নিজস্ব প্রতিবেদক
পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ^র হাটের ইজারাদার ওসমান আলীকে (৫৮) মারধর করা হয় গেল বুধবার বিকেলে। তিনি উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ হাট বানেশ^র বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকও। একই দিন বানেশ^র বাজারের আরেক ব্যবসায়ী ও পুঠিয়ার নাদের আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি বাবু শেখকেও পিটিয়ে আহত করা হয় চাঁদার দাবিতে। এই দুই বড় ব্যবসায়ীই স্বতন্ত্র প্রার্থী ও রাজশাহী জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি ওবাইদুরের রহমানের সমর্থক ছিলেন। নির্বাচনে মাত্র তিন হাজার ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থী কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারার কাছে ওবাইদুর রহমান হেরে যাওয়ার পর থেকে অব্যাহতভাবে তাঁর কর্মী-সমর্থকদের ওপর এভাবে হামলা-মারধর চলছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবাইদুর রহমান অভিযোগ করে জানান, এখন পর্যন্ত পুঠিয়া ও দুর্গাপুরে তাঁর অন্তত ৫০ জন কর্মী-সমর্থককে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। কারও কারও বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলার ভয়ে অনেকেই এলাকাছাড়া হয়ে আছেন। কিন্তু থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। বিশেষ করে পুঠিয়া থানার ওসির নির্ল্পততার কারণে একের পর এক হামলা চলছেই। গত বুধবার পুলিশের সামনেই ওসমান আলী ও বাবু শেখকে মারপিট করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ একটি মামলা নিলেও আরেকটি নেয়নি। হামলায় অংশ নেওয়া অর্ধশত কিশোর গ্যাংয়ের ছবি ভিডিও গণমাধ্যমে এসেছে। তারপরেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেনি। ফলে তারা এখনও বানেশ^র বাজার দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে করে বানেশ^র বাজারের ব্যবসায়ীরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুঠিয়ায় বানেশ^র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নৌকা প্রতীক নিয়ে নিবাচনে জয়ী হওয়া আব্দুল ওয়াদুদ দারার সমর্থক আবুল কালাম আজাদ ওরফে ডিস কালামের নেতৃত্বে একের পর এক হামলা হচ্ছে। নির্বাচন পরবর্তি পুঠিয়ায় অন্তত ৩০ জনকে পিটিয়ে আহত করেছে কালামের লোকজন। যারা আহত হয়েছেন তারা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক। এ নিয়ে নির্বাচনের মাত্র চারদিন দিন পরে এর আগে সংবাদ সম্মেলন করেও অভিযোগ করেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবাইদুর রহমান। তার পরেও হামলা বন্ধ হয়নি। এখনো হামলা চলছে।
বানেশ^র বাজারে সার ও কীটনাশকের ডিলার ওসমান আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘৫ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় গত বুধবার তাঁর ওপর আওয়ামী লীগ নেতা ও ডিস ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল হামলা করেছে। তিনি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু থানার ওসি মামলা হিসেবে গ্রহণ করলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি এখন পর্যন্ত। ফলে আসামিরা এখনো হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে।’
একই অভিযোগ করে পুঠিয়ার নাদের আলী উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সভাপতি বাবু শেখ বলেন, গত নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবাইদুরের হয়ে কাজ করেছি। নির্বাচনে দারা এমপি হওয়ার পরে ডিস কালাম আমার কাছ থেকেও চাঁদা চেয়েছে। আমি চাঁদা দিতে না চাওয়ায় আমার ওপর তার হুকুমে কিশোর গ্যাংয়ের অন্তত ৫০ জন মিলে হামলা করেছে। বাড়ি ভাঙচুর করেছে। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করেছি। কোনো লাভ হয়নি। ওসি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি। ফলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এখনও এলাকা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে।
এদিকে, দুর্গাপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজাহার আলী ও ছাত্রলীগের পৌর শাখার সাবেক সভাপতি শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে এ উপজেলায় অন্তত ২০ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে নির্বাচন পরবর্তি সময়ে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক ও নওপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কাসেম আলী পানবরজ কেটে ফেলা ও পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে মাছ মেরে ফেলার ঘটনাও ঘটিয়েছেন নৌকার সমর্থকরা।
পুঠিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাকে উদ্দেশ্য করে ওসমান আলী বাজে মন্তব্য করেছে। তাই লোকজন তাকে পিটিয়েছে। চাঁদা চাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে বাবু শেখের ওপর কে বা কারা হামলা করেছে বলতে পারব না।’
দুর্গাপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাহার আলী বলেন, ‘আমি কাউকে মারপিট করিনি। কে বা কারা মেরেছে বলতে পারব না।’
পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান বলেন, ‘ওসমান আলী যে অভিযোগ দিয়েছেন তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হচ্ছে। কালামও একটা অভিযোগ দিয়েছেন। সেটা তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা এলাকাতেই এখন আছি। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’