রাবির ভর্তি পরীক্ষা: আবাসন শঙ্কটে বিপাকে হাজারও পরীক্ষার্থী-অভিভাবকরা


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে চরম আবাসন শঙ্কট দেখা দিয়েছে। পরীক্ষা উপলক্ষে জেলার বাইরে থেকে রাজশাহী শহরে এসে আশ্রয় নিবে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। আর তাদের থাকার যায়গা নিয়ে অভিভাবকরা পড়েছেন চরম বিড়ম্বনায়। বিশেষ করে রাজশাহী নগরীর আবাসিক হোটেলগুলোতে মিলছে না কোনো কক্ষ। তবে কোনো কোনো ম্যাসে অস্থায়ী সিট ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দুই-চার দিনের জন্য সেই সিট ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষা হবে আগামী ৪ থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত। আগামী ৪ অক্টোবর রাবিতে ‘সি’ ইউনিটের (বিজ্ঞান) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন ৫ অক্টোবর ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষাও তিনটি শিফটে অনুষ্ঠিত হবে। ৬ অক্টোবর হবে ‘বি’ ইউনিটের (বাণিজ্য) পরীক্ষা। সবমিলিয়ে আসবেন প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী।

আগের বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, রিডিং রুম, পেপার রুম, মসজিদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করলে এবার কোথাও তাঁদের থাকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। ফলে এবার ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা চরম আবাসন সমস্যায় পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শঙ্কিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে হোটেল বা মেসের সিট পেতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন। নগরীর সব আবাসিক হোটেলে কক্ষ বুকিং দিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। তবে গত ১৫ দিন আগ থেকেই হোটেলগুলোর কক্ষ বুক হয়ে যায়। ফলে প্রতিটি একটি হোটেল কক্ষও যেন সোনার হরিণে পরিণত হয়। হোটেলের রুম খুঁজতে পরীক্ষার্থীর বন্ধু কিংবা স্বজনেরা হন্যে হয়ে ঘুরছেন। হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সপ্তাহ খানেক আগেই বুকিং দেওয়া শেষ।

রাজশাহী মহানগর আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার হাসান কবির জানান, রাজশাহী শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে আবাসিক হোটেলের সংখ্যা ৬০ থেকে ৬৫টি। এতে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার মানুষকে রাখা সম্ভব। কিন্তু প্রতিবছরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় হোটেলের কক্ষের জন্য চেষ্টা করেন অন্তত ২০ হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা। ফলে প্রতিটি হোটেলেই কক্ষের জন্য হাহাকার দেখা দেয়।

নগরীর রেলগেট এলাকার হোটেল গুলশানের ব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের হোটেলে সব কক্ষ মিলে ৭২ জনকে রাখার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এই কক্ষগুলো এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিন আগ থেকেই বুকিং শেষ হয়ে গেছে। এখন আর বুকিং নেওয়া সম্ভব নয়। তার পরেও প্রতিদিন ৫০-৬০ জনকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। রাবির পরীক্ষার সময় প্রতিবছরই এমন হয়।’

নগরীর সাহেববাজার এলাকায় অবস্থিত হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক হীরাঙ্গীর মোল্লা বলেন, ‘আমাদের রুমগুলো সব এসি। তাই চাহিদাও বেশি। দু’সপ্তাহ আগেই বুকিং শেষ। প্রতিদিন অন্তত ১০০ ফোন রিসিভ করছি, সবাই রুমের জন্য ফোন করছেন। আমরা দিতে পারছি না। অনেকে স্বশরীরে আসছেন রুম খুঁজতে। তাঁদেরকেও ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’

হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক আলমগীর বলেন, ‘এখনও অনেক মেস খোলেনি। আবার মেসে অভিভাবকদেরও থাকার সুযোগ নেই। সে কারণেই রাবির ভর্তি পরীক্ষার নিয়ে শিক্ষার্থীদের খুব বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।’

এদিকে রাজশাহীতে ছোট-বড় মিলিয়ে মেস আছে প্রায় পাঁচ হাজার। সেখানে এক লাখের বেশি শিক্ষার্থী থাকেন। রবিউল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘হোটেলের কক্ষ না পেয়ে একটি মেসের সিট ভাড়ার জন্য তিনি। কিন্তু দুই থাকার জন্য তার নিকট থেকে ১ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। অথচ সারা মাস মিলে ওই মেসের সিট ভাড়া ২ হাজার টাকা।’ ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আবাসন সঙ্কটকে পুঁজি করে হোটেল মালিকরা চার-পাঁচগুন হারে টাকা আদায় করছেন বলেও দাবি করেন ওই শিক্ষার্থী।

জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সভাপতি এনায়েতুর রহমান বলেন, ‘রাবির পরীক্ষা নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, সেটি নিয়ে আমরাও ভাবছি। তবে কোনো মেস মালিকের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।’

স/আ২