রাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন হচ্ছে না, ১৩ নভেম্বরের মধ্যেই কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আগামীকাল ১২ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সম্মেলন হচ্ছে না বলে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার কারণে নেতারা সেটা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই নির্ধারিত তারিখে রাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগামী ১৩ নভেম্বরের মধ্যে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক মেহেদি হাসান তাপস

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় আগামী ১২ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ নভেম্বর এই দুই পদে প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হয়। সেখানে সভাপতি পদে ২২ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৭২ জন সিভি জমা দেন। কিন্তু সম্মেলন আয়োজনের কোনো প্রস্তুতি পরিলক্ষিত না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ধোঁয়াশা দেখা দেয়।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আফি আজাদ বান্টি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে সম্মেলন নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই এই মুহূর্তে আর রাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে যেহেতু আমরা সিভি জমা নিয়েছি, তাই দু-একদিনের মধ্যে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি দেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আজ ১১ তারিখ। এখন পর্যন্ত আমরা ওই ধরনের কোনো নির্দেশনা পাইনি। কেন্দ্রীয় নেতারা আসবেন কি না সেটাও এখনো তারা কনফার্ম করেননি। তাই আগামীকাল সম্মেলন হচ্ছে না।’

সম্মেলন না হলে জীবন বিত্তান্তের (সিভি) জন্য সংগৃহিত টাকা কি হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘মূলত সম্মেলনের প্রস্তুতির জন্যই এই টাকাটি সংগ্রহ করা হয়। যদি আমরা সম্মেলন করতে না পারি তাহলে সেই টাকা পরবর্তী নেতৃবৃন্দের কাছে হস্তান্তর করব।’

নেতৃত্বের দৌঁড়ে এগিয়ে বিতর্কিতরাই:
এদিকে নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসার দৌঁড়ে বেশ কয়েকজনের নাম জোলালোভাবেই শোনা যাচ্ছে। তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই রয়েছে ড্রপ আউট, অছাত্র, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী মারধর, মাদক ব্যবসা, প্রক্সি জালিয়াতি ও দলীয় কোন্দল সৃষ্টিসহ নানা অভিযোগ। একজনের বিরুদ্ধে বিবাহিত বলেও ক্যাম্পাসে গুঞ্জন উঠেছে।

সভাপতি পদে বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল ইসলাম লিংকন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে এগিয়ে রয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। এছাড়া ক্লিন ইমেজের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন ও উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক তাওহীদ দূর্জয়ের নাম শোনা যাচ্ছে।

তাদের মধ্যে সভাপতি প্রার্থী কাজী লিংকন বিশ^বিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে ২০১৭ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তার বিরুদ্ধে দলীয় কোন্দল সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিবাহিত এবং তার একটি সন্তান আছেও বলে ক্যাম্পাসে গুঞ্জন রয়েছে। বিবাহিতের বিষয়টি বানোয়াট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার যোগ্যতার সাথে পেড়ে উঠতে না পেরে একদল আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট।’

আসন্ন কমিটির সভাপতি পদের দৌঁড়ে বেশ এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়। গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত রাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি কাণ্ডের ‘মূলহোতা’ হিসেবে তার নাম উঠে আসে। ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক অধিশাখার এক প্রতিবেদনে ক্যাম্পাসে ইয়াবাসহ অবৈধ মাদক ব্যবসা ও সরবরাহকারী হিসেবে তার নাম উঠে আসে। অভিযোগের বিষয়ে এই নেতার সাথে তার একাধিক নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

সাধারণ সম্পাদক পদে বেশ জোরালোভাবেই শোনা যাচ্ছে প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের নাম। গালিব বিশ^বিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ড্রপ আউট হয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন। এছাড়াও ২০১৮ সালে বিশ^বিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলে মাদক সেবনের অভিযোগ এনে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওইদিন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী গাঁজা সেবন করছিলেন। হল ছাত্রলীগ তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়। সেখানে সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে এক শিক্ষার্থী আহত হয়। তখন ওই শিক্ষার্থী আমার নামে অভিযোগ করলে পরে অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।’

এদিকে ড্রপ আউট হয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু। বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য ও ক্যাম্পাসে দোকান ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে এক শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে নাফিউল ইসলাম জীবন নামের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রত্ব রয়েছে দাবি করে এই নেতা বলেন, ‘চাঁদাবাজি ও সিট বাণিজ্যের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। যদি কেউ সেটা করে থাকে তাহলে সেটা আমার নাম ভাঙিয়ে করেছে।’

২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদ রুনুকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়।

জি/আর