রাবির অনলাইন ক্লাসের বাইরে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে শুরু হওয়া অনলাইন ক্লাসে ঠিকমত অংশগ্রহণ নেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর।

ধীরগতি ও উচ্চমূল্যের ইন্টারনেট, প্রয়োজনীয় ডিভাইস, প্রযুক্তিগতসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাবে অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। ফলে বেশিরভাগ ক্লাসেই মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেক বা এরও কম সংখ্যক উপস্থিতি নিয়ে চলছে অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিকাংশ বিভাগেই অনলাইন পাঠদান শুরু হয়েছে। দুয়েকটি বিভাগ যারা বাকি আছে তারাও অনলাইন ক্লাসের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে। ক্লাসের জন্য নতুন সময়সূচিও তৈরি করেছে বিভাগগুলো। ভিডিও কনফারেন্স ভিত্তিক অ্যাপ ‘জুম’ এর মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করছেন শিক্ষকেরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী ক্লাস করতে না পারায় এই পাঠদান কার্যক্রমের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ১৮ই মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছুটি শুরু হয়। পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিও বাড়তে থাকে। এর সাড়ে তিনমাস পর গত ৬ই জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অনলাইন ক্লাস শুরুর ব্যাপারে জানায় প্রশাসন। ৯ই জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন বিভাগ অনলাইন ক্লাস শুরু করে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৫৯টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউটে প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়েটিতে অধ্যয়নরত। কয়েকজন শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে অনলাইন ক্লাস নিলেও তাতে শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অংশগ্রহণ ছিল না। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস শুরুর পর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও তা বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেকেরও কম।

নিয়মিত ক্লাস করা শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্যমতে, অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীর পরিমাণ গড়ে ৫০ শতাংশেরও কম। দুয়েকটি বিভাগের কোনো কোনো বর্ষের ক্লাসে উপস্থিতি ৮০ শতাংশ বা তার কিছু বেশি। আবার কিছু কিছু বিভাগের ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৩০ শতাংশেরও কম। গতকাল বৃহস্পতিবার নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের একটি কোর্সের ক্লাসে নিয়মিত ৫৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১০জন।

ক্লাসে অংশ নিতে না পারা শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের বেশিরভাগের বাড়িই প্রত্যন্ত অঞ্চলে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন বিত্ত পরিবারের অনেকেরই নেই ল্যাপটপ কিংবা অ্যান্ড্রয়েড ফোন। ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের গতি নিয়ে সমস্যা তো আছেই। এ ছাড়াও ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় ডাটাপ্যাক ক্রয়ে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পক্ষে বর্তমান পরিস্থিতিতে জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের বৃহৎ একটি অংশকে অনলাইন ক্লাসের বাইরে থাকতে হচ্ছে। তবে যে ক্লাসগুলো নেওয়া হচ্ছে তার ভিডিও রেকর্ড কিংবা ক্লাস লেকচারের হ্যান্ডআউট ফেসবুকে আপলোড করা হলে এ সমস্যা অনেকটাই ঘুচবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

লালমনিরহাটের সোহেল নামের এক শিক্ষার্থী বলছিলেন, ঠিকমত নেটওয়ার্ক না পাওয়ায় বারবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এজন্য শিক্ষকের লেকচার সঠিকভাবে বুঝতে পারেন না তিনি। তাই ক্লাস করা হচ্ছে না তার।

কুড়িগ্রামে অবস্থান করা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নয়ন চন্দ্র মোহন্ত বলেন, ‘করোনার আতঙ্কেও সঙ্গে যুক্ত হয়ে বন্যা। বাড়ির চারপাশে পানি। লোডশেডিং, ঠিকঠাক নেটওয়ার্ক না পাওয়া এসব কারণে ক্লাস করতে পারছি না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম বলেন, ভার্চুয়াল ক্লাসগুলোর রেকর্ডিং সংরক্ষণ করে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এগুলো ক্লাস করতে না পারা শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। তবে সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ানো গেলে ক্লাসের উপস্থিতি বাড়বে বলে মনে করছেন এই অধ্যাপক। অন্যান্য অনুষদের অধিকর্তাদেরও একই কথা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, অনলাইন পাঠদান কার্যক্রমে সমস্যা একটু হচ্ছেই। তবে উপকারও হচ্ছে। টেকনিক্যাল কমিটিও শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছে। এ ছাড়াও শিক্ষকদেরকেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।