রাবিতে অকৃতকার্য হয়েও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন ৭১ জন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন ৭১ জন শিক্ষার্থী। বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তিতে সংরক্ষিত পোষ্য (ওয়ার্ড) কোটা, খেলোয়াড় কোটা এবং বিশেষ বিবেচনায় তাদেরকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। গতকাল রোববার (০৭ নভেম্বর) বিকেলে ভর্তি উপ-কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সভায় বিশেষ বিবেচনায় ৪ জনকে ভর্তি এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটার আসন সংখ্যা ৪টি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সোমবার (০৭ নভেম্বর) ভর্তি পরীক্ষা কমিটির একাধিক সদস্য কালের কণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

ভর্তি উপ-কমিটি সূত্র জানায়, চলতি বছর রাবির প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার পাশ মার্ক (কৃতকার্য নম্বর) নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪০ নম্বর। এছাড়া মোট আসনের বিপরীতে ৫% আসন (ওয়ার্ড কোটা) বরাদ্দ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য। কিন্তু নির্ধারিত পাশ মার্ক না পাওয়ার কারণে পোষ্য কোটার আসনগুলো খালি ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারিরা তাদের সন্তানদের ভর্তির আবেদন করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে পাস নম্বর ৩০ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ফলে ৭১ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে।

উপ-কমিটির এক সদস্য বলেন, কোটা নিয়ে আমরা বেশ বিব্রত। প্রথম দফা আবেদন আসার পর আমরা সভা ডেকেছিলাম। সেখানে আমরা অকৃতকার্যদের নেওয়ার বিপক্ষে মত দিয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিভাবককরা যারা এখানকার শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারী তারা পুনরায় আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে আমরা ফের বৈঠকে বসতে বাধ্য হই। সেখানে অকৃতকার্যদের ভর্তির সিদ্ধান্ত হয়। তবে এই ক্ষেত্রে অকৃতকার্যরা মোস্ট ডিমান্ডেবল সাবজেক্টগুলোতে (ভালো বিষয়) ভর্তি হতে পারবেন না। এছাড়া ওয়ার্ড কোটা ১% কমিয়ে ৪ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ^বিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা অকৃতকার্যদের ভর্তির পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁপ আসার তারা বাধ্য হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, ভর্তি সুযোগ পাওয়া ৭৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন ইউনিটের ৭১ জন রয়েছেন যারা নির্ধারিত পাস নম্বর ৪০ পাননি। তাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৪ নম্বর পেয়েছেন ৩০ জন, ৩৫ থেকে ৩৭ পেয়েছেন ১৬ জন এবং ৩৮ থেকে ৩৯ পেয়েছেন ১৪ জন। এছাড়াও ৭ জন শিক্ষার্থী ৪০ নম্বর পেলেও সি ইউনিটের শর্ত অনুযায়ী আবশ্যিক অংশে ২৫ এবং ঐচ্ছিকে ১০ না পাওয়ায় তারাও অকৃতকার্য ছিল। এছাড়াও শরীরচর্চা শিক্ষা বিভাগের পরিচালকের সুপারিশে খেলোয়াড় কোটায় চারজনকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা কেউ পরীক্ষায় কৃতকার্য হননি।

সূত্র আরও জানায়, বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য পোষ্যকোটা না থাকার পরেও বিশেষ বিবেচনায় ডাইনিং কর্মচারীর দুই সন্তানকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষায় কৃতকার্য হলেও তাদের সিরিয়াল অনেক দূরে ছিল। এছাড়াও বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য ৫% পোষ্যকোটার আসন খালি না থাকলেও বিশেষ বিবেচনায় দুজনকে ভর্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

এদিকে এই ভর্তি উপ-কমিটির সভার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়কে পারিবারিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর  বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সুনাম ও ঐতিহ্য আছে। অযোগ্য শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগ, ভর্তি করার ক্ষেত্রে পোষ্য কোটার নামে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে ফেল (অকৃতকার্য) করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার কারণে এই সুনাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই ফেল করা শিক্ষার্থীরাই একসময় পিতৃপরিচয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারি, শিক্ষক হবে। এই ফেল করা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য সার্টিফিকেট নেওয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেক্টরে চাকরি করা। তাদের বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারি হওয়াতে তারা ভেঁবে রাখে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তাদের নিশ্চিত। এজন্য তারা স্কুল-কলেজে মেধাচর্চা করে না।

রাবি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে বিষয়টা নিয়ে আমি লজ্জিত। আমি চাই এই ধরনের সিদ্ধান্ত যেনো কোনাভাবেই না হোক। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সন্তান ন্যূনতম পাস নম্বর পাবেনি, কিন্তু তার জন্য এতো দয়া দেখানো হবে। এটা ঠিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রের অর্থে চলে, এখানে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দয়া-দাক্ষিণ্য দেখানোর জন্য খোলা হয়নি। এই বিষয়টাকে প্রচন্ড ঘৃণা করি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে ভর্তি উপ-কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সুলতান উল ইসলাম বলেন, আসন ফাঁকা থাকায় অকৃতকার্য কয়েকজনকে ভর্তির সুপারিশ করা হয়েছে। তবে আগামীতে যাতে এমনটায় না হয় সেজন্য ওয়ার্ড কোটা এক শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জি/আর