রাজশাহী সীমান্তে কঠোর নজরদারিতেও আসছে মাদক, বাড়ছে করোনার প্রকোপ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সবর্শেষ শুক্রবার (১১ জুন) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ১৫ জন মারা গেছে। যাদের মধ্যে ৮জন রাজশাহী জেলার,  ৬ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এবং একজন নাটোরের। মৃত ১৫ জনের মধ্যে  সাতজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং আটজন উপসর্গ নিয়ে।

অন্যদিকে রাজশাহী অঞ্চলে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ ভাগই ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্টে সনাক্ত হয়েছে। ভারতীয় ভেরিয়েন্টে ঠেকাতে দেশজুড়ে সীমান্তপথগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এমনকি স্থলবন্দরগুলোও রাখা হয়েছে বন্ধ। নেওয়া হয়েছে কঠোর নজরদারি। কিন্তু তার পরেও প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে আসছে মাদকসহ অবৈধ পণ্য। আর এসব মাদক চোরাচালানের জন্য ভারতে আসা যাওয়া করছে দুই দেশের চোরাকারবারিরা।

সীমান্ত এলাকার একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, রাজশাহী অঞ্চলে করোনার এই ভয়াবহ প্রকপের মধ্যেই সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিনই মাদকসহ অবৈধ পণ্য পাচার হচ্ছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। এমনকি ভারতে বিভিন্ন কাজের উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে গিয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশীরাও সীমান্ত পার হয়ে আসছে দেশে। রাতের আঁধারে ঘটছে এসব ঘটনা। মূলত মাদক পাচারের উদ্দেশ্যেই বেশি মানুষ এখন যাতায়াত করছে রাজশাহী সীমান্ত এলাকা দিয়ে।

রাজশাহীর চর মাঝারদিয়াড়, চর আষাড়িয়াদহ, খানপুর, ১০ নম্বর চর, চারঘাট, বাঘা সীমান্ত দিয়েও রাতের আঁধারেএসব অবৈধ কার্যক্রম চলছে। তবে বিজিবির কঠোর নজর দারির কারণে আগের তুলনায় অনেকটা কমে গেছে বলেও দাবি করেন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।

একটি সূত্র জানায়, রাজশাহীর ১০ নম্বর চর এলাকা দিয়ে গত ৫ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৬জন বাসিন্দা ভারত থেকে সীমান্ত পার হয়েরাতের আঁধারে রাজশাহীর সীমান্তে প্রবেশ করে। এরপর একটি বাগানে আশ্রয় নেন তাঁরা। পরে তাঁরা নৌকাযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলে যান।

সীমান্ত এলাকার একাধিক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘জানা গেছে, ওই ছয়জন ভারতের পশ্চিবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে রাসমস্ত্রীর কাজ করার জন্য অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতে করোনার প্রকপ বেশি দেখা দেওয়ায় তাঁরা আবারও অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে দেশে প্রবেশ করেন। এভাবে গত ঈদের মধ্য মে মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত শত শত মানুষ ভারতীয় সীমান্ত পার হয়ে দেশে প্রবেশ করেন। আর এতে করেই এ অঞ্চলে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়েছে ব্যাপক হারে বলেও দাবি করেন ওই সূত্রটি। তবে গত ৬-৭ দিন ধরে এ সংখ্যা অনেক কমে গেছে। কিন্তু এখনো রাতের আঁধারে ভারতীয় সীমান্ত এলাকা দিয়ে যাতায়াত বন্ধঅব্যাহত রয়েছে।

চর মাঝারদিয়াড়ের একাধিক সূত্র জানায়, প্রতি রাতেই চোরা কারবারিরা ভারত থেকে মাদক নিয়ে আসছে যাচ্ছে। দুই দেশের চোরা কারাবরিরা মিলে-মিশে এসব অপকর্ম করছে। বিজির কড়া টহলের মধ্যেই সুযোগ বুঝে অবৈধ পণ্য আনা-নেয়া করছে ভারতীয় সীমান্ত এলাকায়। এতে করে চরের বাসিন্দারাও করোনা আতঙ্কে রয়েছে।

তবে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাজশাহী-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আমরা সীমান্তে কঠোর নজরদারি বাড়িয়েছি। রাজশাহী ৭৫ কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে এ নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি একসঙ্গে কোনো ধরনের জমায়েতও করতে দেওয়া হচ্ছে না। এর জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করছে বিজিবি। ফলে সীমান্ত এলাকা দিয়ে জন সাধারণ প্রবেশ এখন আর হচ্ছে বলে আমার জানা নাই। হলে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও হয়তো আটক করতে পারত।

এএইচএস