রাত সাড়ে ৩টায় ক্লাস নিয়ে আবারও সমালোচনায় বেরোবির ‘বিতর্কিত’ ভিসি কলিমউল্লাহ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য (ভাইস চ্যান্সেলর-ভিসি) উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ। এদিকে, মেয়াদের শেষ সময়ে রাত ৩টায় ক্লাস নিয়ে ফের বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন কলিমউল্লাহ। বুধবার (০৯ জুন) রাত সাড়ে ৩টায় জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ইং শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ‘পলিটিক্যাল থট’ কোর্সের ক্লাস নেন তিনি। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে এমনকি ফেসবুকে চলছে সমালোচনার ঝড়।

জানা গেছে, গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ইং শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ‘পলিটিক্যাল থট’ কোর্সের ক্লাস নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে ক্লাস রাত ৩টায় নেয়ার কথা জানান কলিমউল্লাহ। এরপর অনলাইন প্লাটফর্ম গুগল মিট-এ রাত ৩টা ২০মিনিটে ক্লাস শুরু হয়। প্রায় ৩৫ মিনিট চলা ক্লাসের শুরুতে প্রায় ২৮ জনের মতো যুক্ত ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্লাসে যুক্ত ছিলেন ১২ জন। রাত প্রায় ৩টা ৫৫ মিনিটে ক্লাস শেষ করেন তিনি।

এদিকে গভীর রাতে ক্লাস নেওয়ার ঘটনায় ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্পাসের বাইরে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। শুধু তাই নয়, এর আগেও মধ্য রাতে ক্লাস নিয়ে সমালোচনায় এসেছিলেন ভিসি কলিমউল্লাহ। পরে তীব্র সমালোচনার মুখে রাতে ক্লাস নেওয়া বন্ধ করেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববদ্যিালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় অর্ধশতাধিক কোর্সের ক্লাস নিয়েছেন তিনি। এসব কোর্সের সর্বোচ্চ এক থেকে দুইটি নামে মাত্র ক্লাস নেন তিনি। আর পরীক্ষার খাতা কর্মচারী দিয়ে মূল্যায়ন ও পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থীকেও মার্কস দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, এসব কোর্স বাবদ মোট অংকের পারিতোষিক নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

এ ছাড়া আরও সমালোচিত হন দিনে বাইশ ঘণ্টা কাজ করার দাবি করে। একাই নিয়েছিলেন ২৬টি কোর্সের দায়িত্ব, নেচেছিলেন হিন্দি গানের সাথে। সবশেষ শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ভাইরাল হন তিনি।

অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, এটি কোনো সুস্থ মানুষের কাজ হতে পারে না। তার আসলে মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন। তার যারা কাছের লোকজন রয়েছে তাদের উচিৎ তার (ভিসি) মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এ ছাড়া তার পক্ষ থেকে নতুন নিযুক্ত উপাচার্যকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে লেখা হয়েছে, ‘বেরোবির নবনিযুক্ত উপাচার্যকে বর্তমান ভাইস চ্যান্সেললরের অভিনন্দন’। এই ভাষাগত অসঙ্গতি নিয়েও ফেসবুকজুড়ে হচ্ছে ট্রল।

এ ব্যাপারে জানতে অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেনি।

অধ্যাপক ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর গভীর রাতের ক্লাস নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন মন্তব্য এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু মন্তব্য তুলে ধরা হলো-

হালিমা আক্তার সীমা নামে একজন লিখেছেন- ‘স্যার নিশ্চয় তাহাজ্জুদ পড়তে উঠে ক্লাস নেন।’

সাদিয়া আফরিন লিখেছেন- ‘স্যার খুবই বুদ্ধিমান। তিনি হয়তো জানেন রাত ৩টায় নেটওয়ার্ক খুব ক্লিয়ার থাকে। কেউ নেট স্লো হওয়ার কোনো অযুহাত দিতে পারবে না।’

ফাতেমা তাসনিম নামে একজন লিখেছেন- ‘বিজ্ঞ ভিসি জানে যে স্টুডেন্টরা সারারাতই সজাগ থাকে।’

রিমু জালাল নামে একজন মন্তব্য করেছেন- ‘তিনি জানেন, পোলাপান সারারাত সজাগ থেকে ৩টা বাজে ঘুমায়। তাই তিনি আরও ২০ মিনিট লেট করে আসেন যাতে পোলাপানরা শাস্তি পায়।’

ফহিম নামে একজন লিখেছেন- ‘আর্দশবান শিক্ষক।’

মোখলেছুর নামে একজন লিখেছেন- ‘উনি একজন বুজুর্গ মানুষ, কি নিষ্পাপ চেহারা, দেখলেই মনটা ভাল হয়ে যায়। স্যারের প্রতি ভালবাসাটা আগের থেকেও বেশি বেড়ে গেল!!’

সানজিদা পারভিন নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন- ‘স্যার দিনে কি করে? মানলাম দিনে ব্যস্ত রাতে কি করে? রাতেও ব্যস্ত তাই বলে রাত ৩টায় কিসের ক্লাস নেয়? সে সময় সবাই ঘুমায় আর উনি ক্লাস নেন বাহ।’

সূত্র : আমাদের সময়