আপনারা জানেন যে , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর আলােকে সিনেট – সিন্ডিকেট প্রণীত স্ট্যাটিউট / অর্ডিন্যান্স মােতাবেক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় । বিভিন্ন সময় শিক্ষক নিয়ােগ নীতিমালা প্রয়োজনীয় সংশােধন / সংযোজন হয়ে বিশ্বদ্যিালয়ের সর্বোচ্চ নির্বাহী সংস্থা সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমােদনের পর তা কার্যকর হয় । বিভিন্ন সময়ে এই নিয়ােগ নীতিমালা প্রনয়ণের প্রয়ােজন ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কিছু তথ্য আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি । ১৯৮৫ ও ১৯৯২ সালে প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী ২০১২ সালের প্রথমার্ধ পর্যন্ত নিয়ােগ কার্যক্রম চালু ছিল ( সংযুক্তি -১ ) ।

কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় গ্রেডিং পদ্ধতি প্রবর্তন হওয়ার পর সনাতন পদ্ধতির সাথে গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রাপ্ত জিপিএ সংযােজনপূর্বক শিক্ষক নিয়ােগ নীতিমালা ১০/০৫/২০১২ তারিখের সিন্ডিকেট সভায় অনুমােদিত হয় ( সংযুক্তি -২ ) । প্রফেসর মুহম্মদ মিজান উদ্দীন রা.বি. উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই নীতিমালা অনুযায়ী তিনি শিক্ষক নিয়ােগ দিয়েছেন । সাবেক এই উপাচার্য মহােদয় ২৯/১০/২০১৪ তারিখের সিন্ডিকেট সভায় তাঁর কন্যার এসএসসি , এইচএসসি ও স্নাতক ( সম্মান ) -শ্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ – কে ভিত্তি ধরে শুধুমাত্র ইংরেজি বিভাগের নিয়ােগ যােগ্যতা পুনর্নির্ধারণ করেন ( সংযুক্তি -৩ ও ৪ ) ।

এই যােগ্যতাতেই ইংরেজী বিভাগের অর্গানোগ্রামে প্রভাষক পদ না থাকলেও ২ টি প্রভাষক পদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২ টি প্রভাষক পদের বিপরীতে মাত্র ২ জন প্রার্থীর সাক্ষাক্তার নিয়ে ইংরেজী বিভাগে শুধুমাত্র তাঁর কন্যা রিদিতা মিজান – কে ২১/০৪/২০১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে নিয়োগ দেন ( সংযুক্তি -৫,৬,৭ ও ৮ ) । প্রভাষক পদ না থাকা সত্বেও প্রভাষক পদ বিজ্ঞপ্তি প্রদানের মাধ্যমে নিয়োগদান যে বৈধ ও আইনসিদ্ধ হয়নি তা ৬ মাস পর নজরে এলে সাবেক উপাচার্যের ( মুহম্মদ মিজান উদ্দীন – এর ) নির্বাহী আদেশে তাকে ১১/১১/২০১৫ তারিখে দ্বিতীয়বার নিয়ােগপত্র ইস্যু করা হয় ( সংযুক্তি- ৯ ও ১০ ) । কিন্তু এটিও আইনসিদ্ধ হয়নি । উচিৎ ছিল অর্গানােগ্রামে বর্ণিত সহকারী অধ্যাপক / প্রভাষক পদ বিজ্ঞাপিত করে পুনরায় সাক্ষাকারের ভিত্তিতে তাকে নিয়োগদান করা । কিন্তু তা হয়নি , রিদিতা মিজানের নিয়ােগ তাই আইনত : অবৈধ । এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে , রিদিতা মিজান – কে ২০১৪ সালের নিয়ােগ নীতিমালা অনুযায়ী দ্বিতীয় নিয়ােগপত্র ইস্যুর ( ১১/১১/২০১৫ ) মাত্র ১০ দিনের মাথায় ২১/১১/২০১৫ তারিখের সিন্ডিকেট সভায় সকল বিভাগ ইনস্টিটিউটের জন্য অতি উচ্চ যােগ্যতা সম্পন্ন নিয়োগ নীতিমালা অনুমােদিত হয় ( সংযুক্তি -১১ ) ।

২০১৫ নীতিমালা ( ইংরেজী বিভাগ- SSC – 4.50 , HSC – 4.50 , Hons . & MA একটিতে ৩.৫০ অন্যটিতে ৩.২৫ ) অনুযায়ী বিদিতা মিজান ( SSC – 4.19 , HSC – 4.30 , Hons . 3.25 & MA – 3.50 ) নিয়ােগের জন্য কোন আবেদনই করতে পারতাে না । সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মিজান উদ্দীনের সময় প্রণীত ২০১৫ সালের নিয়ােগ নীতিমালা অনুযায়ী আইন বিভাগ এবং আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগে শিক্ষক নিয়ােগের বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয় ( সংযুক্তি -১২ ও ১৩ ) । এই বিজ্ঞপ্তির আলােকে আইন বিভাগের তিনটি বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে মাত্র ৫ টি আবেদন এবং আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগে ২ টি বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে ৫ টি আবেদন পাওয়া যায় ।

উপযুক্ত বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে অতি স্বল্পসংখ্যক আবেদনের কারণে উভয় বিভাগের সভাপতিদ্বয় বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির বরাত দিয়ে ২০১৫ সালের শিক্ষক নিয়ােগের শিক্ষাগত যােগ্যতা শিথিল করার জন্য রা.বি. কর্তৃপক্ষ বরাবরর পত্র প্রেরণ করেন ( সংযুক্তি ১৪ ও ১৫ ) । এ ছাড়া অন্যান্য অনেক বিভাগও ২০১৫ নীতিমালায় বর্ণিত শিক্ষাগত যােগ্যতা শিথিল করা না হলে সেসব বিভাগে শিক্ষক নিয়ােগদান সম্ভব হবে না বলে মৌখিকভাবে জানায় । এসব অবস্থার প্রেক্ষিতে রাবি শিক্ষক সমিতি ২০ জুলাই ২০১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ২০১৫ সালের শিক্ষক নিয়ােগ নীতিমালা বাতিল।