রাবিতে গভীর রাতে শিক্ষার্থীকে মারধর করে সিট থাকে নামিয়ে দিলো ছাত্রলীগ

রাবি প্রতিনিধি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মুন্না ইসলাম নামের এক আবাসিক ছাত্রকে মারধর করে সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে বিশবিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের ২৪৮ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী মুন্না ইসলাম রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হাসান জয় ও ছাত্রলীগ কর্মী তওহীদ।

হল সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে পারভেজ ও তওহীদসহ কয়েকজন হলের ২৪৮ নম্বর কক্ষে গিয়ে মুন্নাকে সিট ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন। কিন্তু মুন্না তার বৈধ সিট ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এক পর্যায়ে তওহীদ মুন্নার ঘাড় চেপে ধরে টানতে টানতে দরজার কাছে নিয়ে এসে মারধর শুরু করেন। পরে তার বিছানাপত্র নামিয়ে দিয়ে ওই সিটে মাকছুদুল হাসান আসিফ নামের এক শিক্ষার্থীকে তারা তুলে দেন। আসিফ বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ২৩০ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। আসিফকে ২৪৮ নম্বর কক্ষে তুলে দিয়ে সেখানে এক অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে তুলে দেন ছাত্রলীগ নেতারা।

পরে শুক্রবার (২৪ জুন) বেলা ১১টার দিকে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও একজন সহকারী প্রক্টর ২৪৮ নম্বর কক্ষে গিয়ে মুন্নাকে তার সিটে তুলে দেন। এতে বিপাকে পড়েন ২৩০ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আসিফ। ২৪৮ নম্বর থেকেও তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে অন্যদিকে ২৩০ এর সিটটিও ছাত্রলীগের দখলে। সে বিষয়টি হল প্রাধ্যক্ষকে জানালে প্রাধ্যক্ষ তাকে ২৩০ নম্বর কক্ষে তার সিটেই থাকতে বলেন।

এদিকে শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয়টি জানাজানি হলে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষক প্রাধ্যক্ষের সাথে আলোচনা করেন। তারা প্রাধ্যক্ষকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। এসময় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কুদরত-ই-জাহান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মুন্না ইসলাম বলেন, আমি এই হলের ২৪৮ নম্বার রুমের একজন আবাসিক ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রলীগের নেতারা এসে আমাকে সিট থেকে নামিয়ে দেয় এবং মারধর করে। পরে আজ সকালে প্রাধ্যক্ষ স্যার এসে আমাকে আমার সিটে তুলে দেন। তবে আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সেই সাথে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

মাকছুদুল হাসান আসিফ জানান, গতকাল রাতে পারভেজসহ কয়েকজন তার রুমে এসে তাকে বিছানাপত্র নিয়ে ২৪৮ কক্ষে যেতে বলেন। ২৩০ নম্বরের আবাসিক শিক্ষার্থী হয়েও ছাত্রলীগের ভয়ে সে ওই কক্ষে যেতে বাধ্য হয়। পরে শুক্রবার দুপুরে প্রাধ্যক্ষ তাকে ২৩০ কক্ষে তার সিটে থাকতে বলেন।

তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ কর্মী তওহীদ বলেন, মুন্না নামের ওই শিক্ষার্থীকে মারধরের কোন ঘটনা ঘটেনি। আমাদের ছাত্রলীগের এক কর্মী আসিফের (মাকছুদুল) বাবা স্ট্রোক করায় মানবিক কারণে আমরা তাকে ওই সিটে তুলি এবং ওই সিটে থাকা শিক্ষার্থীকে আসিফের সাথে বেড শেয়ার করে থাকতে বলি। কিন্ত মুন্না নামের ওই শিক্ষার্থী আমাদের সাথে তুই-তুকারি করে। পরে হল প্রাধ্যক্ষের মাধ্যমে এ ঘটনার মীমাংসা হয়ে গেছে।

নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন বলেন, আসিফের আবাসিকতা আছে কিন্তু প্রশাসনের নির্দেষ আছে ১৯-২০ সেশনের কোনো শিক্ষার্থীকে হলে সিট দেওয়া যাবে না। তবুও প্রাধ্যক্ষ মুন্নাকে মানবিক কারণে সিট দিয়েছে। আর আসিফও ১৯-২০ সেশনের। আসিফেরও সমস্যা থাকাই আমরা দুজনকেই বেড শেয়ার করে থাকতে বলি। তবে মারধরের ঘটনা মিথ্যা ও বানোয়াট।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, কাল রাতে বিষয়টি জানতে পেরে আজ সকালেই আমি হলে এসে মুন্না ও মাকছুদুল নামের দুই শিক্ষার্থীকেই আমরা সিটে তুলে দিয়েছি। মারধরের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছি। আগামী ৭দিনের মধ্যে তাদেরকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই রিপোর্ট দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, শামীমের বিরুদ্ধে গত পাঁচদিন আগে এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই শিক্ষার্থীর নাম সজিব কুমার। সে বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পরে তাকে সিটে তুলে দেন হল প্রাধ্যক্ষ।

স/আর