রাণীনগরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা; বাড়ছে মৃত্যু

সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ):
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় হঠাৎ করেই আশংকাজনক ভাবে বাড়ছে করোনা সনাক্ত ও বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। গত কয়েক দিনে রাণীনগর উপজেলায় ৪৯ জন ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ধরা পরেছে। এছাড়া গত ১৫ দিনের ব্যবধানে করোনায় মারা গেছেন তিন জন। স্বাস্থ্য বিধি না মেনে ইচ্ছে মতো চলাচল করার ফলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পরার আশংকা করছেন সচেতন মহল। এলাকাবাসীর অভিযোগ এই উপজেলায় সম্প্রতি প্রতিনিয়ত করোনার সংক্রমন সনাক্ত ও মৃত্যু বাড়লেও প্রসাশনিক ভাবে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছেনা।
জানা গেছে, বাংলাদশে প্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ছড়িয়ে পরার সময় গত বছরের ১০ জুন নওগাঁ জেলার মধ্যে সর্ব প্রথম রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন সেবিকার শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ধরা পরে। ধীরে ধীরে এ উপজেলায় প্রায় ৮৫ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়। তবে ওই বছরেই সবাই করোনা মুক্ত হয়। এরপর চলতি বছরে নতুন করে ভাইরাস ছড়িয়ে পরলে নমুনা পরীক্ষা করা শুরু করেন লোকজন। গত মে মাসের ১৭ তারিখ থেকে এপর্যন্ত উপজেলা প্রসাশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, হাসপাতাল স্টাফ, এনজিও কর্মীসহ ৭ বছরের শিশু থেকে শুরু করে কিশোর, যুবক বৃদ্ধসহ নানা বয়সি ব্যক্তিদের শরীরে সংক্রমন ধরা পরেছে। এর মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে কয়েকজন সুস্থ্য হয়েছেন। এছাড়া গত ২৮ মে রাণীনগর সদরে প্রায় ৩৫ বছর বয়সি একজন ভেটেরিনারী ঔষধ ব্যবসায়ী ও ৩ জুন গুয়াতা গ্রামের প্রায় ৬০ বছর বয়সি একজন শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সবশেষ ১৩ জুন ৭৫ বছর বয়সি এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। এনিয়ে উপজেলায় মোট চার জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
এদিকে সরকারের বিধি নিষেধ অমান্য করে স্বাস্থ্য বিধি না মেনে ইচ্ছে মতো চলাচল করছে লোকজন। হাট বাজার থেকে শুরু করে সর্বত্র একই অবস্থা বিরাজ করছে। কোথাও স্বাস্থ্য বিধি মানার বালাই নেই। জন-দূরত্ব তো দুরের কথা মাস্ক পর্যন্ত পরছেন না অধিকাংশ লোকজন। এবছর লকডাউন ঘোষণার পর স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রসাশন বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে লোকজনকে সচেতন করতে ও স্বাস্থ্য বিধি মানাতে মাস্ক বিতরণসহ নানামূখী পদক্ষেপ গ্রহন করেন। কিন্তু সম্প্রতি প্রতিনিয়ত করোনার সংক্রমন সনাক্ত ও মৃত্যু বাড়লেও প্রসাশনিক ভাবে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ফলে ইচ্ছে মতো চলাচল করছেন সাধারণ লোকজন। এতে করে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।
রাণীনগর হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার ৪ জন, শনিবার ৬ জন, রবিবার ৫ জন এবং সোমবারে ২ জনসহ এপর্যন্ত রাণীনগর উপজেলায় মোট ১৩৬ জন ব্যক্তির শরীরে করোনা সংক্রমন ধরা পরেছে। এর মধ্যে করোনায় গত বছরে একজন এবং গত ১৫ দিনের ব্যবধানে আরো তিনজন মারা গেছেন। এছাড়া ৮৩ জন সুস্থ্য হয়েছেন। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৯ জন। কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণ লোকজনের মধ্যে অসচেতনতার কারনে এবং স্বাস্থ্য বিধি না মানায় করোনা সংক্রমনের সংখ্যা বাড়ছে।
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, সরকারের বিধি নিষেধ ও স্বাস্থ্য বিধি মানাতে এবং জনগনকে সচেতন করতে প্রতিদিনই কাজ করছি। আগের তুলনায় অনেকেই সচেতন হয়েছেন। তবে এই উপজেলায় লকডাউন দেওয়া হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিনের করোনা সনাক্তের বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে। পরিস্থীতি বিবেচনায় নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স/জে